কাতার পশ্চিম এশিয়ার ছোট্ট একটি মরুময় দেশ। দেশটির এক দিকে সৌদি আরব এবং অবশিষ্ট অংশ পারস্য উপসাগর দ্বারা বেষ্টিত। রাজধানী ‘দোহা’য় দেশটির ৪০% ভাগ মানুষের আবাসস্থল। আমাদের মতো দীর্ঘদিন পরাধীনে থেকে ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা লাভ করে- যখন এই দেশটির অবস্থা প্রায় আমাদের মতোই ছিল বা আরো খারাপও ছিল বলা যায়! সমূদ্র থেকে মাছ ধরা আর মুক্তা শিকারই ছিল দেশটির মানুষজনের একমাত্র সম্বল!
অথচ গত বায়ান্ন বছরে মরুভূমির দেশ কাতার কোথায় আর আমরা কোথায়? বিশ্বে মাথা পিছু আয়ে কাতারের অবস্থান তৃতীয় বা চতুর্থে! গ্যাস ও তেলের প্রাচুর্য্য আর পরিকল্পিত উন্নয়নে দেশটির অর্থনীতি এখন রমরমা। ইতিমধ্যে চমক দেখিয়ে এককভাবে আয়োজন করে ফেলেছে “বিশ্বকাপ ফুটবল-২০২০”। অনুরুপভাবে দেশটি ইতিপূর্বে আয়োজন করে ফেলেছে ‘এএফসি এশিয়ান কাপ’, ‘এশিয়ান কাপস’ ইত্যাদির মতো আরো অনেক বড় বড় গেমসের আসর। BBC ও CNN এর পরে আরেক বিশ্বখ্যাত মিডিয়া AL JAZERA এর অবস্থানও এই দেশটিতে। বিশ্বের নামী- দামী প্রায় সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান/বিশ্ববিদ্যালয় এবং হাসপাতালের শাখাও প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এখানে অর্থাৎ এক কথায় কাতার এখন শিক্ষা-স্বাস্থ্য ও ক্রীড়াসহ অন্যান্য অনেক ক্ষেত্রেই একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ দেশ!!
লক্ষণীয় যে, কাতার বরাবরই উপসাগরীয় শাসকগোষ্ঠী “থানি পরিবার” দ্বারা শাসিত হয়ে চলেছে। বর্তমানে কাতারের আমির হলো- থানি পরিবারের সুযোগ্য ও সুশিক্ষিত সন্তান ‘তামিম বিন হামিদ আল থানি’ নামীয় মধ্যবয়স্ক একজন যুবক। তিনি দেশটির পরিকল্পনা, উন্নয়ন ও পরিচালনা করছেন একটি বিশেষজ্ঞ Think- Tank (Supreme Committee for Delivery & Legacy) এর দ্বারা- যাতে রয়েছে বিশ্বের অনেক দেশের নামী-দামী বিশেষজ্ঞ, পরিকল্পনাবিদ, স্থপতি ও প্রকৌশলীরা। তন্মধ্যে রয়েছে- আমাদেরই অজানা বাংলাদেশের কৃতি সন্তান ড. হাবিবুর রহমান ও খন্দকার রহমান বাবু নামের দু’জন বিশেষজ্ঞ (যারা দু’জনই চট্রগ্রামের সন্তান)। সংবাদে প্রকাশ- এই জ্ঞানী- গুণী প্রবাসী বাংলাদেশীদেরকে কখনো বাংলাদেশ তার উন্নয়নে ব্যবহার করতে পারেননি!!
এঁদের সকলে মিলে- কাতারকে এখন পরিণত করেছে বিশ্বের সবচেয়ে সুন্দর একটি দেশে। উপরে বালু ও মরুভূমি আর নিচে ও আশপাশে সমূদ্রে ঘেরা এই ছোট্ট দেশটিতে আধুনিক উন্নয়নের যেমন MRT, LRT ও BRT এবং আকাশছোঁয়া ভবনে ঠাসা। দেশটির ‘Qutar Airways’ও এখন বিশ্বখ্যাত আকাশ পরিবহন- যেটি এখন বিশ্বের ৬টি মহাদেশে বিস্তিত। শুধু তাই নয়- সমগ্র বিশ্বে কাতারই এখন বসবাসের জন্য ‘সবচেয়ে নিরাপদ’ দেশ বলে পরিচিত। এজন্য হয়ত এর জনসংখ্যার উল্লেখযোগ্যই (প্রায় ৫০%) হলো বিদেশী বা প্রবাসীরা। তন্মধ্যে বাংলাদেশী মানুষের (দক্ষ ও অদক্ষ মিলে) সংখ্যা প্রায় তিন লাখ মতো।
গতবছর বিশ্বকাপ ফুটবলের আয়োজনে কাতার দেশটিতে স্টেডিয়াম, হোটেল ও পরিবেশগত উন্নয়নে খরচ করেছে ২৩০ বিলিয়ন ডলারের বেশী- যেটি টাকার অংকে হিসেব করলে দেখা যায় যে IMF থেকে সামাণ্য কিছু ঋণ (৪.৫ বিলিয়ন ডলার) পাওয়ার জন্য আমাদের কতই-না দেন দরবার করতে হচ্ছে!! আমরা কী IMF, World Bank, EU, China, JICA, BRICKS ইত্যাদি দেশ/সংস্থা থেকে ঋণ না নিয়ে মধ্যপ্রাচ্যের এসব দেশ থেকে ঋণ বা সাহার্য্য- সহযোগিতা নিতে পারিনা? আমরা কী বিশেষজ্ঞদের নিয়ে Think-Tank গঠন করে দেশের উন্নয়ন সাধন করতে পারিনা?
লেখক প্রকৌশলী, পরকল্পনাবিদ, সাবেক প্রধান প্রকৌশলী, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)
Design & Developed By: RTD IT ZONE
Leave a Reply