পুরো শরীরে আঘাতের চিহ্ন। কোনো আঘাত সতেজ, কোনোটি পুরোনো। শরীর ফুলে গেছে। আট বছরের শিশু গৃহকর্মীর নিঃসাড় দেহ পড়ে আছে বিছানায়, যেন যন্ত্রণায় কাতর হয়ে সে ঘুমিয়ে পড়েছে। মুখ দিয়ে বের হয়ে এসেছে ফেনা।
লোমহর্ষক এ হত্যাকাণ্ড ঘটেছে রাজধানীর কলাবাগানের সেন্ট্রাল রোডে। গত শনিবার তার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। প্রথমে শিশুটির পরিচয় জানা যায়নি। হত্যার পর ওই বাসার গৃহকর্ত্রী সাথী পারভিন পালিয়ে গেছে।
ফেসবুকে তার প্রোফাইলে পরিচয় হিসেবে ‘ইঞ্জিনিয়ার সাথী’ লেখা রয়েছে। সে ‘বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড’ কেন্দ্রীয় কমিটির সহসাংগঠনিক সম্পাদক বলে নিজেকে পরিচয় দিয়েছে। গ্রামের বাড়ি পাবনায়। প্রোফাইলে সে ‘বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতা পরিষদ কেন্দ্রে’ সাংগঠনিক সম্পাদক পদে কাজ করছে বলে উল্লেখ রয়েছে। ওই গৃহকর্মীর মরদেহ উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) মর্গে রেখেছে কলাবাগান থানা পুলিশ। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জানতে পেরেছে, শিশুটির মা আছেন। বাবা আরেকটি বিয়ে করে পৃথকভাবে থাকেন।
রমনা বিভাগের নিউমার্কেট জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) রেফাতুল ইসলাম গণমাধ্যমকে জানান, একটি তথ্যের ভিত্তিতে কলাবাগান সেন্ট্রাল রোডের ওই বাসায় উদ্ধার অভিযান শুরু করি। এ সময় ওই ভবনের প্রতিটি ফ্লোরের সব বাসায় কোনো সমস্যা আছে কিনা জানতে চাই। কিন্তু একটি ফ্ল্যাটে বারবার কলিং বেল বাজানো ও ডাকাডাকি করে না খোলায় এক পর্যায়ে দরজা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে দেখা যায়, বিছানায় একটি শিশুর মৃতদেহ পড়ে আছে। শিশুটির মুখে ফেনা ছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে– তাকে বালিশচাপা দিয়ে হত্যা করা হয়েছে।
ভবনের অন্য ফ্ল্যাটের বাসিন্দাদের বরাত দিয়ে রেফাতুল জানান, সাথী পারভিন নিজেকে সার্ভেয়ার (জরিপকারক) এবং রাজনৈতিক কর্মী পরিচয় দিত। একমাত্র মেয়েকে নিয়ে সে বাসাটিতে থাকত। তিন বছর আগে স্বামীর সঙ্গে বিচ্ছেদের পর থেকে সে সেখানে থাকে। ভবনের ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরায় (সিসিটিভি) দেখা গেছে, শুক্রবার সকাল ৯টায় সাথী তাঁর মেয়েকে নিয়ে বাসা থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে। এর পর আর তারা ফেরেনি। এসি জানান, শিশুটির পরিচয় জানতে এবং গৃহকর্ত্রী ও তার মেয়ের খোঁজে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা মাঠে নেমেছেন।
শিশুটির মরদেহ বালিশে মাথা রাখা অবস্থায় পাওয়া গেছে। ওই ছবিতে দেখা যায়, তার মুখে ও দুই হাতে অসংখ্য আগের কাটা ও আঘাতের চিহ্ন। সে নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়েছে, এমনটা বোঝা যাচ্ছে।
কলাবাগান থানার পরিদর্শক (তদন্ত) বিজন কুমার দাস কলাবাগান বার্তাকে জানান, শিশুটির লাশ উদ্ধার করে ঢামেক মর্গে রাখা হয়েছে। মামলা প্রক্রিয়াধীন আছে।
অপরদিকে নিহত গৃহকর্মীর পরিচয় মিলেছে। তার নাম হেনা (১০)। বাবার নাম হক মিয়া। ময়মনসিংহ মুক্তাগাছায় হেনার গ্রামের বাড়ি। বাবা ও মা দুজনই মৃত।
গত তিন বছর আগে ময়মনসিংহে একটি ট্রেনিং করতে গিয়ে হেনাকে স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে ঢাকায় নিয়ে আসেন গৃহকর্ত্রী সাথী পারভীন।
আজ সোমবার কলাবাগান থানার ওসি মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম এ তথ্য জানিয়েছেন। তিনি বলেন, আমরা তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় ও গৃহকর্ত্রী সাথীর স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে হেনার পরিচয় নিশ্চিত হয়েছি। এতিম হেনাকে তিন বছর আগে ঢাকায় নিয়ে আসেন সাথী।
ওসি আরও বলেন, মৃত হেনার মামা-চাচাদের ডাকা হয়েছে। হেনার স্বজনরা ঢাকায় এসেছেন। হেনার মরদেহের ময়না তদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। আজ মরদেহ হস্তান্তর করা হবে। অভিযুক্ত গৃহকর্ত্রীর অবস্থান শনাক্ত করা হয়েছে। তাকে নজরদারিতে রাখা হয়েছে। যে কোনো সময় গ্রেপ্তার করা হবে।
Design & Developed By: RTD IT ZONE
Leave a Reply