শুক্রবার, ২৪ মার্চ ২০২৩, ০৪:১৩ অপরাহ্ন

দুই শিশু থাকবে জাপানি মায়ের কাছে: আদালতের রায়

অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেটের সময় : রবিবার, ২৯ জানুয়ারী, ২০২৩
  • ৭৩ বার দর্শন

অবশেষে মায়ের জয় হয়েছে। দুই সন্তানের জিম্মা পেতে বাংলাদেশে আসা জাপানি নারী নাকানো এরিকোর বিরুদ্ধে শিশু দুটির বাবা বাংলাদেশি ইমরান শরীফ যে মামলা করেছিলেন তা খারিজ করে দিয়েছে আদালত। 

আজ রোববার ঢাকার দ্বিতীয় অতিরিক্ত সহকারী জজ ও পারিবারিক আদালতের বিচারক দুরদানা রহমান মামলাটি খারিজ করে রায় দেন। এর ফলে জিম্মা চাওয়া দুই শিশু সন্তান মায়ের জিম্মাতেই থাকবে বলে আইনজীবীরা জানিয়েছেন৷ 

মামলার নথি থেকে জানা যায়, জাপানি চিকিৎসক নাকানো এরিকোর সঙ্গে বাংলাদেশি প্রকৌশলী ইমরান শরীফের বিয়ে হয় ২০০৮ সালে। দাম্পত্য কলহের জেরে ২০২০ সালের শুরুতে বিচ্ছেদের আবেদন করেন এরিকো। এরপর ইমরান স্কুলপড়ুয়া বড় দুই মেয়েকে নিয়ে বাংলাদেশে চলে আসেন। ছোট মেয়ে জাপানে এরিকোর সঙ্গে থেকে যান।

মেয়েদের জিম্মা পেতে করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে ২০২১ সালের জুলাই মাসে বাংলাদেশে আসেন এই জাপানি নারী। তিনি হাই কোর্টে রিট আবেদন করলে তাদের সমঝোতায় আসতে বলে বিচারক।

কিন্তু ওই দম্পতি সমঝোতায় না আসায় কয়েক মাস ধরে শুনানির পর ওই বছরের ২১ নভেম্বর হাই কোর্ট দুই সন্তানকে বাবার হেফাজতে রাখার সিদ্ধান্ত দেয়। পাশাপাশি মা যাতে সন্তানদের সঙ্গে দেখা করতে পারেন, তা নিশ্চিত করতে বাবাকে খরচ দিতে বলা হয়।

ওই রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে আবেদন করেছিলেন মা নাকানো। পরে আপিল বিভাগ ওই বছর ১৫ ডিসেম্বর এক আদেশে শিশু দুটিকে মায়ের জিম্মায় রাখার নির্দেশ দিলেও বাবা তা না মানায় বিচারকরা উষ্মা প্রকাশ করেন। পরে আদালত শিশু দুটিকে বাবার হেফাজত থেকে এনে তাদের সঙ্গে কথা বলে এবং পরে মায়ের হেফাজতে দেওয়ার আদেশ দেয়।

এরপর আপিল বিভাগ সিদ্ধান্ত দেয়, দুই মেয়ে কার জিম্মায় থাকবে তার নিষ্পত্তি পারিবারিক আদালতে হবে এবং তার আগ পর্যন্ত দুই শিশু তাদের মায়ের কাছেই থাকবে।

২০২২ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি ওই রায় দেওয়া হয়। এরপর আপিল বিভাগ থেকে মামলাটি পারিবারিক আদালতে আসে।

এসব ঘটনার মধ্যে ২০২২ সালের ২৩ ডিসেম্বর রাতে দুই সন্তান নিয়ে জাপানে যাওয়ার জন্য ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যান এরিকো নাকানো। আদালতের নির্দেশনা অমান্য করে সন্তানদের নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করায় তাকে বিমানবন্দর থেকে পুলিশ ফিরিয়ে দেয়।

এ ঘটনায় নাকানোর বিরুদ্ধে অপহরণ ও প্রতারণার অভিযোগ এনে গত ২৯ ডিসেম্বর ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিমের আদালতে মামলা করেন চতুর ইমরান শরীফ। সেখানে নাকানোর বিরুদ্ধে দুই সন্তানকে নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টার অভিযোগ করা হয়। আদালত বাদীর জবানবন্দি শুনে পিবিআইকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে বলে।

এ মামলায় উভয়পক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন গত ২২ জানুয়ারি শেষ হয়। ওইদিন মায়ের পক্ষে আইনজীবী শিশির মনির এবং বাবার পক্ষে নাসিমা আক্তার যুক্তিতর্ক তুলে ধরেন। এরপর আদালত রায়ের জন্য ২৯ জানুয়ারি দিন ঠিক করে।

ইমরান এবং তার আইনজীবীদের এ ধরনের আচরণকে ‘চরম অবমাননাকর’ উল্লেখ করে শিশু দুটিকে আপাতত তাদের মা জাপানি নাগরিক নাকানোর কাছে রাখতে দেওয়া হয়েছে।

দুই সন্তানের জিম্মা পেতে জাপান থেকে বাংলাদেশে এসে বাংলাদেশি স্বামীর সঙ্গে আইনি লড়াইয়ে রয়েছেন নাকানো। কয়েক মাস ধরে চলছে তার এই লড়াই।

হাই কোর্ট পেরিয়ে আপিল বিভাগে মামলাটি এলে রোববার এক আদেশে আগামী বুধবার শিশু দুটিকে নিয়ে আসতে বলেছিল প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারপতির আপিল বেঞ্চ। সে পর্যন্ত শিশুদের মায়ের জিম্মায় রাখতেও নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।

কিন্তু বাবার কাছ থেকে দুই সন্তানকে না পেয়ে সোমবার ইমরান শরীফের বিরুদ্ধে অদালত অবমাননার অভিযোগ তুলে আবেদন করেন নাকানো এরিকো।

অন্যদিকে শিশুরা ‘মায়ের কাছে যেতে চায় না’ উল্লেখ করে আপিল বিভাগের রোববারে আদেশ সংশোধন চেয়ে আবেদন করেন ইমরান শরীফ।

এই পরিস্থিতিতে দুই শিশুকে বেলা সাড়ে ১১টার মধ্যে আদালতে হাজির করতে নির্দেশ দেয় আপিল বিভাগ।

এরপর বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বাবা ইমরান শরীফ দুই শিশুকে নিয়ে হাজির হন। এরপর প্রধান বিচারপতিসহ আপিল বিভাগের বিচারকরা খাস কামরায় নিয়ে দুই শিশু, তাদের মা-বাবা এবং উভয় পক্ষের আইনজীবীদের কথা শোনেন।

এরপর রোববারের আদেশ অনুযায়ী ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত দুই শিশুকে মায়ের কাছে রাখারই সিদ্ধান্তই বহাল রাখে আপিল বিভাগ।

সেই সঙ্গে আদালত বলে দিয়েছে, সে পর্যন্ত শিশুদের এই আদালতের এখতিয়ারের বাইরে কোনো স্থানে নিয়ে যাওয়া যাবে না।

আদালতে নাকানো এরিকোর পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী আহসানুল করিম, সঙ্গে ছিলেন মোহাম্মদ শিশির মনির। ইমরান শরীফের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী ফাওজিয়া করিম ফিরোজ।

শিশির মনির গণমাধ্যমকে বলেন, “শিশুদের বাবা ইমরান শরীফ ও তার আইনজীবীরা যে কাজটা করেছেন, তা চরম অবমাননাকর এবং আদালত আশা করে রোববারের আদেশটি প্রতিপালন করা হবে।”

এরপর বিকাল ৫টায় দুই শিশুকে তাদের মায়ের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।

গত ২১ নভেম্বর হাই কোর্টের বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের বেঞ্চের দেওয়া সে রায়ে বলা হয়, যেহেতু মা জাপানি নাগরিক এবং সেখানে বসবাস ও চাকরি করেন, সে কারণে তিনি তার সুবিধামতো সময়ে বাংলাদেশে এসে সন্তানদের সঙ্গে প্রতিবার কমপক্ষে ১০ দিন একান্তে সময় কাটাতে পারবেন। হাই কোর্টের সেই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগের চেম্বার আদলতে আবেদন করেন শিশুদের মা নাকানো এরিকো।

এই পোস্টটি আপনার সামাজিক মিডিয়াতে শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও খবর

Address

Registered Office: 44/1 North Dhanmondi (5th Floor) Kalabagan, Dhaka- 1205, Bangladesh Email: kalabaganbarta@gmail.com / admin@kalabaganbarta.com Telephone: +88-02-58154100 Editorial Office: Karim Tower 44/7-A&B, West Panthapath, Kalabagan, Dhaka-1205

Correspondences

USA: Mainul Haq (Atlanta) Kolkata: Sunirmal Chakraborty Mobile: +91-8017854521 Ashim Kumar Ghosh Address: 3D K.P Roy Lane, Tollygunge Phari Kolkata- 700 033, WB, India Mobile: +91-9874891187                                                                                                           S. M. Ashikur Rahman (Technical Adviser)
Author: Masud Karim © All rights reserved 2020. Kalabaganbarta

Design & Developed By: RTD IT ZONE