সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য হলে তা বাস্তবায়নের পর ‘যত দ্রুত সম্ভব’ নির্বাচন দেওয়া হবে এবং এ বছরের ডিসেম্বরেও তা ‘হতে পারে’ বলে আভাস দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস।
আজ বৃহস্পতিবার দুবাইয়ের ওয়ার্ল্ড গভার্নমেন্টস সামিটের একটি সেশনে সঞ্চালকের এক প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন তিনি।
ইন্টারঅ্যাকটিভ প্লেনারি সেশনে সঞ্চালকের ভূমিকায় ছিলেন সিএনএনের সাংবাদিক বেকি অ্যান্ডারসন। বিভিন্ন বিষয়ে তিনি প্রশ্ন করেন বাংলাদেশের সরকারপ্রধানকে।
ইউনূস বলেন, “আমরা ১৫টি খাতের জন্য সংস্কার কমিশন গঠন করেছি। আইন-শৃঙ্খলা, পুলিশ, সংবিধান, নির্বাচনসহ অন্যান্য সংস্কার কমিশনগুলো প্রতিবেদন তৈরি করেছে। তারা বিভিন্ন ধরনের সুপারিশ করছে।”
সেসব সুপারিশের ওপর আলোচনার ভিত্তিতে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য গঠনের চেষ্টা হবে জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “যেসব সুপারিশের বিষয়ে সবাই একমত পোষণ করবে, সেগুলো নিয়ে আমরা একটা ‘সনদ’ তৈরি করব। আমরা সেগুলো বাস্তবায়ন করে নির্বাচন দেব। যত দ্রুত সম্ভব আমরা নির্বাচন দেব। এটা এ বছরের ডিসেম্বরেও হতে পারে।”
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত বছরের ৫ অগাস্ট শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব নেয়। ইতোমধ্যে এ সরকার ছয় মাস পূর্ণ করলেও নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট দিনক্ষণ ঘোষণা করা হয়নি, যা নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর চাপ রয়েছে।
বিএনপি যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচন চেয়ে এলেও অন্তবর্তী সরকারের উপদেষ্টা এবং জুলাই অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের নেতারা আগে রাষ্ট্র সংস্কারের কাজ সারার ওপর জোর দিচ্ছেন।
প্রধান উপদেষ্টা ইউনূস গত বিজয় দিবসে বলেছিলেন, সংস্কার কতটা করে ভোটে যাওয়া হবে তার ওপর নির্ভর করে ২০২৫ সালের শেষ অথবা ২০২৬ সালের প্রথমার্ধের মধ্যে হতে পারে ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন।
তবে গত ১০ ফেব্রুয়ারি তার সঙ্গে দেখা করে করে এসে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাংবাদিকদের বলেন, অন্তবর্তীকালীন সরকার ‘ডিসেম্বরের মধ্যেই’ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য কাজ করছে বলে তাদের ‘আশ্বস্ত’ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা।
এদিকে নির্বাচন কমিশনও বলেছে, ডিসেম্বর মাথায় রেখেই তারা নির্বাচনের প্রস্তুতি সেরে রাখছে।
অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে চ্যালেঞ্জের বিষয়গুলো প্রধান উপদেষ্টার কাছে জানতে চান বেকি অ্যান্ডারসন।
জবাবে ইউনূস বলেন, আইন শৃঙখলা পরিস্থিতি ঠিক করাই এখন প্রথম চ্যালেঞ্জ।
“গত ১৫-১৬ বছর ধরে নির্বাচন ছাড়াই সে (শেখ হাসিনা) দেশ চালিয়েছে, নির্বাচন হলেও ভুয়া নির্বাচন হয়েছে। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অবস্থা, ব্যাংকিং খাত ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। আমরা একটু একটু করে সব গুছিয়ে নিচ্ছি। আমরা সমাজ, প্রতিষ্ঠান সবকিছু পুনর্গঠন করছি। এই হল আমাদের অবস্থা। ”
তিনি বলেন, “ব্যাংকগুলো থেকে ১৬ বিলিয়ন ডলার পাচার হয়ে গেছে। আমাদের রিজার্ভ তলানিতে চলে গেছে।”
নির্বাচন শেষে আরও কিছু সময় নেতৃত্বে থাকার ইচ্ছা আছে কিনা জানতে চাইলে ইউনূস বলেন,” আমি এটা আগেও স্পষ্ট করে বলেছি। নির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের পর আমি যে কাজে ছিলাম, সেখানেই ফিরে যাব, কারণ আমি সে কাজেই আনন্দ পাই। ”
ওয়ার্ল্ড গভার্নমেন্টস সামিটে যোগ দিতে বুধবার রাতে সংযুক্ত আরব আমিরাতে পৌঁছান প্রধান উপদেষ্টা ইউনূস। সম্মেলনে অংশ নেওয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানদের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে অংশ নেওয়ার কথা রয়েছে তার।
Design & Developed By: RTD IT ZONE
Leave a Reply