সংস্কার ও নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলো রয়েছে দোলাচলে। এক পক্ষ চাচ্ছে কম সংস্কার করে দ্রুত নির্বাচন অন্যপক্ষ চাচ্ছে সংস্কার করেই নির্বাচন। এটা নিয়ে দোটানায় রয়েছে সরকার। এছাড়া সাম্প্রতিককালে একাধিক বার ডিসেম্বরে নির্বাচনে দেওয়া কথা বলেছেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তার কথার ওপর ভরসা রাখতে পারছেন রাজনৈতিক দলগুলো।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, একটা ক্রান্তিকালে আছি আমরা। গোটা দেশের মানুষ গণতান্ত্রিক পথে ফিরতে চায়। সন্দেহ তৈরি হয়েছে, সরকার আদৌ নির্বাচন দিতে আন্তরিক কিনা। মির্জা ফখরুল বলেন, ফ্যাসিবাদের কেউ কেউ ক্ষমা চেয়ে রাজনীতি করতে পারবে, স্থানীয় সরকার উপদেষ্টার এমন মন্তব্য গ্রহণযোগ্য নয়। ‘সরকারে থেকে কেউ রাজনৈতিক দল গঠন করলে এ দেশের মানুষ তা মেনে নেবে না।’
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘সরকারে থেকে কেউ রাজনৈতিক দল গঠন করলে এ দেশের মানুষ তা মেনে নেবে না।’ অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেছেন, ‘তা না হলে জনগণের যে আস্থা আপনাদের ওপর আছে তা আর থাকবে না।’
স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার সাম্প্রতিক একটি বক্তব্যকে উদ্বেগজনক উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেছেন, সরকারের একজন উপদেষ্টা বলেছিলেন, “ফ্যাসিস্টদের মধ্যে কেউ যদি মাফ চেয়ে নির্বাচনে অংশ নিতে চায়, তাহলে তারা অংশ নিতে পারবে”। এ থেকেই বোঝা যায়, নিজেদের স্বার্থেই তারা এখন ফ্যাসিস্টদের জায়গা করে দিতে চাচ্ছে। স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা যেটা বলেছেন, ইট ইজ ডেঞ্জারাস। তার মানে কি আমরা এটা মনে করব যে সরকারে থেকে নিজেদের দল গোছানোর জন্য তারা বিভিন্ন রকম কৌশল নিচ্ছেন। সেই কৌশল নিলে আমরা তা হতে দেব না, এ দেশের মানুষ তা হতে দেবে না।’
এ বিষয়ে জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মো. তাহের গত শনিবার গণমাধ্যমকে বলেছেন, ‘সংস্কার কোনটা সংক্ষিপ্ত, কোনটা বিস্তৃত—সেটা ডিসাইড (ঠিক) করবে কে? তাহলে তো এটা ঠিক করার জন্য আরেকটা কমিশন করতে হবে। আমরা মনে করি, একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রয়োজনীয় সংস্কারগুলো হওয়া দরকার। তারপর নির্বাচনের প্রক্রিয়াটা ঠিক করে নির্বাচনের প্রস্তুতির দিকে অগ্রসর হওয়া দরকার। কিন্তু এর গতি স্লো (ধীর), গতি আরও দ্রুত হওয়া উচিত।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী গণমাধ্যমকে বলেছেন, বিএনপি বড় সংস্কারে যাচ্ছে না। বড় সংস্কার হবে সংসদে। ছোটখাটো নির্বাচনী সংস্কার হতে পারে। যেসব বিষয়ে ঐকমত্য হয়, হবে। আর যেগুলোতে ঐকমত্য হবে না, সেগুলো নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলো জনগণের ম্যান্ডেট নিতে নির্বাচনে যাবে। জনগণ যাকে ম্যান্ডেট দেবে, সে সংস্কার করবে। তিনি বলেন, ‘আমরা মনে করি, নির্বাচন-সংশ্লিষ্ট সংস্কারে এক-দেড় মাসের বেশি লাগার কথা নয়। সে হিসেবে আগামী জুন-জুলাইতে নির্বাচন হতে পারে।’
নির্বাচন নিয়ে তার এমন বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে দেশের প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপির পক্ষ থেকে হতাশা ব্যক্ত করা হয়েছে। বিএনপি অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই নির্বাচন নিয়ে একটি পরিষ্কার রোডম্যাপ ঘোষণার আহ্বান জানিয়ে আসছে। তাদের বক্তব্য সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারগুলো যদি তিন মাসের প্রস্তুতিতে নির্বাচন করতে পারে এই সরকার কেন অতিরিক্ত সময় নেবে?
বিএনপি নেতা তারেক রহমানের বিরুদ্ধে করা প্রধান মামলাগুলো থেকে তাকে খালাস দেওয়া হলেও তিনি কেন দেশে আসছেন না বা আসতে পারছেন না, জনমনে সংশয় তৈরি হয়েছে। প্রশ্ন উঠছে। এই প্রশ্নের সরাসরি উত্তর পাওয়া না গেলেও, অনুমান করা কঠিন নয়। প্রায় ১৬ বছর ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপির ওপর দিয়ে অনেক বিপর্যয় গেছে। এমতাবস্থায় ক্ষমতার বাইরে যত দিন থাকবে তাদের জনপ্রিয়তা ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
ইতোমধ্যে এই দলের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে দখল, চাঁদাবাজি, ক্ষমতাবাজির অভিযোগ উঠছে। এ ক্ষেত্রে মূল নেতৃত্বের ইতিবাচক ভূমিকা রাখলেও স্থানীয় পর্যায়ে তা সামান্যই অনুসরণ করা হচ্ছে।
দেশ ঠিক পথে যাচ্ছে বলে মনে করেন ৭১ শতাংশ মানুষ। আর ৮১ শতাংশ মানুষ চান সংস্কার কার্যক্রম শেষ করতে যত দিন প্রয়োজন, তত দিন ক্ষমতায় থাকুক অন্তর্বর্তী সরকার। ‘পালস সার্ভে ২০২৪: জনগণের মতামত, অভিজ্ঞতা ও প্রত্যাশা’ শীর্ষক এক জনমত জরিপে এই চিত্র উঠে এসেছে।
ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (বিআইজিডি) জরিপটি পরিচালনা করে। ১৫ সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মোজাফফর আহমেদ চৌধুরী মিলনায়তনে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের এই ইনস্টিটিউটের জরিপের ফলাফল উপস্থাপন করা হয়। একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক গণতন্ত্র দিবস উপলক্ষে ‘অভ্যুত্থানের চল্লিশ দিন: মানুষ কী ভাবছে’ শিরোনামে আলোচনা সভারও আয়োজন করা হয়।
Design & Developed By: RTD IT ZONE
Leave a Reply