সোমবার, ০৬ মে ২০২৪, ১২:০০ পূর্বাহ্ন

জাতীয় কবিতা উৎসব শুরু, একাত্তরের গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি দাবি

অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেটের সময় : শুক্রবার, ২ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪
  • ৭১ বার দর্শন

যুদ্ধ-গণহত্যাবিরোধী আহ্বানে গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার চত্বরে শুরু হয়েছে দুই দিনব্যাপী জাতীয় কবিতা উৎসব–২০২৪। জাতীয় কবিতা পরিষদ আয়োজিত ৩৬তম এই উৎসবের স্লোগান—‘যুদ্ধ গণহত্যা সহে না কবিতা’। উৎসবে কবিতাপাঠসহ নানা আয়োজনে এই স্লোগানকে মূর্ত করে তোলা হবে বলে উদ্বোধনী পর্বে জানান আয়োজকেরা। উৎসবের শুরুতে তাঁরা একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধকালের গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি দাবি করেছেন।

সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার চত্বরে জাতীয় সংগীতের সঙ্গে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে কবিতা উৎসবের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। এ সময় কবিতা পরিষদের সভাপতি মুহাম্মদ সামাদ ও সাধারণ সম্পাদক তারিক সুজাতের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন কথাসাহিত্যিক আনিসুল হক।

এরপর গ্রন্থাগার চত্বরে স্থাপিত মঞ্চে সমবেত কণ্ঠে একুশের গান ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’ ও উৎসবসংগীত ‘যুদ্ধ গণহত্যা সহে না কবিতা’ পরিবেশিত হয়। পরে গত এক বছরে প্রয়াত হওয়া বিশিষ্ট ব্যক্তিদের স্মরণে শোকপ্রস্তাব পাঠ করেন কবিতা পরিষদের নেতা আমিনুর রহমান সুলতান। ঘোষণাপত্র পাঠ করেন পরিষদের আরেক নেতা আসলাম সানী।  শিহাব সরকার উৎসবের আহ্বায়কের ভাষণ দেন। তাঁর পরে কবিতা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক তারিক সুজাত বক্তব্য দেন। তিনি বলেন, কবিরা চিরকালই শান্তির পক্ষে। এবারের জাতীয় কবিতা উৎসবে নানা আয়োজনে ‘যুদ্ধ গণহত্যা সহে না কবিতা’ স্লোগানকে মূর্ত করে তোলা হবে।

সশরীর উপস্থিত থেকে উৎসব উদ্বোধন করার কথা ছিল প্রখ্যাত কবি নির্মলেন্দু গুণের। কিন্তু অসুস্থতার কারণে তিনি আসতে পারেননি। নির্মলেন্দু গুণের ধারণকৃত ভিডিও চিত্র পর্দায় দেখানো হয়। তিনি বলেন, দেশের জীবিত কবিদের মধ্যে বয়সের দিক থেকে বর্তমানে তাঁর অবস্থান দ্বিতীয়। শারীরিকভাবে সুস্থ না থাকায় এই ভিডিও চিত্র।

কবিতা পরিষদের এক কর্মসূচিতে প্রখ্যাত চিত্রশিল্পী কামরুল হাসানের মৃত্যুর বিয়োগান্ত ঘটনা উল্লেখ করেন নির্মলেন্দু গুণ। তিনি বলেন, ৩৬তম জাতীয় কবিতা উৎসবে ভিন্ন ভাষার কবিরাও এসে যুক্ত হয়েছেন। ফলে এটা শুধু বাংলা ভাষার কবিদের উৎসব নয়; একে বিশ্ব কবিতা উৎসব হিসেবেও ভাবা যায়। উৎসবের উদ্বোধক হিসেবে মনোনীত করায় তিনি সম্মানিত বোধ করছেন। কবিতা পরিষদের সঙ্গে যুক্ত যেসব কবি লোকান্তরিত হয়েছেন, তাঁদের প্রতি তিনি গভীর শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করছেন।

জাতীয় কবিতা পরিষদ গঠনের প্রেক্ষাপট তুলে ধরেন নির্মলেন্দু গুণ। তিনি বলেন, এরশাদের বিরুদ্ধে জনমত সৃষ্টি ও সে সময় চলমান গণতান্ত্রিক আন্দোলনের অংশ হিসেবে কবিতা পরিষদ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। কবিদের এরশাদের দলভুক্ত হওয়া থেকে নিবৃত্ত করার জন্য। পরিষদের সঙ্গে অনেক তরুণ কবি যুক্ত ছিলেন। পরিষদ গঠিত হওয়ার পর শামসুর রাহমানসহ অগ্রজ কবিদের তাঁরা এই সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত করতে পেরেছিলেন। কবি সুফিয়া কামাল এর নেতৃত্ব দিয়েছেন। একপর্যায়ে ১৯৯০ সালে তিনি পরিষদের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব নেন। শামসুর রাহমান তখন সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন। কবিতা উৎসবে আসেননি—এমন কবি বাংলাভাষীদের মধ্যে কম আছেন। এভাবে কবিতা পরিষদ দেশের জাতীয় সংস্কৃতি চর্চার একটা ক্ষেত্র হয়ে দাঁড়ায়।

তবে কবিতা পরিষদের উদ্যোক্তাদের অন্যতম কবি মোহন রায়হানের নাম কেউ উচ্চারণ না করায় উপস্থিত কবি এবং দর্শকদের কেউ কেউ ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

উৎসবে যোগ দিতে আসা ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কবি ও পশ্চিমবঙ্গ কবিতা আকাদেমির সভাপতি সুবোধ সরকার বলেন, কলকাতার কবিবন্ধুসহ বাংলা ভাষার পক্ষ থেকে সবার প্রতি তাঁর ভালোবাসা। এই ঐতিহাসিক উৎসবের মঞ্চে দাঁড়াতে পেরে তাঁর ভালো লাগছে। তিনি সম্মানিত বোধ করছেন। এই উৎসব গোটা উপমহাদেশে সাড়া ফেলেছে। কবিতা শেষ পর্যন্ত কোনো সীমান্ত মানে না। কবিতা একখণ্ড মেঘ। এই মেঘকে আটকানো যায় না। যে মানুষটা ব্যক্তির ভেতরে নিভৃতে বাস করে, সে-ই তো কবিতা। জাতীয় কবিতা উৎসব ৩৬ বছরে পা দিল। এত দীর্ঘ সময় ধরে এত বড় উৎসব সম্ভবত উপমহাদেশের আর কোথাও হয় না।

বক্তব্যের পর নিজের লেখা ‘মণিপুরের মা’ কবিতাটি আবৃত্তি করেন সুবোধ সরকার। অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে ঢাকায় নিযুক্ত ফিলিপাইনের রাষ্ট্রদূত ও কবি লিও টিটো এল অসান জুনিয়র, ঢাকা-৮ আসনের সংসদ সদস্য আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিমসহ কবিতা পরিষদ ও সমমনা বিভিন্ন সংগঠনের নেতা-কর্মীরা অংশ নেন। ভারতসহ বিভিন্ন দেশের কবিরা কবিতা উৎসবে যুক্ত হয়েছেন।

উৎসবস্থলে আজ রাত নয়টা পর্যন্ত চলবে কবিতাপাঠ। আজ শুক্রবার বেলা ১১টায় ‘যুদ্ধ গণহত্যা সহে না কবিতা’ শীর্ষক সেমিনারের মধ্য দিয়ে দিনের আয়োজন শুরু হবে। বিকেল সাড়ে পাঁচটায় জাতীয় কবিতা পরিষদ পুরস্কারপ্রাপ্ত কবির নাম ঘোষণা করা হবে। রাত আটটা পর্যন্ত কবিতাপাঠ চলবে। পরে কবিতার গানের মধ্য দিয়ে উৎসবের পর্দা নামবে।

এই পোস্টটি আপনার সামাজিক মিডিয়াতে শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও খবর

Address

Registered Office: 44/1 North Dhanmondi (5th Floor) Kalabagan, Dhaka- 1205, Bangladesh Email: kalabaganbarta@gmail.com / admin@kalabaganbarta.com Telephone: +88-02-58154100 Editorial Office: Karim Tower 44/7-A&B, West Panthapath, Kalabagan, Dhaka-1205

Correspondences

USA: Mainul Haq (Atlanta) Kolkata: Sunirmal Chakraborty Mobile: +91-8017854521 Ashim Kumar Ghosh Address: 3D K.P Roy Lane, Tollygunge Phari Kolkata- 700 033, WB, India Mobile: +91-9874891187                                                                                                           S. M. Ashikur Rahman (Technical Adviser)
Author: Masud Karim © All rights reserved 2020. Kalabaganbarta

Design & Developed By: RTD IT ZONE