রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫, ০৯:৫২ পূর্বাহ্ন

আকাশে হারিয়ে গেলেন প্রতুল মুখোপাধ্যায়

মাসুদ করিম
  • আপডেটের সময় : রবিবার, ১৬ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫
  • ৮৩ বার দর্শন

সঙ্গীতশিল্পী প্রতুল মুখোপাধ্যায় আর নেই, আকাশে হারিয়ে গেলেন তিনি। দীর্ঘ রোগভোগের পর গতকাল শনিবার ভোরে তাঁর গানের পঙ্‌ক্তি মেনেই যেন অচেনা সাগরে ডিঙ্গা ভাসালেন। বয়স হয়েছিল ৮৩ বছর। বছরের শুরু থেকেই অসুস্থতা কাবু করেছিল তাঁকে। তখন থেকে তিনি এসএসকেএম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। প্রতুল মুখোপাধ্যায়ের প্রয়াণে শোকস্তব্ধ বাংলা সঙ্গীত দুনিয়া। শিল্পীর প্রয়াণের খবর পেয়েই হাসপাতালে ছুটে যান মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস, মন্ত্রী ইন্দ্রনীল সেন। দুপুর ২টো থেকে বিকেল পৌনে ৫টা পর্যন্ত জনসাধারণের জন্য শিল্পীর দেহ রাখা ছিল রবীন্দ্রসদনে। বিকেল সোয়া ৪টায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় উপস্থিত হন। তিনি শিল্পীকে মাল্যদান করেন। সমবেদনা জানান প্রয়াত শিল্পীর স্ত্রী সর্বাণী মুখোপাধ্যায়কে। তাঁকে সব রকম সাহায্যদানের প্রতিশ্রুতিও দেন। রবীন্দ্রসদনে গান স্যালুটের পর তাঁর দেহ ফের তুলে দেওয়া হয় এসএসকেএম হাসাপাতাল কর্তৃপক্ষের হাতে। কারণ, প্রয়াত শিল্পী দেহদানের অঙ্গীকার করে গিয়েছিলেন।

আমার কনিষ্ঠ কন্যা ভক্ত আনান করিমের সাথে কলকাতার কফি হাউসের বই-চিত্রে প্রতুল মুখোপাধ্যায়

যে ভাবে সৃষ্টি হয়েছিল প্রতুলের আলোচিত তিন গান

‘আমি বাংলার গান গাই’ তার সবচেয়ে আলোচিত গানগুলোর একটি। দীর্ঘ ক্যারিয়ারে তার আরও অনেক গান আলোচিত হয়েছে। প্রতুল মুখোপাধ্যায়ের আলোচিত তিন গানের গল্প শোনা যাক তার নিজের ভাষ্যেই।

প্রতুলদার সাথে আমাদের শেষ ছবি
২০২২ এর ২৯ নভেম্বর কলকাতায় আন্তর্জাতিক বাংলা ভাষা পরিষদের এক অনুষ্ঠানে অতিথি হয়ে এসেছিলেন প্রতুল মুখোপাধ্যায় (২৯ নভেম্বর ২০২২)

‘আমি বাংলায় গান গাই’

১৪০০ সালের পয়লা বৈশাখ। শতককে স্বাগত জানানো হচ্ছে। কফি হাউসের একটা অনুষ্ঠানে গাওয়ার কথা ছিল। আমি অফিসের কাজ নিয়েই বসেছিলাম, একটা রিপোর্ট লিখতে হচ্ছিল। সেটা করতে করতেই মাথার মধ্যে গানের বিষয়টিও চলছিল। একটা জায়গায় কথাগুলো লিখছিলাম। প্রথম লাইনটা এল। একটা জিনিস আমাকে এ গানটা লিখতে সাহায্য করেছিল। নেহরুর কোনো লেখায় পড়েছিলাম, হি ড্রেমট ইন ইংলিশ।

এই কথা আমাকে তাড়িত করেছিল। স্পোকের বদলে করা হচ্ছে ‘ড্রেমট’। ওই একটা সুতো পেলাম, যেটা থেকে জন্ম নিল, আমি বাংলায় দেখি স্বপ্ন। সবকিছুই বাংলায় করি, এভাবেই গানটা এবার এগিয়ে গেল। হয়তো ওই লাইন না পড়লে গানটা এভাবে হতো না।

‘আমি এত বয়সে গাছকে বলছি’

একবার একটা অনুষ্ঠানে কবিতা আবৃত্তি চলছে। সেই অনুষ্ঠানে কবিতা সিংহ, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, অরুণ মিত্র এসেছিলেন। সবার কবিতা কেউ না কেউ পড়ছেন, শুধু অরুণ মিত্রের কবিতা কে পড়বেন, তা ঠিক হচ্ছে না, গদ্যের মতো তো! একজন অনুরোধ করলেন। আমি পড়লাম, আমার মতো করে। তার মধ্যে আবৃত্তির যে তথাকথিত ধরন, তা একেবারেই ছিল না। সেটা শুনে অরুণ মিত্র আমাকে ডাকলেন। বললেন, ‘আপনি আমার ওয়েভলেংথ কী করে বুঝলেন বলুন তো?’ সেদিন আমাকে বাড়িতে গিয়ে দেখা করতে বললেন।

এদিকে আমি তার বইটই সেভাবে কিছু পড়িনি। অমন স্কলার একজন মানুষ, তার কাছে বইপত্র না পড়ে যাব কী করে? তো, আমি আর যাইনি। পরে আবার বইমেলায় দেখা। বললেন, ‘তুমি তো আর এলেই না!’ বললাম, যাইনি বটে, তবে আপনার একটি কবিতাকে গানের রূপ দিয়েছি। তিনি আরও অবাক হয়ে জানতে চাইলেন, ‘আমার কবিতা! গান! কোন কবিতা?’ বললাম, ‘নিসর্গের বুকে’। শুনে উনি তো প্রায় হতবাক। আমি গান ধরলাম, ‘আমি এত বয়সে গাছকে বলছি…।’ অরুণদার চোখ তখন বিস্ফারিত। বললেন, ‘মিহির (চক্রবর্তী) তুমি প্রতুলকে নিয়ে শিগগির বাড়িতে এসো। আমি একটা রেকর্ড করে নেব। নইলে তো আর শুনতে পাব না!’

‘ডিঙ্গা ভাসাও’

আমাদের বাড়িতে বছর দশকের এক মেয়ে আসত। নাম নমিতা দলুই। আমি ওকে একটু পড়াশোনা শেখাতাম। ওর গলায় গান ছিল, আমার সঙ্গে গুনগুন করত। একদিন খেয়াল করলাম, ও নিজে একটা গান গাইছে। কথাগুলো ছিল এ রকম, ‘ডিঙ্গা বরণ করে মা সনেকা, তরি বরণ করে গো/ টাকা লিব, পয়সা লিব, লিব কুচিকান শাড়ি গো।’ এটা একটা যাত্রায় ও শুনেছে। বললাম, তুই আমাকে শেখাবি? ও বাকি গানটা আর জানত না। আমি তখন নতুন একটা গান তৈরি করলাম। লোকগানের আধারে অন্য একটা গান হয়ে উঠল। নিজের অজান্তেই আমি গানটিকে আন্তর্জাতিকতা দিয়ে ফেললাম। ‘পুবের আকাশ’ যেখান থেকে শুরু হচ্ছে, সেখানে একটা ওয়েস্টার্ন ছাপ এসে পড়ল। ফলে ভারতীয় সংগীত আর ওয়েস্টার্নের একটা মেলবন্ধন ঘটে গেল। এদিকে পুরোনো গানে টাকা-শাড়ি পাওয়ার বিষয় ছিল। এখানে বিষয় হলো, মিশন। গানের মাত্রাই বদলে গেল।

এই পোস্টটি আপনার সামাজিক মিডিয়াতে শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও খবর

Address

Registered Office: 44/1 North Dhanmondi (5th Floor) Kalabagan, Dhaka- 1205, Bangladesh Email: kalabaganbarta@gmail.com / admin@kalabaganbarta.com Telephone: +88-02-58154100 Editorial Office: Karim Tower 44/7-A&B, West Panthapath, Kalabagan, Dhaka-1205

Correspondences

USA: Mainul Haq (Atlanta) Kolkata: Sunirmal Chakraborty Mobile: +91-8017854521 Ashim Kumar Ghosh Address: 3D K.P Roy Lane, Tollygunge Phari Kolkata- 700 033, WB, India Mobile: +91-9874891187                                                                                                           S. M. Ashikur Rahman (Technical Adviser)
Author: Masud Karim © All rights reserved 2020. Kalabaganbarta

Design & Developed By: RTD IT ZONE