সোমবার, ০৭ অক্টোবর ২০২৪, ০৯:২২ অপরাহ্ন

পাকিস্তানকে হোয়াইটওয়াশ করে ইতিহাস গড়ল বাংলাদেশ

অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেটের সময় : মঙ্গলবার, ৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
  • ৩৮ বার দর্শন

আবরার আহমেদের অফ স্ট্যাম্পের বেশ বাইরের ডেলিভারিটি জোরালো ড্রাইভে সীমানাছাড়া করলেন সাকিব আল হাসান, সঙ্গে সঙ্গে অন্যপ্রান্ত থেকে গর্জন করে উঠলেন মুশফিকুর রহিম। উল্লাস শোনা গেল ড্রেসিং রুমের ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে থাকা নাজমুল হোসেন শান্তসহ বাকি সবারও। সব মিলিয়ে যে পরিস্থিতির সৃষ্টি হলো, এক কথায় তা ‘পাকিস্তানের বুকে বাংলাদেশের বিজয় উল্লাস’।

হ্যাঁ, পাকিস্তানকে তাদের মাটিতেই হোয়াইটওয়াশ করে টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের ইতিহাস রচনা করেছে টাইগাররা।

রাওয়ালপিন্ডি ক্রিকেট স্টেডিয়ামে দ্বিতীয় টেস্টে ৬ উইকেটের জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। এই মাঠেই প্রথম ম্যাচে তারা জেতে ১০ উইকেটে।

প্রথম টেস্ট জেতায় সিরিজ জয় করতে দ্বিতীয় ম্যাচটিতে হার এড়ালেই চলত বাংলাদেশের। দ্বিতীয় টেস্টের প্রথম দিন বৃষ্টির কারণে পরিত্যক্ত হলে সেই সম্ভাবনা আরও জোরালো হয়। তবে দ্বিতীয় দিন থেকে খেলা শুরু হলে পাকিস্তানকে ২৭৪ রানে বেঁধে ফেলে বাংলাদেশ। প্রথম ইনিংসে মেহেদী হাসান মিরাজ একাই পাঁচ উইকেট নেন, আর সাকিব তিন উইকেট নিলে দিনের খেলা শেষ হওয়ার আগেই পাকিস্তানের ইনিংস গুটিয়ে যায়।

দ্বিতীয় দিন শেষ বিকেলে ১০ রান সংগ্রহ দিনের খেলা শেষ করলেও পরের দিন সকালটা দুঃস্বপ্নের মতো শুরু হয় বাংলাদেশের। দলীয় ২৬ রানের মধ্যে ৬ উইকেট হারিয়ে চোখে সর্ষের ফুল দেখতে থাকে টাইগাররা। তবে ধ্বংস্তুপে দাঁড়িয়ে আশার ফুল ফোটান লিটন দাস ও মিরাজ। বল হাতে পাকিস্তানের ৫ উইকেট তোলার পর ব্যক্তিগত ৭৮ রান করে লিটনের সঙ্গে রেকর্ড গড়া জুটিতে বাংলাদেশকে খাদের কিনারা থেকে টেনে তুলতে বড় ভুমিকা রাখেন মিরাজ। অন্য প্রান্তে ১৩৮ রান করে দলকে মাত্র ১২ রান দূরে রেখে তৃতীয় দিনের তৃতীয় সেশনে লিটন বিদায় নিলে বাংলাদেশও থামে ২৬২ রানেই। বাংলাদেশের প্রথম ইনিংসে বল হাতে অসাধারণ পারফর্ম করেন পাকিস্তানের খুররাম শাহজাদ। একাই ৬ উইকেট নিয়ে টাইগারদের ব্যাটিং লাইন-আপ চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দেন তিনি।

দ্বিতীয় ইনিংসে পাকিস্তানকে বোলিং ঝলক দেখায় বাংলাদেশের পেসাররা। প্রথম ইনিংসে স্পিনাররা দাপট দেখালেও দ্বিতীয় ইনিংসে দশ উইকেটের সবকটি নিয়েছেন পেসাররা। টেস্টে এই প্রথম এক ইনিংসে বাংলাদেশের পেসাররাই সবগুলো উইকেট নিলেন। এর মধ্যে হাসান মাহমুদের ফাইফার এবং আগুনে বোলিংয়ে নাহিদ রানা চার উইকেট নিলে লিড বেশি বড় করতে পারেনি পাকিস্তানের ব্যাটাররা। তারা মাত্র ১৭২ রানে গুটিয়ে গেলে সব মিলিয়ে ১৮৫ রানের লক্ষ্য পায় বাংলাদেশ। এই ইনিংসে ১৫২ কিলোমিটার গতির বল করে বাংলাদেশের সবচেয়ে গতিসম্পন্ন বোলারও হয়ে যায় ক্যারিয়ারের মাত্র তৃতীয় আন্তর্জাতিক টেস্ট খেলতে নামা ২১ বছর বয়সী পেসার নাহিদ।

চতুর্থ দিন জয়ের সুবাস ছড়িয়ে কোনো উইকেট না হারিয়ে ৪২ রান তুলে দিন শেষ করলেও পঞ্চম দিন ক্রিজে নেমে অবশ্য জুটিটি আর বেশি বড় করতে পারেননি দুই ওপেনার। দলীয় ৫৮ রানের মাথায় ৩৯ বলে ৪০ রান করে ফেরেন জাকির হাসান। তিনি চলে যাওয়ার পর বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি সাদমান ইসলামও। ৫১ বলে ২৪ রান করে তিনি যখন ফিরে যাচ্ছেন, তখন দলীয় সংগ্রহ ৭০ রান। এরপর অধিনায়ক শান্ত ও পরে মুমিনুল হক এসে অবশ্য সতর্ক ব্যাটিং চালিয়ে একটু একটু করে বাংলাদেশ জয়ের বন্দরের দিকে নিয়ে যাচ্ছিলেন। তবে ৫৭ রানের জুটি গড়ে ৮২ বলে ৩৮ রান করে বিদায় নেন শান্ত, এরপর দলীয় সংগ্রহ দেড়শ পার করে ফিরে যান মুমিনুলও। জয়ের জন্য তখন প্রয়োজন আর ৩২ রান।

এরপর আর কাউকে ক্রিজের আসার কষ্ট দেননি টাইগারদের সবচেয়ে অভিজ্ঞ দুই ব্যাটার মুশফিকুর রহিম ও সাকিব আল হাসান। প্রথমজন ২২ ও পরেরজন ২১ রানে অপরাজিত থেকে বাংলাদেশকে ঐতিহাসিক সিরিজ জয় এনে দিয়ে দলের সঙ্গে উদযাপন শুরু করেন।

প্রসঙ্গত, নিজেদের দেশের মাটিতে মাত্র একবারই টেস্টে হোয়াইট ওয়াশ হয়েছে পাকিস্তান। ২০২২ সালে তিন ম্যাচের টেস্ট সিরিজ খেলতে গিয়ে স্বাগতিকদের তিনটিতেই হারায় ইংল্যান্ড।

অপরদিকে, অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, নিউজিল্যান্ডের মতো দলগুলোর বিপক্ষে ম্যাচ জিতলেও সিরিজ জেতা হয়ে ওঠেনি বাংলাদেশের। টেস্টে তাদের সিরিজ জয়ের রেকর্ড ছিল শুধু ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে।

তবে ২০০৯ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে ২-০ ব্যবধানে জিতলেও সেবার চুক্তি সংক্রান্ত ঝামেলায় শীর্ষ ক্রিকেটারদের কেউই টাইগারদের বিপক্ষে হওয়া ওই সিরিজে খেলেননি। মূলত ক্যারবীয়দের দ্বিতীয় সারির দলের বিপক্ষে সিরিজ জিতেছিল বাংলাদেশ।

তাই প্রথমবার প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে প্রথম সারির কোনো পূর্ণ শক্তির দলের বিরুদ্ধে সিরিজ জিতে ইতিহাস সৃষ্টির পাশাপাশি ক্রিকেটের এলিট সংস্করণে নিজেদের বীরত্বগাঁথা আরও একটু বড় করল বাংলাদেশ।

সংক্ষিপ্ত স্কোর

পাকিস্তান প্রথম ইনিংস: ২৭৪/১০ (৮৫.১ ওভার; সাইম ৫৮, মাসুদ ৫৭ ও সালমান ৫৪; মিরাজ ৫/৬১ ও তাসকিন ৩/৫৭)।

বাংলাদেশ প্রথম ইনিংস: ২৬২/১০ (৭৮.৪ ওভার; লিটন দাস ১৩৮, মেহেদী মিরাজ ৭৮; শাহজাদ ৬/৯০, হামজা ২/৫০, সালমান ২/১৩)।

পাকিস্তান দ্বিতীয় ইনিংস: ১৭২/১০ (৪৬.৪ ওভার; আগা সালমান ৪৭, মোহাম্মদ রিজওয়ান ৪৩; হাসান মাহমুদ ৫/৪৩, নাহিদ রানা ৪/৪৪)।

বাংলাদেশ দ্বিতীয় ইনিংস: ১৮৫/৪ (৫৬ ওভার; জাকির হাসান ৪০, নাজমুল হোসেন শান্ত ৩৮, মুমিনুল হক ৩৪; আগা সালমান ১/১৭, খুররাম শাহজাদ ১/৪০)।

ফলাফল: বাংলাদেশ ৬ উইকেটে জয়ী।

প্লেয়ার অব দ্য ম্যাচ: লিটন দাস।

প্লেয়ার অব দ্য সিরিজ: মেহেদী হাসান মিরাজ।

এই পোস্টটি আপনার সামাজিক মিডিয়াতে শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও খবর

Address

Registered Office: 44/1 North Dhanmondi (5th Floor) Kalabagan, Dhaka- 1205, Bangladesh Email: kalabaganbarta@gmail.com / admin@kalabaganbarta.com Telephone: +88-02-58154100 Editorial Office: Karim Tower 44/7-A&B, West Panthapath, Kalabagan, Dhaka-1205

Correspondences

USA: Mainul Haq (Atlanta) Kolkata: Sunirmal Chakraborty Mobile: +91-8017854521 Ashim Kumar Ghosh Address: 3D K.P Roy Lane, Tollygunge Phari Kolkata- 700 033, WB, India Mobile: +91-9874891187                                                                                                           S. M. Ashikur Rahman (Technical Adviser)
Author: Masud Karim © All rights reserved 2020. Kalabaganbarta

Design & Developed By: RTD IT ZONE