বুধবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৩:৫৫ অপরাহ্ন

রাষ্ট্রপতি ইস্যুতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের সাথে সম্পর্কের ফাটল ধরলো বিএনপির?

অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেটের সময় : মঙ্গলবার, ২৯ অক্টোবর, ২০২৪
  • ৩৬ বার দর্শন

বিবিসি বাংলার প্রতিবেদনে প্রকাশ শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর গত আড়াই মাসে নতুন সরকার গঠন কিংবা বিভিন্ন ইস্যুতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাথে বিএনপির ঐকমত্য থাকলেও এই প্রথম রাষ্ট্রপতি অপসারণ ইস্যুতে বিভেদ দেখা যাচ্ছে।

বিএনপির সাথে এ নিয়ে বৈঠক করেও এখন পর্যন্ত কোনো সমাধানে পৌঁছাতে পারেনি আন্দোলনের নেতৃত্ব দেওয়া শিক্ষার্থীদের প্লাটফর্ম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি।

তাহলে কি সরকার পতনের আড়াই মাসের মাথায় আওয়ামী লীগ বিরোধীদের মধ্যে ঐক্যে ফাটল ধরলো সেই প্রশ্নও তৈরি হয়েছে। জবাবে বিএনপি বলছে, সাংবিধানিক সংকট তৈরির হতে পারে এমন আশঙ্কার জায়গা থেকেই এই পথে হাঁটতে চাচ্ছে না তারা।

এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘এটাকে দূরত্ব বা ফাটল বলা যাবে না। তারা রাষ্ট্রপতি পরিবর্তন করতে আমাদের সঙ্গে আলোচনা করেছে। আমরা তাদের বুঝানোর চেষ্টা করেছি যে, এভাবে রাষ্ট্রপতি পরিবর্তন হলে সাংবিধানিক ও রাজনৈতিক সংকট তৈরি হওয়ার আশঙ্কা আছে।’

 এই প্রশ্নে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন মনে করছে রাষ্ট্রপতির অপসারণ ইস্যুতে বিএনপি যে সংকটের কথা ভাবছে সেটি রাজনৈতিক।

যেটি আলাপ আলোচনার মাধ্যমেই সমাধান সম্ভব। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্য সচিব আরিফ সোহেল বলেন, ‘হয়তো বিএনপি ভাবছে এখন রাষ্ট্রপতি অপসারণ হলে আগামী নির্বাচন আয়োজন বিলম্বিত হতে পারে। আমরা তাদের আশ্বস্ত করবো যেনো প্রয়োজনের তুলনায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার একদিনও বেশি না থাকে।’

গত কয়েকদিনে ধারাবাহিকভাবে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সাথে এই ইস্যুতে আলোচনা করছে ছাত্রদের পৃথক দুটি প্লাটফর্ম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি।

তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, রাষ্ট্রপতির এই মুহূর্তে কোনো ক্ষমতা নেই। তাই তাকে অপসারণ বা তিনি পদে থাকলে খুব বেশি সংকটও তৈরি হবার কথা না।

রাষ্ট্রপতি ইস্যুতে বিএনপির আপত্তি কেন? : গত সপ্তাহে শেখ হাসিনার পদত্যাগ ইস্যু নিয়ে একটি পত্রিকার সম্পাদকের কাছে সাক্ষাৎকার দেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। সেখানে বলা হয়, শেখ হাসিনা পদত্যাগের কোনো দালিলিক প্রমাণ তার কাছে নেই। মূলত সাক্ষাৎকারে দেয়া রাষ্ট্রপতির ওই বক্তব্যকে ঘিরে দেশজুড়ে নানা বিতর্ক তৈরি হয়।

রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ দাবিতে গত মঙ্গলবার বঙ্গভবন ঘেরাও করে কয়েকটি সংগঠন। একই দিন রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ দাবিতে আল্টিমেটামও দেয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি।

পরদিনই বিএনপির একটি প্রতিনিধিদল প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সাথে দেখা করেন। সেখান থেকে বেরিয়ে তারা জানান, এই মুহূর্তে কোনো সাংবিধানিক সংকট তৈরি হোক সেটি তারা চান না।

এরপর গত শনিবার বিএনপির সঙ্গে রাষ্ট্রপতি ইস্যুতে বৈঠক করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির নেতারা। কিন্তু ছাত্র নেতাদের সাথে বৈঠকেও তাদের আগের অবস্থানে অনড় ছিল বিএনপি।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমরা এই ইস্যুতে সংকট বা সাংবিধানিক শূন্যতা চাইছি না দেশের স্বার্থে, গণতন্ত্রে উত্তরণের স্বার্থে।’

কারণ হিসেবে বিএনপি অবশ্য বলছে, এই মুহূর্তে এই সংকট তৈরি হলে তা অন্য কোনো অসাংবিধানিক শক্তিকে সুযোগ করে দিতে পারে।

তবে, রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, সাংবিধানিক সংকটের চেয়ে রাষ্ট্রপতির অপসারণ ইস্যুটি আরো বেশি রাজনৈতিক।

বিশ্লেষক রাশেদা রওনক খান বলেন, ‘বিএনপি খুব ভালো করে জানে এই মুহূর্তে নির্বাচন হলে তারা সংখ্যাগরিষ্ঠভাবে সরকার গঠন করতে পারবে। আর রাষ্ট্রপতি অপসারণ ইস্যু সামনে আসলে তখন নির্বাচন পিছিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হবে। সে কারণেই হয়তো বিএনপির আপত্তি।’

দুই পক্ষের ঐক্যে ফাটল? : আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নিয়েছে প্রায় আড়াই মাস হলো। এই সময়ে উপদেষ্টা পরিষদ গঠনসহ নানা ইস্যুতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে বিএনপির বিভিন্ন বিষয়ে ঐকমত্য ছিল। কিন্তু রাষ্ট্রপতির অপসারণ ইস্যুতে বিএনপির সাথে বৈঠক করেও ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারেনি গণঅভ্যুত্থানের নেতৃত্ব দেওয়া শিক্ষার্থীরা।

এরপরই দেশের সাম্প্রতিক রাজনীতিতে এ নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে, একই দাবিতে আন্দোলন করা দুটি বড় শক্তির মধ্যে কি নতুন দূরত্ব তৈরি হলো কি না।

বিএনপি সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘তারা হয়তো একভাবে চাইছে, আমরা আরেকভাবে চিন্তা করছি। এ নিয়ে কথাবার্তা হচ্ছে। এটাকে দূরত্ব বা ফাটল বলা যাবে না।’

তবে দূরত্ব যে একেবারে তৈরি হয়নি, সেটি কিন্তু জোরালোভাবে বলেনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। প্লাটফর্মটির সদস্য সচিব আরিফ সোহেল বলেন, ‘যে রকম ফাটল বা দূরত্ব মনে করা হচ্ছে, বিষয়টি ঠিক তেমন না। এটাকে আমরা বিরোধী হিসেবে দেখছি না। নিশ্চয়ই দ্বিতীয় ধাপের আলোচনায় আমরা একটা পথ বের করতে পারবো।’

যেহেতু প্রথম দফার আলোচনায় রাষ্ট্রপতি ইস্যুতে কোনো একক সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেনি দলগুলো, সে কারণে আবারো দ্বিতীয় দফা আলোচনা শুরু করার কথা জানিয়েছে বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীরা।

কিন্তু তাতেও কি বিএনপিকে রাজি করানো সম্ভব হবে? আর যদি তা সম্ভব না হয় তাহলে রাষ্ট্রপতি ইস্যুতে সমাধান কী?

রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহিউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘এখন বিএনপির ভয়ের জায়গা হচ্ছে রাষ্ট্রপতি ইস্যুতে না আবার নির্বাচন পিছিয়ে যায়, স্বাভাবিকভাবে এটা হলে নির্বাচন পিছিয়ে যাওয়ার সমূহ সম্ভবনা তৈরি হবে। যে কারণে শেষ পর্যন্ত বিএনপি রাজি নাও হতে পারে।’

রাষ্ট্রপতি ইস্যুতে সংকটের সমাধান কী? : শেখ হাসিনার পদত্যাগ ইস্যুতে রাষ্ট্রপতির বক্তব্য নিয়ে নানা সমালোচনা তৈরি হলে গত ২১ অক্টোবর রাষ্ট্রপতির প্রেস উইং থেকে একটি বিজ্ঞপ্তি পাঠানো হয়। যেখানে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন বলেন, ‘শেখ হাসিনার পদত্যাগ একটি মীমাংসিত বিষয়।’ তাই এ নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি না করার আহ্বান জানান তিনি।

কিন্তু বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন বলছে, রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনুগত। যে কারণে তার পদে থাকাকে সংকট মনে করছে তারা।

যদি বিএনপি রাজি না হয় রাষ্ট্রপতিকে কি অপসারণ করা সম্ভব হবে? জবাবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্য সচিব আরিফ সোহেল বলেন, ‘বিএনপি বড় একটি রাজনৈতিক দল, ঐকমত্য ছাড়া এই দাবি হয়তো পরিপূর্ণ হবে না। এজন্য আমরা তাদের সাথে আবার বৈঠক করে আলোচনা করবো।’

জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন, ১২ জোটসহ অন্যান্য দল এবং জোট রাষ্ট্রপতি ইস্যুতে ছাত্রদের দাবির সাথে একাত্মতা প্রকাশ করেছে। তবে তাদের কেউ কেউ আগে রাজনৈতিক ঐকমত্যকেই গুরুত্ব দিয়েছে। 

যদিও রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছে এটি বড় কোনো সংকট নয়। মহিউদ্দিন আহমদ বলছেন, ‘এখন যারা সরকার পরিচালনা করছে তাদের জন্য রাষ্ট্রপতি কোনো বাধা না। কারণ তার তো তেমন কোনো ক্ষমতাও নাই। তাহলে এটি নিয়ে যে সংকটের কথা ভাবা হচ্ছে সেটি গুরুতর নয়। বরং তাকে সারানোর কারণে যদি কোনো সংকট তৈরি হয়, তাতে তৃতীয় পক্ষ সুযোগ খোঁজার চেষ্টা করবে।’

যে কারণে বিএনপিও চাইছে এই ইস্যুতে নতুন করে সংকটের পথ বন্ধ করতে। দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও নাগরিক কমিটির যারা আছে তাদের বোঝানোর চেষ্টা করবো যেন কোনো সংকট না হয়।’

আরো যে সব ইস্যুতে আলোচনা হচ্ছে :  শুধু রাষ্ট্রপতি ইস্যু না, গত কয়েকদিনে বর্তমান সংবিধান অনুযায়ী অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের শথপ নেওয়া নিয়েও এক ধরনের বিতর্ক তৈরি হয়েছে। গত কয়েকদিন জাতীয় পার্টি বাদে দেশের বর্তমান সব রাজনৈতিক দল ও জোটের সাথে ধারাবাহিকভাবে বৈঠক করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও নাগরিক কমিটি।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আরিফ সোহেল বলেন, ‘বিএনপি প্রোক্লেমেশন অব রিপাবলিক ঘোষণার বিষয়ে দলীয় ফোরামে আলোচনার পর সিদ্ধান্ত নেবে বলে আমাদের জানিয়েছে।’

তবে তিনি জানান, এখন পর্যন্ত তিনটি ইস্যুর মধ্যে শুধুমাত্র বিগত তিনটি জাতীয় নির্বাচন বাতিলের ইস্যুটিতেই একমত হয়েছে সব দল। যে কারণে তিন ইস্যুতেই ঐকমতে পৌঁছাতে দ্বিতীয় দফায় আবারো বসার কথা ভাবছে গণঅভ্যুত্থানের নেতৃত্ব দেওয়া শিক্ষার্থীরা।

এই পোস্টটি আপনার সামাজিক মিডিয়াতে শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও খবর

Address

Registered Office: 44/1 North Dhanmondi (5th Floor) Kalabagan, Dhaka- 1205, Bangladesh Email: kalabaganbarta@gmail.com / admin@kalabaganbarta.com Telephone: +88-02-58154100 Editorial Office: Karim Tower 44/7-A&B, West Panthapath, Kalabagan, Dhaka-1205

Correspondences

USA: Mainul Haq (Atlanta) Kolkata: Sunirmal Chakraborty Mobile: +91-8017854521 Ashim Kumar Ghosh Address: 3D K.P Roy Lane, Tollygunge Phari Kolkata- 700 033, WB, India Mobile: +91-9874891187                                                                                                           S. M. Ashikur Rahman (Technical Adviser)
Author: Masud Karim © All rights reserved 2020. Kalabaganbarta

Design & Developed By: RTD IT ZONE