মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ০৬:৪৬ অপরাহ্ন

পদ্মা সেতু নয়, এ যেন বিজয় সেতু

মাসুদ করিম
  • আপডেটের সময় : বৃহস্পতিবার, ১০ ডিসেম্বর, ২০২০
  • ১২৩৫ বার দর্শন

শুরুতেই কম নাজেহাল করা হয়নি ক্ষমতাসীন সরকারকে! মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী দল আওয়ামী লীগকে গভীর ষড়যন্ত্র করে আন্তর্জাতিক আদালতে হেনস্তা করার অপচেষ্টাও করা হয়। কিন্তু দিন শেষে সত্যের বিজয়, বাংলাদেশের আরেকটি বিজয়। এখন ষড়যন্ত্রকারীদের কি হবে জানি না, তবে বিজয় সেতুর (পদ্মা সেতু) সর্বশেষ স্প্যানটি স্থাপন করার মাধ্যমে পদ্মা সেতুর ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার মূল অবকাঠামো দৃশ্যমান হলো আজ। নিজেদের অর্থে নির্মিত এ যেন বিজয় সেতু।

ডিসেম্বর মাস, বিজয়ের মাস। এই বিজয়ের মাসে আরেকটি বিজয় পুরো জাতিকে এমনকি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মধ্যে নতুন সম্ভাবনা তৈরী করলো। যদিও এখনও অনেক কাজ বাকি তবুও বলা যায় বাংলাদেশের মানচিত্রের বুক চিরে প্রবাহমান যে নদী প্রায় দুই ডজন জেলাকে বিচ্ছিন্ন করে রেখেছিল তা এখন এক হয়ে গেল।

এই পদ্মা সেতুর শুরুর ইতিহাস কমবেশী সবাই জানেন। অনিয়ম আর দুর্নীতির কালিমা লেপন করে বাংলাদেশ কে পেছনে ফেলে রাখার চেষ্টা করা হয়েছে ঘরে- বাইরে। অথচ আজ তারা নীরব!

১৯৯৬ সালের ৩০ মার্চ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হিসেবে সাবেক প্রধান বিচারপতি হাবিবুর রহমানের হাতে   ক্ষমতা হস্তান্তর করে বিদায় নেন খালেদা জিয়া। বিচারপতি হাবিবুর রহমান সপ্তম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে একই বছরের ২৩ জুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন। একুশ বছর পর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে। প্রকৃতপক্ষে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পরই পদ্মা সেতুর সম্ভ্রাব্যতা যাচাই শুরু করে। কিন্তু পাঁচ বছর পর আবার ক্ষমতার পালাবদল হলে বিএনপি সরকার এই পদ্মা সেতু থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। তখন তারা বলার চেষ্টা করে, পদ্মা সেতুর চেয়েও অনেক প্রয়োজনীয় প্রকল্প আমোদের রয়েছে।

সেতুটির দাতা সংস্থা ছিল তিনটি। বিশ্বব্যাংক, এশিয়ান উন্নয়ন ব্যাংক এবং জাপান সরকারের দাতা সংস্থা জাইকা। কোন প্রকল্পে যদি দাতা সংস্থাদের কোন সহযোগী সংস্থা তাদের সহযোগিতা প্রত্যাহার করে নেয় তবে একই পথ ধরে অন্যান্য সহযোগী দাতাদেরও সেই প্রকল্প থেকে তাদের প্রত্যাহার করে নিতে হয়। তবুও সে সময় জাইকার গ্লোবাল প্রেসিডেন্ট সেতুটি যাতে যথা সময়ে নির্মিত হয় সে জন্য তিনি বিশ্বব্যাংকের উচ্চপদস্থ কর্তাদের সাথে দেখা সাক্ষাৎ করে ব্যর্থ হন। ইতিমধ্যেই সেতুর সম্ভ্রাব্যতা যাচাই করতে গিয়ে জাইকার ২০০ মিলিয়ন (বর্তমানে যা ১৭০ কোটি টাকা) ডলার খরচ হয়ে যায়। নদী শাসন, স্যাটেলাইট ওয়ার্ক প্রভৃতিতে অর্থ ও সময় দুটোই ব্যয় করে জাপান সরকার। তাই জাপান সরকারকেও ধন্যবাদের তালিকা থেকে বাদ দিতে চাইনা।      

পদ্মা সেতু নির্মাণকারী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি জানিয়েছে, পদ্মা সেতু যান চলাচলের উপযোগী হতে ২০২২ সালের এপ্রিল মাস পর্যন্ত লেগে যাবে।

তবে বাংলাদেশের সরকার চেষ্টা করছে, স্বাধীনতার ৫০ তম বছরের মধ্যেই পদ্মা সেতু উদ্বোধন করার। অর্থাৎ সরকার ২০২১ সালের মধ্যে পদ্মা সেতুর কাজ সম্পন্ন করে যান চলাচল শুরু করতে চায়।

বাংলাদেশের সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের গণমাধ্যমকে বলেছেন, আগামী এক বছরের মধ্যেই সেতুটি চালু হবে। পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ হতে ১০ মাস থেকে এক বছর লাগবে।

সাধারণত বিদেশি অর্থায়নে কোন সেতু নির্মিত হলে কত টাকা টোল হবে, সেটা নির্ধারণে দাতাদের পরামর্শ বা শর্ত থাকে। কিন্তু দেশীয় অর্থায়নে নির্মিত সেতুর টোল কত হবে, সেরকম কোন নিয়মনীতি নেই। আপাতত সরকারের সেতু বিভাগ পদ্মা সেতুর জন্য যে টোল হারের প্রস্তাব করেছে, সেটি ফেরি টোলের চেয়ে দেড়গুণ বেশি।

সেতু চালু হওয়ার পর পরবর্তী ১৫ বছরের জন্য মোটরসাইকেলের জন্য ১০৫ টাকা, কার জিপের জন্য ৭৫০ টাকা, ছোট বাসের জন্য ২০২৫ টাকা, বড় বাসের জন্য ২৩৭০ টাকা, পাঁচ টনের ট্রাকের জন্য ১৬২০ টাকা, আট টনের বড় ট্রাকের জন্য ২৭৭৫ টাকা, মাইক্রোবাসের জন্য ১২৯০ টাকা টোল প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রতি ১৫ বছর টোলের হার ১০ শতাংশ বাড়ানো হবে। তবে এখনো এই প্রস্তাবের ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়নি সরকার। তবে শেষ পর্যন্ত টোল কতো হবে, সেটা নির্ভর করে সরকারি সিদ্ধান্তের ওপর।

ফেরির বিষয়ে এখনো কোন সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে বঙ্গবন্ধু সেতুর ক্ষেত্রে দেখা গেছে, সেতু চালু হওয়ার পরেও আরিচা-নগরবাড়ী রুটে ফেরি পারাপার চালু ছিল। সুতরাং সেতু চালু হওয়ার পরেও ফেরি চলবে কিনা, সেটি নির্ভর করবে চাহিদার ওপর।

বাংলাদেশে এর আগে আর কোন সরকারি অবকাঠামো এতো বেশি অর্থ খরচ করে তৈরি করা হয়নি। বলা হচ্ছে, দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে যোগাযোগ ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে এই সেতুটি। তৈরী হবে নতুন যোগাযোগের দ্বার।

পদ্মা সেতুতে গাড়ির লেন থাকবে একেক পাশে দুটো করে এবং একটি ব্রেকডাউন লেন। অর্থাৎ মোট ছয় লেনের ব্রিজ হচ্ছে, যদিও একে বলা হচ্ছে ফোর লেনের ব্রিজ। পদ্মা সেতুর দৈর্ঘ্য (পানির অংশের) ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার। তবে ডাঙার অংশ ধরলে সেতুটির মোট দৈর্ঘ্য প্রায় নয় কিলোমিটার। দ্বিতল পদ্মা সেতুর এক অংশ থাকবে মুন্সিগঞ্জের মাওয়ায়, আরেক অংশ শরীয়তপুরের জাজিরায়। সেতুর ওপরে গাড়ি চলাচল করবে, রেল চলবে নিচের অংশে। পদ্মা সেতু নির্মাণে মোট খরচ করা হচ্ছে ৩০ হাজার ১৯৩ দশমিক ৩৯ কোটি টাকা। চৌঠা ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যয় করা হয়েছে ২৪ হাজার ১১৫ দশমিক ০২ কোটি টাকা। এসব খরচের মধ্যে রয়েছে সেতুর অবকাঠামো তৈরি, নদী শাসন, সংযোগ সড়ক, ভূমি অধিগ্রহণ, পুনর্বাসন ও পরিবেশ, বেতন-ভাতা ইত্যাদি।

এই পোস্টটি আপনার সামাজিক মিডিয়াতে শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও খবর

Address

Registered Office: 44/1 North Dhanmondi (5th Floor) Kalabagan, Dhaka- 1205, Bangladesh Email: kalabaganbarta@gmail.com / admin@kalabaganbarta.com Telephone: +88-02-58154100 Editorial Office: Karim Tower 44/7-A&B, West Panthapath, Kalabagan, Dhaka-1205

Correspondences

USA: Mainul Haq (Atlanta) Kolkata: Sunirmal Chakraborty Mobile: +91-8017854521 Ashim Kumar Ghosh Address: 3D K.P Roy Lane, Tollygunge Phari Kolkata- 700 033, WB, India Mobile: +91-9874891187                                                                                                           S. M. Ashikur Rahman (Technical Adviser)
Author: Masud Karim © All rights reserved 2020. Kalabaganbarta

Design & Developed By: RTD IT ZONE