‘নান্দনিক চলচ্চিত্র, মননশীল দর্শক, আলোকিত সমাজ’- এই স্লোগানে শনিবার (২০ জানুয়ারি) শুরু হয়েছে ২২তম ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের। রেইনবো চলচ্চিত্র সংসদ আয়োজিত এই উৎসব চলবে আগামী ২৮ জানুয়ারি পর্যন্ত।
বাংলাদেশসহ ৭৪টি দেশের ২৫০টি সিনেমা নিয়ে শুরু হচ্ছে ৯ দিনব্যাপী এই উৎসব।
এবারের উৎসবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ২৫০টি চলচ্চিত্রের প্রদর্শনী হবে। ২৮ জানুয়ারি পর্যন্ত ছয়টি মিলনায়তনে সিনেমাগুলো প্রদর্শিত হবে। এগুলো সবাই বিনামূল্যে উপভোগ করতে পারবেন। জাতীয় জাদুঘর, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি, ধানমন্ডির আলিয়ঁস ফ্রঁসেজে সিনেমাগুলো দেখানো হবে। রেইনবো ফিল্ম সোসাইটি উৎসবটির আয়োজন করেছে।
গত শনিবার জাতীয় জাদুঘরের বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব মিলনায়তনে অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী উৎসবের উদ্বোধন করেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশের দর্শকরা অনেক অগ্রসর। ছবির দুনিয়ায় কী হচ্ছে, সেসবের খবর তারা রাখেন। পৃথিবীর বড় বড় উৎসবে কী হচ্ছে, সে খবরও তারা রাখেন। এ উৎসবে অনেক দেশের সিনেমা রয়েছে, যা তাদের আনন্দ দেবে। বিভিন্ন দেশ থেকে যারা এ উৎসবে এসেছেন, তাদের ঢাকা শহর ও এর আশপাশ ঘুরে দেখার এবং স্থানীয় খাবারের স্বাদ উপভোগ করার আহ্বান জানান অর্থমন্ত্রী।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন উপমহাদেশের খ্যাতিমান অভিনেত্রী শর্মিলা ঠাকুর, বেসামরিক বিমান পরিবহণ ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব মোকাম্মেল হোসেন এবং ঢাকার চীনা দূতাবাসের সাংস্কৃতিক উপদেষ্টা ইউ লিওয়েন। উপস্থিত ছিলেন উৎসবের প্রধান পৃষ্ঠপোষক সংসদ-সদস্য শাহরিয়ার আলম, উৎসব পরিচালক আহমেদ মুজতবা জামাল প্রমুখ। অনুষ্ঠানে শর্মিলা ঠাকুর বলেন, যোগাযোগের জন্য ফিল্মের চেয়ে শক্তিশালী শিল্প হয় না। আমি ইরানি চলচ্চিত্র ও ইরানের সংস্কৃতি দারুণ পছন্দ করি। ফিল্ম নিয়ে আয়োজিত এ উৎসবে অনেক কথা হবে, অনেক বোঝাপড়া হবে। শাহরিয়ার আলম বলেন, এটি আমাদের ২২তম আয়োজন। এবার আমরা ২৫২টি চলচ্চিত্র দেখাতে পারছি। আমরা আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলতে পারছি-আমরা ধীরে ধীরে উন্নতি করছি। তবে ছবিগুলো প্রেক্ষাগৃহে নেওয়া না গেলে বেশি দর্শক পাওয়া যাবে না। আমাদের সেই উপায় খুঁজে বের করতে হবে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর মিলনায়তনের বড় পর্দায় দেখানো হয়-ইরানি পরিচালক মুর্তজা আতশ জমজমের ছবি ‘ফেরেশতে’। প্রদর্শনীর আগে মঞ্চে উঠে দর্শকদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন নির্মাতা ও অভিনয়শিল্পীরা। এ উৎসবের অন্যতম আকর্ষণ মাস্টার ক্লাস। মাস্টার ক্লাস নেবেন ইরানি সিনেমার অন্যতম জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব ‘চিলড্রেন অব হেভেন’, ‘বারান’ এবং ‘সং অব স্প্যারো’র মতো বিশ্বনন্দিত সিনেমার পরিচালক মাজিদ মাজিদি। এছাড়া মাস্টার ক্লাসের দুটি ভিন্ন সেশনে কথা বলবেন চীনের সাংহাই ফিল্ম অ্যাসোসিয়েশনের ডেপুটি চেয়ার শি চুয়ান এবং ভারতের নির্মাতা, অভিনেতা ও গায়ক অঞ্জন দত্ত।
উৎসবে ১০টি বিভাগে প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হচ্ছে। এগুলো হলো-এশিয়ান প্রতিযোগিতা বিভাগ, রেট্রোস্পেকটিভ বিভাগ, ট্রিবিউট, বাংলাদেশ প্যানারোমা, ওয়াইড অ্যাঙ্গেল, সিনেমা অব দ্য ওয়ার্ল্ড, চিল্ড্রেন্স ফিল্ম, স্পিরিচুয়াল ফিল্মস, শর্ট অ্যান্ড ইনডিপেনডেন্ট ফিল্ম এবং উইমেন্স ফিল্ম বিভাগ।
উৎসবকালে দেশি-বিদেশি চলচ্চিত্রগুলো প্রদর্শিত হবে আলিয়ঁস ফ্রঁসেজ, বাংলাদেশে শিল্পকলা একাডেমি, জাতীয় জাদুঘর অডিটরিয়াম ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একাডেমির মিলনায়তনে। এসব মিলনায়তনের সব প্রদর্শনী সবাই বিনামূল্যে উপভোগ করতে পারবেন। আসন সংখ্যা সীমিত থাকায় ‘আগে এলে আগে দেখবেন’ ভিত্তিতে আসন বণ্টন করা হবে। তবে উদ্বোধনী ও সমাপনী অনুষ্ঠানটি উপভোগ করবেন কেবল আমন্ত্রিত অতিথিরা।
উৎসবে সহযোগিতা করছে বাংলাদেশ সরকারের অর্থ মন্ত্রণালয়, তথ্য মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়, ঢাকাস্থ চীনা দূতাবাস ও সামিট গ্রুপ।
নায়করাজ রাজ্জাক
দর্শকদের অনেকেই স্বাধীন বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের প্রখ্যাত অভিনেতা নায়করাজ রাজ্জাককে স্মরণ না করায় উদ্যোক্তাদের সমালোচনা করেন। অথচ বাংলা চলচ্চিত্রকে এক বিশেষ উচ্চতায় নিয়ে গেছেন এই অভিনেতা।
প্রসঙ্গত, ১৯৯২ সাল থেকে নিয়মিত এই চলচ্চিত্র উৎসবের আয়োজন করে আসছে রেইনবো ফিল্ম সোসাইটি। এই সোসাইটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ১৯৭৭ সালে।
Design & Developed By: RTD IT ZONE
Leave a Reply