চতুর্থ দিনের খেলা যখন শেষ হলো, বাংলাদেশের হার এড়ানোর সম্ভাবনার কথা উঠলেও তখন কে ভেবেছিল যে, এই দলটিই শেষ দিনে ম্যাচের মোড় পুরোপুরি নিজেদের দিকে ঘুরিয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করবে? অথচ রাওয়ালপিন্ডিতে সেটিই করে দেখালেন শান্ত অ্যান্ড কোং।
পাকিস্তানের বিপক্ষে দুই ম্যাচ টেস্ট সিরিজের প্রথমটিতে ১০ উইকেটের স্মরণীয় জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। পাকিস্তানের বিপক্ষে এটিই বাংলাদেশের প্রথম জয়।
এর আগে ক্রিকেটের তিন সংস্করণ মিলিয়ে ২০ ম্যাচ খেলেও পাকিস্তানের বিপক্ষে জয় অধরা ছিল টাইগারদের। শেষ পর্যন্ত তা এলো, তাও ক্রিকেটের সবচেয়ে কুলীন সংস্করণে, আবার স্বাগতিকদের মাটিতেই।
পাকিস্তানের বিপক্ষে, তাদের মাটিতে বাংলাদেশের এটি প্রথম টেস্ট জয় হলেও বিদেশের মাটিতে এটি সপ্তম জয়।
শনিবার দ্বিতীয় ইনিংসে ১ উইকেটে ২৩ রান করে ৯৪ রানে পিছিয়ে থেকে চতুর্থ দিন শেষ করে পাকিস্তান। এরপর পঞ্চম দিনে বাংলাদেশি স্পিনারদের তাণ্ডবে ১৪৬ রানেই গুটিয়ে যায় স্বাগতিকরা। ফলে জয়ের জন্য ৩০ রানের লক্ষ্য পায় বাংলাদেশ। আর সেই কাজটা অনায়াসেই সেরেছেন দুই টাইগার ওপেনার।
চতুর্থ দিন পাকিস্তানের দ্বিতীয় ইনিংসের শুরুতে সিয়াম আইয়ুবের উইকেট তুলে নিলেও দিনের বাকি অংশটুকু সচ্ছন্দেই খেলে গেছেন অধিনায়ক শান মাসুদ (৯) ও আব্দুল্লাহ শফিক (১২)। তবে পঞ্চম দিনের দ্বিতীয় ওভারেই শান মাসুদকে সাজঘরে পাঠানোর মাধ্যমে সেই যে শুরু, তারপর থেকে নিয়মিত বিরতিতে উদযাপন করে গেছে বাংলাদেশ।
এদিন জীবন পেলেও বাংলাদেশকে ভোগাতে পারেননি বাবর আজম। মোহাম্মদ রিজওয়ান অবশ্য চেষ্টা করেছিলেন, তবে অন্যপ্রান্ত থেকে তাকে যোগ্য সমর্থন জোগাতে পারেননি তেমন কেউ। অবশেষে তিনি ৫১ রান করে ফিরে গেলে আর বেশিক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে পারেননি বাকি দুই ব্যাটার। শেষ পর্যন্ত ১৪৬ রানে স্বাগিতকদের দ্বিতীয় ইনিংস গুটিয়ে গেলে ৩০ রানের লক্ষ্য পায় টাইগাররা।
এরপর ব্যাটিংয়ে নেমে আর কাউকে ক্রিজে আসতে দেননি জাকির হাসান (১৫) ও সাদমান ইসলাম (৯)। ফলে ১০ উইকেটের বিশাল জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে বাংলাদেশ।
টেস্টে এটিই বাংলাদেশের প্রথম ১০ উইকেটের জয়।
দেশের রাজনৈতিক সংকটের মাঝে বাংলাদেশের এই টেস্ট সফর নিয়ে তেমন কারও মাথাব্যথা ছিল না। তার ওপর মরার ওপর খাঁড়ার ঘা হিসেবে দেশের মানুষের ওপর চেপেছে ভয়াবহ বন্যা। এরই মাঝে এক চিলতে হাসির উপলক্ষ্য এনে দিল টাইগাররা।
এদিন একাই চার উইকেট নিয়ে পাকিস্তানে ব্যাটিং লাইন-আপে ধ্বস নামিয়ে দেন মেহেদি হাসান মিরাজ। তাছাড়া মাথার ওপর মামলা, দেশে ফেরাতে আইনি নোটিশ, ক্রিকেট দল থেকে বাদ পড়ার শঙ্কা- এ সবকিছু একপাশে রেখে ক্ষুরধার বোলিং উপহার দেন সাকিব আল হাসান। সৌদ শাকিল ও আব্দুল্লাহ শফিকের দুই বড় উইকেট শিকার করে দলের জয়ের সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেন তিনি। পরে সাকিবের তৃতীয় শিকার হন নাসিম শাহ। বাকি তিন উইকেট নিয়েছেন পেসাররা।
এর আগে, এই টেস্টের প্রথম দিনের বেশিরভাগ অংশ ভেসে গিয়েছিল বৃষ্টিতে। তারপরও ব্যাটিং ঝলক দেখিয়ে ৬ উইকেটে ৪৪৮ রান তুলে দ্বিতীয় দিন বিকালে ইনিংস ছেড়ে দেয় পাকিস্তান। ব্যাটিংয়ে নেমে বাংলাদেশও দেয় যোগ্য জবাব। ওইদিন তো বটেই তৃতীয় দিনও পার করে চতুর্থ দিনের খেলা ২০ ওভারের মতো বাকি থাকতে শেষ হয় বাংলাদেশের ইনিংস। তবে ততক্ষণে পাকিস্তানকে অনেক পেছনে ফেলে এসেছে বাংলাদেশ। ৫৬৫ রানের ইনিংস গড়ে ১১৭ রানের লিড নিয়েছে তারা।
বিশাল এই ইনিংস গড়ার পথে মুশফিকুর রহিমের একাধিক রেকর্ড গড়া ১৯১ রান, ওপেনার সাদমানের ৯৩ এবং মিরাজের ৭৭ রানের ইনিংসগুলো ছিল অনবদ্য। তাছাড়া লিটন দাসের ৫৬ ও মুমিনুল হকের ৫০ রানের ইনিংসদুটিও বড় ভুমিকা রাখে।
এরপর পাকিস্তানের দ্বিতীয় ইনিংসে উইকেটের পেছনে সজাগ ভূমিকা রাখেন লিটন। সিয়াম আইয়ুব ও শান মাসুদের ক্যাচ ধরতে ভুল হয়নি তার। মাঝে বাবর আজমের ক্যাচ ছেড়ে দিলেও সৌদ শাকিলকে স্ট্যাম্পিং আউট করে সেই ক্ষতে মলম দিয়েছেন তিনি।
এছাড়া ব্যাট হাতে কার্যকর ভূমিকা রাখার পর নিজের আসল কাজ বোলিংয়ে ডানা মেলেন মিরাজ। পেসবান্ধব পিচেও পেসারদের রেখে একাই চার উইকেট শিকার করেন তিনি। সর্বোপরি, দলীয় পারফরম্যান্সের অনন্য নজির দেখিয়ে ঐতিহাসিক এই জয় পেয়েছে বাংলাদেশ।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
পাকিস্তান: ৪৪৮/৬ (ডিক্লে.) ও ১৪৬/১০ ((রিজওয়ান ৫১, শফিক ৩৭, বাবর ২২; মিরাজ ৪/২১, সাকিব ৩/৪৪)।
বাংলাদেশ: ৫৬৫ ও ৩০/০ (জাকির ১৫*, সাদমান ৯*)।
ফল: বাংলাদেশ ১০ উইকেটে জয়ী।
ম্যান অব দ্য ম্যাচ: মুশফিকুর রহিম।
Design & Developed By: RTD IT ZONE
Leave a Reply