জাতীয় কবিতা পরিষদের আয়োজনে অনুষ্ঠিত হয়েছে জুলাই বিপ্লবের কবিতা পাঠ। আজ ৩ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার, বিকাল ৪টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হাকিম চত্বরে কবিতা পাঠে অংশ নেন সারাদেশের প্রায় অর্ধ শতাধিক কবি। সম্প্রতি বাংলাদেশের ১২ জেলায় ভয়াবহ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তার জন্য তহবিল সংগ্রহে এ কবিতা পাঠের আয়োজন করা হয়।
জাতীয় কবিতা পরিষদের আহ্বায়ক কবি মোহন রায়হানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন কবি শাহীন রেজা। বিকাল ৪টায় সমবেত কণ্ঠে দেশপ্রেমের গান দিয়ে শুরু হয় অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানের শুরুতে জুলাই-আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে শহীদদের স্মরণে ১ মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।
স্বাগত ভাষণে কবি মোহন রায়হান বলেন, ১৯৮৭ সালে স্বৈরাচারী এরশাদ তার শরীর থেকে খুনির তকমা মুছে কবির খেতাব দিতে এশীয় কবিতা উৎসব আয়োজন করে। কিন্তু এদেশের তরুণ কবিরা এর প্রতিবাদে একই দিনে আয়োজন করে জাতীয় কবিতা উৎসব। এভাবেই স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের মধ্য দিয়ে গঠিত হয় জাতীয় কবিতা পরিষদ। কিন্তু দুঃখের বিষয়, গত ১৫ বছরে এই সংগঠনটি ফ্যাসিবাদী সরকারের দোসরে পরিণত হয়। কবিতা পরিষদের সেই কলঙ্ক মোচনের জন্য কবিতা পরিষদকে পুনর্গঠন করা হয়েছে। কবিতা পরিষদ যেন আর কোনো স্বৈরশাসকের তল্পিবাহকে পরিণত না হয় সে বিষয়ে সতর্ক থাকবে জাতীয় কবিতা পরিষদ।
মোহন রায়হান বলেন, দীর্ঘ ১৫ বছরের স্বৈরশাসনের পর ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মধ্যদিয়ে দেশ আজ নতুন করে স্বাধীনতা লাভ করেছে। এই স্বাধীনতা আনতে যারা জীবন বাজি রেখে লড়াই করেছে সেইসব ছাত্র-জনতা আমাদের কালের নতুন নায়ক। যারা শহীদ হয়েছেন তারাই আমাদের নতুন বীরশ্রেষ্ঠ। তাদের সাহস, তাদের স্পর্ধা, বীর গাথা আমাদের লিপিবদ্ধ করতে হবে। লেখক-কবি হিসেবে আমাদের কাজ এই সময়ের, নতুন স্বাধীনতার শিল্প রচনা করা।
তিনি বলেন, সুলতানের চিত্রের মতো বাঙালি এক আশ্চর্য অমিত শক্তির জাতি! দেশ এবং জনগণের যেকোনো দুর্যোগে দুর্ভোগে দুঃসময়ে সব ভেদাভেদ ভুলে সমগ্র জাতি মুহূর্তে ঐক্যবদ্ধ হয়ে যায়। এবারের ভয়াবহ বন্যায় সেটা আবার প্রমাণিত হলো। সম্প্রতি ১৩টি জেলা আকস্মিক বন্যায় প্লাবিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মানুষ সব বিভেদ ভুলে ছুটে গেছে দুর্গতদের পাশে। জাতির এই দুঃসময়ে দেশের প্রগতিশীল, গণতন্ত্রকামী কবিরা চুপ থাকতে পারে না। ‘মানুষের জন্য কবিতা’ এই লালিত চেতনায় বন্যার্তদের সহযোগিতার জন্য দেশপ্রেমিক কবিরাও এগিয়ে এসেছে।
জাতীয় কবিতা পরিষদের সদস্য সচিব কবি রেজা উদ্দিন স্টালিন বলেন, দলদাস কিছু ব্যক্তি এই কবিতা পরিষদকে গত স্বৈরশাসকের অঙ্গ প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরিত করেছিল। আমরা চাই লেখার স্বাধীনতা, চিন্তার স্বাধীনতা, মানুষের স্বাধীনতা। স্বাধীনতার জন্য আমরা আমাদের সংগ্রাম চিরঞ্জীব থাকবে।
অনুষ্ঠানে নিন্মলিখিত প্রস্তাবনাসমূহ উত্থাপন করেন জাতীয় কবিতা পরিষদের আহবায়ক কবি মোহন রায়হান।
১. ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে শহীদদের গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করে তাঁদের শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করা এবং আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা।
২. জাতীয় কবিতা পরিষদের যে সকল সদস্য অবৈধ ফ্যাসিস্ট সরকারের দালালি করে নির্লজ্জভাবে নিজেদের স্বার্থসিদ্ধি করে জাতীয় কবিতা পরিষদের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করেছে তাদের ভূমিকার নিন্দা জ্ঞাপন।
৩. ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসর যে সকল কবি নামধারী দলদাস ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান নস্যাত করার জন্য ইতিহাসের জঘন্যতম হত্যাযজ্ঞে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ভূমিকা রেখেছে তাদেরকে যথাযথ তদন্তসাপেক্ষে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে।
৪. যে সমস্ত ব্যক্তি জাতীয় কবিতা পরিষদের নাম ব্যবহার করে ফ্যাসিস্ট সরকারের পদলেহনের মাধ্যমে বিভিন্ন সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের পদ-পদবী দখল করেছে, পুরস্কার বাগিয়ে নিয়েছে এবং কোটি কোটি টাকা আর্থিক লুটপাট করেছে তাদের দুর্নীতির শ্বেতপত্র প্রকাশ করতে হবে।
৫. স্বৈরাচার-বিরোধী আন্দোলনের মধ্য দিয়ে গড়ে ওঠা সংগঠনটিকে আর কোন স্বৈরাচারের তল্পিবাহক প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরিত না করার দৃষ্টান্ত স্থাপনের উদ্দেশ্য বর্তমান নেতৃত্বকে ঘৃণা ভরে প্রত্যাখ্যান করে, প্রতিষ্ঠাকালীন আদর্শ ও লক্ষ্যে এগিয়ে নিয়ে যেতে এবং আগামী ফেব্রুয়ারি ভাষা শহীদের মাসে জাতীয় কবিতা উৎসব আয়োজনের জন্য একটি আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছে।
৬. এই কমিটি সারাদেশে অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক, প্রগতিশীল, মুক্তমনা লেখক-কবি-শিল্পীদের ঐকবদ্ধ করে কবিতা উৎসব আয়োজন করে জাতীয় কবিতা পরিষদের হৃত গৌরব ও সংগ্রামী ভাবমূর্তি ফিরিয়ে আনবে।
Design & Developed By: RTD IT ZONE
Leave a Reply