বুধবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২:৪৯ অপরাহ্ন

জাপানে উচ্চশিক্ষা: আবেদন পদ্ধতি, স্টুডেন্ট ভিসা, স্কলারশিপ ও আনুষঙ্গিক খরচ

অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেটের সময় : বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
  • ৮১ বার দর্শন

জাপানে উচ্চশিক্ষা: আবেদন পদ্ধতি, স্টুডেন্ট ভিসা, স্কলারশিপ ও আনুষঙ্গিক খরচ

সমাজ সংস্কার ও নগরায়নের নেপথ্যে মূল চালিকা শক্তি হলো উদ্ভাবনী দৃষ্টিভঙ্গি ও প্রায়োগিক জ্ঞান। এই দক্ষতার বলে যে কোনো জাতি তাদের ধ্বংসপ্রায় অবস্থা থেকে ঘুরে দাঁড়াতে পারে। তারই এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হচ্ছে পূর্ব এশিয়ার দেশ জাপান। যুদ্ধাহত ও দুর্যোগপ্রবণ হওয়ার পরেও দেশটি এশিয়ার সর্বোচ্চ স্তরের শিক্ষার মান নিশ্চিত করতে সক্ষম হয়েছে। সঙ্গত কারণেই দেশটির শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে পড়াশোনার জন্য প্রতি বছর জাপানমুখী হয় হাজার হাজার শিক্ষার্থী। চলুন, জাপানে উচ্চশিক্ষার জন্য আবেদন পদ্ধতি, স্টুডেন্ট ভিসা, স্কলারশিপ ও অধ্যয়ন খরচ সম্বন্ধে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।

জাপানে কেন পড়তে যাবেন

শিক্ষা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় (এমইএসটি) দ্বারা নিয়ন্ত্রিত প্রতিটি জাপানি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রোগ্রামগুলো আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। দেশটির প্রথম সারির বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অনেক আগে থেকেই জায়গা দখল করে আছে কিউএস ওয়ার্ল্ড র‍্যাংকিং-এ শীর্ষ শতকে। তার মধ্যে ২৮তম অবস্থানে আছে ইউনিভার্সিটি অব টোকিও এবং ৪৬ নাম্বারে রয়েছে কিয়োটো ইউনিভার্সিটি। ওসাকা ইউনিভার্সিটি এবং টোকিও ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির র‍্যাংকিং যথাক্রমে ৮০ ও ৯১।

সারা বিশ্বে ৩য় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ জাপান প্রযুক্তি ও উৎপাদন খাতে বিখ্যাত সব বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানের আবাসস্থল।

মাত্র ২২ দশমিক ৭ ক্রাইম ইনডেক্স নিয়ে বিশ্বের নিরাপদ দেশগুলোর তালিকায় শীর্ষ ১০-এ রয়েছে জাপান। দি ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট অনুসারে টোকিও ও ওসাকা যথাক্রমে বিশ্বের ১ম ও তৃতীয় নিরাপদ শহর। সময়ে সময়ে প্রাকৃতিক দুর্যোগ হওয়ায় দেশটির অবকাঠামোগুলো নির্মিত হয় সর্বোচ্চ স্তরের নিরাপত্তা মান বজায় রেখে। বিশ্বজুড়ে ভূমিকম্প-প্রতিরোধী প্রযুক্তিতে শতাব্দীর সেরা উদ্ভাবনগুলো এসেছে জাপানের মাধ্যমেই।

এছাড়া ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশনের মতে, পৃথিবীর সর্বাধিক আয়ুর অধিকারী জাতি হচ্ছে জাপানিরা। এর নেপথ্যে রয়েছে তাদের চমৎকার চিকিৎসা ব্যবস্থা, যেটি জাতীয় স্বাস্থ্য বীমার মাধ্যমে খুব সাশ্রয়ী মূল্যেই পাওয়া যায়।

জাপানে উচ্চশিক্ষার পূর্বশর্ত

এখানকার ইংরেজি ভাষার স্নাতক প্রোগ্রামগুলোতে ভর্তির জন্য টোফেল (আইবিটি) স্কোর ন্যূনতম ৭২ বা আইইএলটিএস ব্যান্ড স্কোর ৫ দশমিক ৫ থাকতে হবে। তবে স্নাতকোত্তরের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ভেদে আরও বেশি স্কোরের দরকার হতে পারে।

স্থানীয় ভাষা বাধ্যতামূলক না হলেও জাপানিরা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দোকানপাট ও অফিস সর্বত্রে তাদের নিজস্ব ভাষাকেই অগ্রাধিকার দেয়। তাছাড়া সর্বোচ্চ সুযোগ-সুবিধার স্কলারশিপ পেতে হলে জাপানি ভাষা শেখা অপরিহার্য।

ইজেইউ

জাপানের অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদেশি ছাত্রছাত্রীদের ভর্তির পূর্বশর্ত হিসেবে এই স্কোরটি দেখাতে হয়। ইজেইউ পূর্ণরূপ হলো এক্সামিনেশন ফর জাপানিজ ইউনিভার্সিটি ফর ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্টস। এখানে বিদেশি শিক্ষার্থীদের জাপানি ভাষা ও একাডেমিক দক্ষতা মূল্যায়ন করা হয়। এই পরীক্ষায় বেশি স্কোর পাওয়ার মাধ্যমে শীর্ষস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তির সম্ভাবনা বেড়ে যায়। এই পরীক্ষার বিষয়গুলোর মধ্যে রয়েছে জাপানি ভাষা, বিজ্ঞান, গণিত ও সাধারণ বিষয়। বিজ্ঞান বিভাগটি পদার্থবিদ্যা, রসায়ন ও জীববিজ্ঞানে বিভক্ত। এই পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য জুন বা নভেম্বরের মধ্যে জাপানে পৌঁছাতে হবে।

জেএলপিটি

এটি হচ্ছে জাপানি ভাষা দক্ষতা পরীক্ষা, যা অধিকাংশ জাপানি বিশ্ববিদ্যালয়ে গৃহীত হয়। এতে রয়েছে পাঁচটি মেধা স্তর, যেখানে সর্বোচ্চ স্তর এন৫ এবং সর্বনিম্ন স্তর এন১ হিসেবে অভিহিত হয়। জাপানের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তির জন্য সাধারণত কমপক্ষে এন২ স্তর থাকতে হয়।

জাপানের সেরা বিশ্ববিদ্যালয় ও চাহিদা সম্পন্ন কোর্সের তালিকা

কিউএস ওয়ার্ল্ড র‍্যাংকিং-এর শীর্ষ ২০০-তে থাকা ৯টি জাপানি বিশ্ববিদ্যালয়-

·  ইউনিভার্সিটি অব টোকিও

·  কিয়োটো ইউনিভার্সিটি

·  ওসাকা ইউনিভার্সিটি

·  টোকিও ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি

·  তোহোকু ইউনিভার্সিটি

·  কিউশু ইউনিভার্সিটি

·  নাগোয়া ইউনিভার্সিটি

·  হোক্কাইডো ইউনিভার্সিটি

·  ওয়াসেদা ইউনিভার্সিটি

জাপানের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে পড়াশোনার জন্য সর্বাধিক চাহিদা সম্পন্ন বিষয়গুলো-

·  প্রকৌশল ও প্রযুক্তি

·  ব্যবসা ও ব্যবস্থাপনা

·  ডেটা সায়েন্স

·  কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা

·  কম্পিউটার সায়েন্স

·  স্থাপত্য

·  অর্থনীতি

·  হেল্থকেয়ার ও মেডিসিন

·  পরিবেশ বিজ্ঞান

জাপানের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে আবেদনের উপায়

বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সাধারণত স্প্রিং, সামার, এবং ফল- এই তিনটি মৌসুমে ভর্তি নিয়ে থাকে। প্রথমে আবেদন, অতঃপর প্রবেশিকার পরীক্ষা- এই দুটি ধাপে পুরো ভর্তি কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয়।

আবেদন

এই ধাপে প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব অফিসিয়াল ওয়েবসাইটের মাধ্যমে আবেদন গ্রহণ করা হয়। এখানে সমস্ত প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের স্ক্যান কপি আপলোড এবং আবেদন ফি পরিশোধ করে আবেদন সম্পন্ন করতে হয়। এ সময় শুধুমাত্র গৃহীত কাগজপত্রের ভিত্তিতে আবেদনকারীদের মূল্যায়ন করা হয়। এর মধ্যে যে বিষয়গুলোতে সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া হয় সেগুলো হলো-

·  ইজেইউ স্কোর

·  জেএলপিটি স্কোর

·  আইইএলটিএস/টোফেল (আইবিটি) স্কোর

প্রবেশিকা পরীক্ষা

এই দ্বিতীয় ধাপে প্রথম ধাপে উত্তীর্ণ প্রার্থীকে সাক্ষাৎকারের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়।

ভর্তির আবেদনের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র

·   পূর্ববর্তী শিক্ষাগত যোগ্যতার প্রমাণস্বরূপ সনদপত্র এবং একাডেমিক ট্রান্সক্রিপ্ট

·   স্নাতক সনদ

·   প্রবেশিকা পরীক্ষার স্কোর (ইজেইউ, জেএলপিটি)

·   ইংরেজি প্রোগ্রামের জন্য আইইএলটিএস, টোফেল আইবিটি স্কোর

·   রিকমেন্ডেশন লেটার

·   স্টেটমেন্ট অব পার্পাস বা পার্সনাল স্টেটমেন্ট

·   কমপক্ষে ১ বছরের মেয়াদ সম্পন্ন বৈধ পাসপোর্ট

·   ৪ থেকে ৬টি পাসপোর্ট সাইজের ছবি

·   টিউশন এবং জীবনযাত্রার ব্যয়ভার বহন করার প্রমাণস্বরূপ আর্থিক নথিপত্র

·   পেশাগত যোগ্যতার সনদ (এমবিএর ক্ষেত্রে)

জাপানে স্টুডেন্ট ভিসার জন্য আবেদন করবেন যেভাবে 

ভিসা আবেদনে যাওয়ার পূর্বে উপরোক্ত নথিগুলো দিয়ে সার্টিফিকেট অব ইলিজিবিলিটি বা সিওইর জন্য আবেদন করতে হবে। এই নথিটি মূলত জাপানের আঞ্চলিক ইমিগ্রেশন ব্যুরো থেকে শিক্ষার্থীকে দেওয়া হয়।

সার্টিফিকেট অব ইলিজিবিলিটি

এই সনদটি হলো এক প্রকার যোগ্যতার শংসাপত্র। এটি জাপানে প্রার্থীর অভিবাসনের উদ্দেশ্যকে সুনিশ্চিত করার মাধ্যমে আবেদনকে আরও যৌক্তিক করে তোলে।

ইমিগ্রেশন ব্যুরো থেকে ই-মেইলের মাধ্যমে প্রার্থীকে এই সিওই পাঠানো হয়। এই সিওই ডাউনলোড এবং প্রিন্ট করে তা ভিসার আবেদনের সঙ্গে জমা দিতে হবে।

জাপানের স্টুডেন্ট ভিসার আবেদনের জন্য https://www.mofa.go.jp/files/000124525.pdf-এই লিংকের ফর্মটি ডাউনলোড করে তা পূরণ করতে হবে। তারপর প্রাসঙ্গিক কাগজপত্র নিয়ে সশরীরে কনসুলেটর অফিসে যেয়ে আবেদন জমা দিতে হবে। এছাড়া জাপানের ভিসা আবেদনের জন্য সরাসরি কোনো অনলাইন পদ্ধতি নেই। 

ভিসার আবেদনের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র

·  সম্পূর্ণ পূরণকৃত স্টুডেন্ট ভিসা আবেদনপত্র

·  অনুলিপিসহ বৈধ পাসপোর্ট

·  ২টি পাসপোর্ট সাইজের ছবি (২ ইঞ্চি X ১ দশমিক ৪ ইঞ্চি), যেটি অবশ্যই বিগত সর্বোচ্চ ৩ মাসের মধ্যে সাদা ব্যাকগ্রাউন্ডে তোলা হতে হবে

·  সিওই (জাপানি সরকারি স্কলারশিপপ্রাপ্তদের জন্য প্রয়োজন নেই)

·  জাপানি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে ভর্তির চিঠি

·  বিগত শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ ও একাডেমিক ট্রান্সক্রিপ্ট

·  আর্থিক সক্ষমতার প্রত্যয়িত নথি: এক বছরের জন্য সর্বনিম্ন ২০ লাখ ইয়েনের (১ জাপানিজ ইয়েন = ০ দশমিক ৮৫ বাংলাদেশি টাকা হিসাবে ১৬ লাখ ৯০ হাজার ৫৬৩ টাকা) ব্যাংক স্টেটমেন্ট দেখাতে হবে

·  স্কলারশিপ বা স্পন্সরশিপ থাকলে তার প্রমাণপত্র

·  স্বাস্থ্য বীমা: প্রতি বছরের জন্য সর্বনিম্ন ২০ হাজার ইয়েন (১৬ হাজার ৯০৫ টাকা)

·  সিভি বা পোর্টফোলিও

·  অধ্যয়নের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রাপ্ত অর্থপ্রদানের রশিদ

·  এয়ারলাইন বুকিং স্লিপ

সিওই প্রাপ্তির পর তা আবেদনপত্র ও উপরোক্ত কাগজপত্রের সাথে একত্রে ভিসা আবেদন কেন্দ্রে জমা দিতে হবে। তবে যাওয়ার পূর্বে প্রথম কাজ হলো ভিসা কেন্দ্রের অ্যাপয়েন্টমেন্ট নেওয়া।

সাক্ষাৎকারের অ্যাপয়েন্টমেন্ট বুকিং ও আবেদন জমা

আবেদনের যাবতীয় কাগজপত্র জমা এবং সাক্ষাৎকারের জন্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিতে হলে consular@dc.mofa.go.jp-এই ঠিকানায় ই-মেইল করতে হবে। ই-মেইলের সংযুক্তি হিসেবে (https://www.bd.emb-japan.go.jp/files/100472248.xlsx)-এই ফর্মটি পূরণ করে দিতে হবে।

জাপানি ভিসা আবেদন কেন্দ্রের ঠিকানা: জাপান দূতাবাস, বাংলাদেশ, প্লট নং ৫ ও ৭, দূতাবাস রোড, বারিধারা, ঢাকা।

ভিসা কেন্দ্রে উপস্থিত হওয়ার সময় রবি থেকে বৃহস্পতিবার যে কোনো দিন সকাল ৯টা থেকে ১০টা ৫০-এর মধ্যে। প্রার্থীদের সাক্ষাৎকার চলে সকাল সাড়ে ৯টা থেকে শুরু হয়ে দুপুর ১২টা পর্যন্ত। আবেদনের যাবতীয় নথিপত্র জমা দেওয়ার পর ভিসা অফিস থেকে একটি রশিদ দেওয়া হয়। পরবর্তীতে ভিসা সংগ্রহের সময় এই রশিদটি সঙ্গে নিয়ে আসতে হয়।

ভিসা প্রক্রিয়াকরণের মেয়াদ, ফি ও ভিসা সংগ্রহ

সাক্ষাৎকারের দিন থেকে থেকে সাধারণত ৫ কর্মদিবস পরে ভিসা সরবরাহের নিয়ম। তবে সিওইসহ ভিসা প্রক্রিয়াকরণের সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াটিতে ১ থেকে ৩ মাস পর্যন্ত সময় লেগে যেতে পারে। সিঙ্গেল এন্ট্রি ভিসার জন্য ফি ৩ হাজার ইয়েন (২ হাজার ৫৩৬ টাকা) ও ডাবল-এন্ট্রির জন্য ৬ হাজার ইয়েন (৫ হাজার ৭২ টাকা)।

ভিসাযুক্ত পাসপোর্ট বিতরণের সময় দুপুর ২টা ৩০ মিনিট থেকে ৩টা ৩০ মিনিটের মধ্যে। এ সময় পাসপোর্টসহ জমাকৃত সব মূল কাগজ ফেরত দেওয়া হয়।

প্রার্থী ভিসা কেন্দ্রে সশরীরে উপস্থিত হতে অপারগ হলে তার মনোনীত ব্যক্তিকে পাঠাতে পারেন। তবে এ ক্ষেত্রে সেই ব্যক্তির সঙ্গে আসল প্রার্থীর বৈধ স্বাক্ষরসহ পাওয়ার অব অ্যাটর্নি চিঠি ও আবেদনের রশিদ থাকা আবশ্যক।

জাপানে পড়াশোনা ও জীবনযাত্রার সম্ভাব্য খরচ

এখানকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে স্নাতক প্রোগ্রামগুলোতে অধ্যয়ন ফি সাধারণত গড়ে ১২ লাখ ৪০ হাজার ইয়েন থেকে ২৮ লাখ ৩০ হাজার ইয়েন। এই মূল্য প্রায় ১০ লাখ ৪৮ হাজার ১৪৮ থেকে ২৩ লাখ ৯২ হাজার ১৪৬ টাকার সমতূল্য। মাস্টার্স ডিগ্রির জন্য ব্যয় হতে পারে প্রায় ১২ লাখ ৫০ হাজার থেকে ৪৪ লাখ ইয়েন, যা ১০ লাখ ৫৬ হাজার ৬০১ থেকে ৩৭ লাখ ১৯ হাজার ২৩৮ টাকার সমান। আর পিএইচডি প্রোগ্রামের জন্য খরচ হতে পারে ১৯ হাজার থেকে ১ লাখ ২০ হাজার ইয়েন (১৬ হাজার ৬০ থেকে ১ লাখ ১ হাজার ৪৩৪ টাকা)।

জাপানের জীবনযাত্রায় আবাসনের খরচ শহরভেদে ভিন্ন রকম হয়ে থাকে। টোকিও শহরে মাসিক বাসা ভাড়া গড়ে ১ লাখ ৬৪ হাজার ইয়েন (১ লাখ ৩৮ হাজার ৬২৬ টাকা) এবং ওসাকাতে ১ লাখ ৩৫ হাজার ইয়েন (১ লাখ ১৪ হাজার ১১৩ টাকা)। কিয়োটোতে থাকার জন্য বাজেট রাখতে হবে ১ লাখ ১৮ হাজার ইয়েন বা ৯৯ হাজার ৭৪৩ টাকা এবং ফুকুওকার জন্য ১ লাখ ৫ হাজার ইয়েন তথা ৮৮ হাজার ৭৫৫ টাকা।

টোকিওর মতো ব্যস্ততম শহরগুলোতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসের বাইরে থাকাটা যথেষ্ট ব্যয়বহুল। অপরদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডরমিটরিগুলোতে এক রুমের জন্য প্রতি মাসে দিতে হয় প্রায় ১২ হাজার ইয়েন (১০ হাজার ১৪৩ টাকা)।

এছাড়া বিদেশি ছাত্রছাত্রীদের মুদি ও খাবারের জন্য মাসিক বাজেট রাখতে হয় ৩০ থেকে ৪০ হাজার ইয়েন। এই মূল্য প্রায় ২৫ হাজার ৩৫৮ থেকে ৩৩ হাজার ৮১১ টাকার সমতুল্য। স্বাস্থ্যসেবা পরিষেবাগুলো মাসে ২ থেকে ৩ হাজার ইয়েনের (১ হাজার ৬৯১ থেকে ২ হাজার ৫৩৬ টাকা) মধ্যে পাওয়া যায়। ইউটিলিটির জন্য খরচ সাধারণত প্রায় ১০ হাজার ইয়েন অথবা ৮ হাজার ৪৫৩ টাকা। পাবলিক ট্রান্সপোর্টে ছাত্রদের জন্য মাসিক পাস ফি প্রায় ৫ হাজার ইয়েন (৪ হাজার ২২৬ টাকা)।

জাপানে পড়াশোনা ও জীবনযাত্রার খরচ

জাপানে স্কলারশিপের সুযোগ

স্নাতক ও স্নাতকোত্তর প্রোগ্রামে যারা ন্যূনতম ৬৫ শতাংশের অধিক ফলাফল নিয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন, তাদের জন্য জাপানে রয়েছে স্কলারশিপের ব্যবস্থা। পিএইচডি ছাড়াও অন্যান্য পর্যায়গুলোতে বিভিন্ন বিষয়ে অধ্যয়নের ওপর এই স্কলারশিপগুলো দেওয়া হয়।

এর মধ্যে জাপানের সরকারি স্কলারশিপে টিউশন ফি ও রাউন্ড ট্রিপের বিমান ভাড়ার পাশাপাশি ১ লাখ ৪৪ হাজার ইয়েনের মাসিক উপবৃত্তি পাওয়া যায়। বাংলাদেশি টাকায় এটি ১ লাখ ২১ হাজার ৭২১ টাকার সমান।

জাপান স্টুডেন্ট সার্ভিসেস অর্গানাইজেশন স্কলারশিপের আওতায় রয়েছে ২৭ থেকে ৪২ হাজার ইয়েন (২২ হাজার ৮২৩ থেকে ৩৫ হাজার ৫০২ টাকা) মাসিক উপবৃত্তি।

জেটি এশিয়া স্কলারশিপ শুধুমাত্র মাস্টার এবং ডক্টরাল শিক্ষার্থীদের ২ বছরের জন্য প্রতি মাসে পরিমাণ ১৫ লাখ ইয়েন (১২ লাখ ৬৭ হাজার ৯২২ টাকা) উপবৃত্তি দেয়।

সাতো ইয়ো ইন্টার্ন্যাশনাল স্কলারশিপ পাওয়ার পূর্বশর্ত হলো জাপানি ভাষায় দক্ষ হওয়া। এখানে স্নাতক স্তরের প্রার্থীদের জন্য প্রতি মাসে বরাদ্দ থাকে ১৫ লাখ ইয়েন (১২ লাখ ৬৭ হাজার ৯২২ টাকা)। স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থীরা পান ১৮ লাখ ইয়েন, যা প্রায় ১৫ লাখ ২১ হাজার ৫০৬ টাকা।

আইচি স্কলারশিপ প্রোগ্রামে অধ্যয়ন ফি ও ভ্রমণ খরচের সঙ্গে থাকে ১৫ লাখ ইয়েনের (১২ লাখ ৬৭ হাজার ৯২২ টাকা) মাসিক উপবৃত্তি।

পড়াশোনার পাশাপাশি খণ্ডকালীন চাকরির সুযোগ

জাপানের স্টুডেন্ট ভিসার আওতায় খণ্ডকালীন চাকরির সুযোগ থাকে না। এর জন্য ইমিগ্রেশন অফিসে পৃথকভাবে পার্ট-টাইম ওয়ার্ক পারমিটের জন্য আবেদন করতে হয়। অবশ্য এর আগের কাজ হচ্ছে ভর্তি হওয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একটি রেসিডেন্ট কার্ড সংগ্রহ করা। এই কার্ডটি পরবর্তীতে খণ্ডকালীন কাজের অনুমতি পাওয়াসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধার জন্য প্রয়োজন হয়। পার্ট-টাইম ওয়ার্ক পারমিটে সেমিস্টার চলাকালীন সপ্তাহভিত্তিতে ২৮ ঘণ্টা এবং ছুটির সময়ে ৪০ ঘণ্টা কাজ করা যায়।

এই চাকরিগুলোর মধ্যে কনভেনিয়েন্স স্টোর স্টাফদের মজুরি ঘণ্টাপ্রতি ১ হাজার ২০০ ইয়েন (১ হাজার ১৪ টাকা) এবং রেস্তোরাঁ বা ক্যাফে স্টাফদের ১ হাজার ইয়েন (৮৪৫ টাকা)। আইটি সাপোর্ট কর্মীদের পারিশ্রমিক ২ হাজার ৪০০ ইয়েন (২ হাজার ২৯ টাকা) এবং ফুড ডেলিভারিতে পাওয়া যায় ১ হাজার ৫০০ ইয়েন (১ হাজার ২৬৮ টাকা)। গবেষণা সহকারীদের মজুরী ২ হাজার ২০০ ইয়েন (১ হাজার ৮৬০ টাকা) এবং লাইব্রেরি সহকারীদের ১ হাজার ৮০০ ইয়েন (১ হাজার ৫২২ টাকা)।

এই চাকরিগুলো থেকে প্রতি মাসে প্রায় ১ লাখ ২৫ হাজার ইয়েন (১ লাখ ৫ হাজার ৬৬০ টাকা) আয় হয়। এগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ আয়ের চাকরি হলো ইংরেজি টিউটর বা ভাষা প্রশিক্ষক, যেখানে ঘণ্টা প্রতি ৩ হাজার ৫০০ ইয়েন (২ হাজার ৯৫৮ টাকা) পর্যন্ত উপার্জন করা সম্ভব।

পরিমিত জীবনযাত্রার খরচ 

জাপানের ব্যয়বহুল শহরগুলোতে থাকার সেরা উপায় হলো পরিকল্পিত ও নিয়ন্ত্রিত জীবনধারণে অভ্যস্ত হওয়া। এর মধ্যে রয়েছে ছাত্রাবাস বা শিক্ষার্থী বা স্থানীয় পরিবারের সঙ্গে শেয়ার করা থাকা। এতে করে বড় শহরগুলোতে চলাফেরার ক্ষেত্রে মাসিক বাজেট উল্লেখযোগ্যভাবে কমে আসে।

নিত্য প্রয়োজনীয় মুদি ও খাবার কেনার জন্য ডিসকাউন্ট স্টোরগুলোতে কেনাকাটা করা উচিত। যেমন ডন কুইজোট (ডনকি) ও ডাইসোর মতো স্টোরগুলোর পণ্য যথেষ্ট সাশ্রয়ী। অনেক রেস্তোরাঁ ও দোকান শিক্ষার্থীদের জন্য আলাদা ছাড়ের ব্যবস্থা রাখে।

যাতায়াতের ক্ষেত্রে গণপরিবহন ব্যবহার করা উত্তম। পাবলিক বাস বা ট্রেনে চলাচলের ক্ষেত্রে মাসিক পাসগুলো বাজেট বাঁচানোর ক্ষেত্রে বেশ সহায়ক। এছাড়াও বিভিন্ন উপলক্ষগুলোতে জেআর পাসের মতো ডিসকাউন্ট ভ্রমণ পাস ব্যবহার করা যেতে পারে। দৈনন্দিন অল্প দূরত্বের জায়গাগুলোতে যাতায়াতের জন্য সাইকেল ব্যবহার করাটা দীর্ঘ মেয়াদে লাভজনক হতে পারে।

জাপানে উচ্চশিক্ষার জন্য জাপানি ভাষার প্রতি গুরুত্ব দেওয়া জরুরি। পড়াশোনায় স্কলারশিপপ্রাপ্তি এবং পার্ট-টাইম চাকরির জন্য এর কোনো বিকল্প নেই। শীর্ষস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে ভর্তির অফার পাওয়ার সম্ভাবনা বাড়াতে পারে ইজেইউ পরীক্ষার উচ্চ স্কোর। এই অর্জন সিওই পাওয়াটাকেও সহজ করে তুলতে পারে, যা কম সময়ে ভিসাপ্রাপ্তির জন্য অতীব জরুরি।

এই পোস্টটি আপনার সামাজিক মিডিয়াতে শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও খবর

Address

Registered Office: 44/1 North Dhanmondi (5th Floor) Kalabagan, Dhaka- 1205, Bangladesh Email: kalabaganbarta@gmail.com / admin@kalabaganbarta.com Telephone: +88-02-58154100 Editorial Office: Karim Tower 44/7-A&B, West Panthapath, Kalabagan, Dhaka-1205

Correspondences

USA: Mainul Haq (Atlanta) Kolkata: Sunirmal Chakraborty Mobile: +91-8017854521 Ashim Kumar Ghosh Address: 3D K.P Roy Lane, Tollygunge Phari Kolkata- 700 033, WB, India Mobile: +91-9874891187                                                                                                           S. M. Ashikur Rahman (Technical Adviser)
Author: Masud Karim © All rights reserved 2020. Kalabaganbarta

Design & Developed By: RTD IT ZONE