রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫, ০৯:১৪ পূর্বাহ্ন

৬০ কোটি ভারতীয় খোলা জায়গায় মলত্যাগ করে

অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেটের সময় : সোমবার, ৬ জানুয়ারী, ২০২৫
  • ৯৯ বার দর্শন

বিশাল জনগোষ্ঠীর দেশ ভারতে তিন ভাগের এক ভাগই জন্মের পর থেকে টয়লেট ব্যবহার করে না। এমনকি, শৌচাগার থাকার পরও তারা বেছে নেয় ধান ক্ষেত, পাট ক্ষেত, রেল লাইনের মত জায়গা। ভারত জ্ঞান-বিজ্ঞানে এগিয়ে গেলেও আলোর অপর পাশে রয়েছে ঘুটঘুটে অন্ধকার। মাঠে-ঘাটে বনে বাদরে মলত্যাগ করার অভ্যাস তাদের প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম বহন করে চলছে।

নানা ইস্যুতে অন্যের বিষয়ে নাক গলানো ভারতের নিজেদেরই সমস্যার কোনো শেষ নেই। শৌচাগার নয়, ভারতীয়রা ভালোবাসে খোলা জায়গায় টয়লেট করতে। রেল লাইন থেকে শুরু করে খোলা মাঠ আর নদীর পাড়, কোনো কিছুই বাকি রাখে না ভারতীয়রা।

শুধু পুরুষ আর শিশুই নয়, নারীরাও উন্মুক্ত স্থানে প্রকাশ্যে টয়লেট করতে পছন্দ করে। লজ্জা শরমের মাথা খেয়েও ভারতের ৬০ কোটির বেশি মানুষ অভ্যস্ত খোলা স্থানে মলত্যাগ করতে। ঘরের পাশে টয়লেট ব্যবহার করাকে ভারতীয়রা ধর্মী দৃষ্টিকোন থেকে অশুভ মনে করে। তাই তারা উন্মুক্ত স্থানে মলত্যাগ করতেই পছন্দ করে।

জাতিসংঘের এক রিপোর্টে বলা হচ্ছে, বিশ্বে একশো কোটি মানুষ এখনো খোলা জায়গায় মলত্যাগ করে এবং এর ফলে কলেরা, ডায়ারিয়া এবং হেপাটাইটিসের মতো মারাত্মক রোগ-ব্যাধির বিস্তার ঘটছে।

জাতিসংঘের শিশু সংস্থা ইউনিসেফ এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা তাদের রিপোর্টে বলেছে, খোলা জায়গায় মলত্যাগের অভ্যাস সবচেয়ে বেশি ভারতে। দেশটির ষাট কোটির বেশি মানুষ উন্মুক্ত জায়গায় মলত্যাগ করে। ভারত সরকার স্বাস্থ্য সম্মত পায়খানা তৈরির জন্য শত শত কোটি ডলার ব্যয় করেও পরিস্থিতি খুব বেশি বদলাতে পারেনি।

স্বাস্থ্য সম্মত পায়খানা তৈরি করে খোলা জায়গায় মলত্যাগের অভ্যেস বন্ধের জন্য শত শত কোটি ডলার খরচ করা হলেও এই অর্থ কার্যত নর্দমায় গেছে বলে মন্তব্য করা হয় জাতিসংঘ রিপোর্টে।

রিপোর্টে এক্ষেত্রে সবচেয় কঠোর সমালোচনা করা হয়েছে ভারতের। ইউনিসেফের একজন বিশেষজ্ঞ বলছেন, স্বাস্থ্য সম্মত টয়লেট সুবিধা তৈরির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকারের কৌশল যেখানে ব্যাপক সাফল্য অর্জন করেছে, এর বিপরীতে প্রতিবেশী ভারতের কৌশল ছিল খুবই দুর্বল।

বিশ্বে টয়লেট ব্যবহার না করা যত মানুষ আছে, তার বেশির ভাগই বাস করে ভারতে। আর এতে তৈরি হচ্ছে গুরুতরও স্বাস্থ্য সমস্যা। কিছুদিন আগেও ভারতের গ্রামীণ এলাকায় বসবাসকারী ৬৮ শতাংশ পরিবারের কোনো টয়লেট ছিল না। সরকার বিনা খরচে টয়লেট করে দিলেও তারা খোলা স্থানেই মলত্যাগ করে। শুধু গ্রামগুলোতেই নয়, দেশটির শহরগুলোতেও ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এমন অসংখ্য চিত্র।

বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহরের তালিকায় বছরজুড়েই নাম থাকে ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লি। তবে এর চেয়েও লজ্জাজনক এক তালিকায় এখনো ভারত শীর্ষে। যদিও সেই ইস্যু নিয়ে কথা বলতে সংকোচে ভোগে দিল্লি। তবে বিশ্বব্যাংক, জাতিসংঘসহ বিশ্বের যেকোনো আন্তর্জাতিক ফোরামেই ভারতের খোলা জায়গায় মলত্যাগের মতো অস্বাস্থ্যকর সমস্যাটি সবসময় আলোচনার কেন্দ্রে থাকে।

এই সমস্যা সমাধানে বছর বছর ঋণসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রকল্পে বরাদ্দ আসে কোটি কোটি ডলার। তবে লজ্জার এই রেকর্ড কোনোভাবেই দূর করতে পারছে না মোদী সরকার।

নরেন্দ্র মোদীর আমলে ভারত যখন বিশ্বমঞ্চে জায়গা করার মরিয়া চেষ্টা করছে, তখন খোলা জায়গায় মলত্যাগের এই রেকর্ড এবং স্বাস্থ্য ব্যবস্থা বারবারই উঠে আসছে। এই সংকট দূর করতে ইউনিসেফ বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে কোটি কোটি ডলার সহায়তা নিয়ে টয়লেট নির্মাণের বিশাল কর্মযজ্ঞ শুরু করে। স্বচ্ছ ভারত অভিযানের অংশ হিসেবে কয়েক কোটি টয়লেট তৈরিও করে সরকার। এই পরিস্থিতি থেকে উঠে আসতে বিশ্বব্যাংক থেকে টয়লেট নির্মাণের জন্য দেড় বিলিয়ন ডলারের ঋণ নেয় মোদী সরকার।

ভারতের এমন অস্বাস্থ্যকর সেনিটাইজেশন ব্যবস্থা দেশটির জাতীয় উন্নতিকে পিছু টেনে ধরছে। গ্রাম এবং শহরগুলোর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতেও নেই ঠিকঠাক মতো টয়লেট। দেশটির ২২ শতাংশ স্কুলে পর্যাপ্ত টয়লেট নেই। এমনকি ৫৮ ভাগ প্রি-প্রাইমারি স্কুলে কোনো ধরনেরই টয়লেটের ব্যবস্থা নেই।

ইউনিসেফ এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার রিপোর্টে বলা হয়, সাব সাহারান আফ্রিকার ২৬ টি দেশেও এখনো খোলা জায়গায় মলত্যাগের অভ্যাস বাড়ছে। সেখানে সবচেয়ে খারাপ অবস্থা নাইজেরিয়ার। দেশটির প্রায় চার কোটি মানুষ এখনো উন্মুক্ত জায়গায় মলত্যাগ করে।

মরিয়া মোদী সরকারের আমলে এ বছর ভারত শুরু করেছে ‘আমদের শৌচালয়, আমাদের সম্মান’ নামের প্রকল্প। দেশবাসীকে খোলা জায়গার পরিবর্তে টয়লেট ব্যবহারে উৎসাহি করতে পঞ্চায়েতের মাধ্যমে প্রতিটি গ্রামেই চলছে সচেতনতা বাড়ানোর উদ্যোগ।

এই পোস্টটি আপনার সামাজিক মিডিয়াতে শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও খবর

Address

Registered Office: 44/1 North Dhanmondi (5th Floor) Kalabagan, Dhaka- 1205, Bangladesh Email: kalabaganbarta@gmail.com / admin@kalabaganbarta.com Telephone: +88-02-58154100 Editorial Office: Karim Tower 44/7-A&B, West Panthapath, Kalabagan, Dhaka-1205

Correspondences

USA: Mainul Haq (Atlanta) Kolkata: Sunirmal Chakraborty Mobile: +91-8017854521 Ashim Kumar Ghosh Address: 3D K.P Roy Lane, Tollygunge Phari Kolkata- 700 033, WB, India Mobile: +91-9874891187                                                                                                           S. M. Ashikur Rahman (Technical Adviser)
Author: Masud Karim © All rights reserved 2020. Kalabaganbarta

Design & Developed By: RTD IT ZONE