রবিবার, ০৫ মে ২০২৪, ০৬:১৩ অপরাহ্ন

কাশ্মীর ভ্রমণ: দর্শনীয় স্থান ঘুরতে যাওয়ার তথ্য

বাসনাত বাহাদুর (সিনিয়র রিপোর্টার)
  • আপডেটের সময় : রবিবার, ৩ মার্চ, ২০২৪
  • ৮১ বার দর্শন

বাংলাদেশ থেকে কাশ্মীরে যাওয়ার উপায়

ভারতের কাশ্মীর ঘুরতে যাওয়ার জন্য বাংলাদেশিদের ভারতের ট্যুরিস্ট ভিসা লাগবে। এর জন্য ভিসা আবেদনকারীর পাসপোর্টটি আনুমানিক প্রস্থানের দিন থেকে ন্যূনতম ছয় মাসের মেয়াদ থাকতে হবে। সেই সঙ্গে পাসপোর্ট বইয়ে কমপক্ষে দুটি পৃষ্ঠা খালি থাকতে হবে। এই পাসপোর্টের পাশাপাশি জাতীয় পরিচয়পত্র এবং ড্রাইভিং লাইসেন্সও সঙ্গে রাখা যেতে পারে তবে তা বাধ্যতামূলক নয়।

কাশ্মীরে গিয়ে কোথায় থাকা হবে তার একটা প্রমাণপত্র দেখাতে হবে। হোটেলে থাকার ক্ষেত্রে বুকিংয়ের কাগজপত্র প্রিন্ট করে নিতে হবে। বর্তমানে বিভিন্ন অনলাইন পোর্টালের মাধ্যমে হোটেল কিংবা গেস্ট হাউস বুকিং করা যেতে পারে। তবে তার জন্য প্রয়োজন ইন্টারন্যাশনাল ক্রেডিট কার্ড।

ভারতে প্রবেশ ও ত্যাগ করার সময়টা নিশ্চিত করতে হবে। এক্ষেত্রে বিমান বা ট্রেন যেভাবেই যাওয়া হোক না কেন, আসা-যাওয়ার টিকেট দেখাতে হবে।

সর্বোপরি, কাশ্মীরে যাবতীয় খরচ চালানোর জন্য যথেষ্ট ভ্রমণ তহবিল আছে কিনা তার একটা প্রমাণ দেখাতে হবে।

রাজধানী ঢাকা থেকে কাশ্মীর যাতায়াত

জম্মু-কাশ্মীরের সঙ্গে সংযোগ আছে ভারতের দিল্লী অথবা চণ্ডিগড়ের। ঢাকা থেকে আকাশপথে সরাসরি এই রাজ্যগুলোতে পৌঁছা যায়। স্থলপথে যেতে হলে রেলপথে বা বাসে কলকাতা দিয়ে ভারতে প্রবেশ করতে হবে।

সেখানকার জনপ্রিয় স্থানগুলো বেড়াতে হলে প্রথমে যে পর্যন্ত যেতে হবে সে জায়গাটি হচ্ছে শ্রীনগর। দিল্লী থেকে শ্রীনগর বিমানে যেতে সময় লাগে সর্বোচ্চ ১ ঘণ্টা ৪০ মিনিট।  এখানে খরচ হতে পারে প্রায় ৩০ হাজার টাকা। তবে বিমানের টিকেট যদি আগে থেকেই কেনা থাকে সেক্ষেত্রে অপেক্ষাকৃত কমমূল্যে টিকেট পাওয়া যায়।

রেলপথে যাওয়ার জন্য ঢাকা থেকে কলকাতার হাওড়ার ট্রেন আছে যেখানে শ্রেণীভেদে জনপ্রতি ভাড়া ২ হাজার ৫৯৯ থেকে ৩ হাজার ৮৯৯ টাকা। তারপর হাওড়া থেকে ট্রেন বদলে যাওয়া যাবে জম্মু। এখানে ননএসি স্লিপারগুলোর ভাড়া ৭৫০ থেকে ৭৯০ রুপি ।

ঢাকা থেকে বাসে গেলে কলকাতা পর্যন্ত বাস ভাড়া পড়বে জনপ্রতি ১ হাজার ১০০ থেকে ২ হাজার ৬০ টাকা। অতঃপর রেলপথে জম্মু পৌঁছানোর পর শ্রীনগরের বাকিটা পথ গাড়িতে শেয়ার করে কিংবা বাসে করে যেতে হবে। সব মিলিয়ে এভাবে শ্রীনগর পর্যন্ত যেতে সময় লাগতে পারে সর্বোচ্চ ২ দিন ১৯ ঘণ্টা।

কাশ্মীরের দর্শনীয় স্থানগুলো

শ্রীনগর

কাশ্মীরের প্রবেশদ্বার শ্রীনগরেই মিলবে অপার্থিব অনুভূতির সঞ্চার করা ডাল লেকের স্নিগ্ধতা। এছাড়া এই লেকে রয়েছে এশিয়ার প্রথম ভাসমান সিনেমা হল। শঙ্করাচার্য মন্দিরের চূড়া থেকে জম্মু ও কাশ্মীরের এই রাজধানী শহরটির প্রায় পুরোটা চোখে পড়ে।

কাশ্মীর ভ্যালী

কারাকোরাম এবং পীর পাঞ্জাল রেঞ্জ পরিবেষ্টিত এই উপত্যকাটি দেখতে একদম ডিমের মতো। হিমালয়ের এই বৃহত্তম উপত্যকার সেরা আকর্ষণ হচ্ছে এখানকার ১৩০ কিলোমিটার দীর্ঘ ট্রেকিং পথ। পাহাড়ের উপর অদ্ভূত সমতল রাস্তা রোমাঞ্চকর বাইকিং-এর জন্যও বেশ জনপ্রিয়।

প্যাহেলগাম

একদিকে ভীতি সঞ্চার করা গভীর উপত্যকাগুলোর আশ্রয়স্থল বেতাব উপত্যকা। অন্যদিকে হাজার বছরের স্রোত বুকে নিয়ে চির নবীন লিডার হ্রদ। এদের মাঝে পাহালগাম যেন বুনো ও আদিম প্রকৃতির এক স্বতঃস্ফূর্ত উপাখ্যান। এরই মধ্যে লিডার হ্রদে রোমাঞ্চকর রাফটিংয়ের হাতছানি উপেক্ষা করা দুষ্কর। শহরের বিপণীগুলোর জগৎ জোড়া খ্যাতি জানা না থাকলেও, ঐতিহ্যবাহী কাশ্মীরি সামগ্রীগুলো একবার হলেও ছুঁয়ে দেখার ইচ্ছে করবে।

সোনামার্গ

শ্রীনগর থেকে ৮০ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে অপরূপ উপত্যকা ও ঝর্ণার এক নৈসর্গিক সংমিশ্রণ এই সোনামার্গ। এখানকার বরফের নদী থাজিয়ান হিমবাহ আর সিন্ধু নদী দেখার সময় চোখের পলক ফেলারই অবকাশ মিলবে না। আর এই বিস্ময়কে সঙ্গ দিতে এখানে রয়েছে স্লেজিং, স্নো বাইক এবং ঘোড়ায় চড়ে ঘুরে বেড়ানোর সুযোগ।

গুলমার্গ

নয়নাভিরাম সবুজ ঘাসে আচ্ছাদিত গুলমার্গ সারা বছরই বরফে ঢাকা থাকে। শ্রীনগর থেকে ৪৯ কিলোমিটার দূরের এই দর্শনীয় স্থানে পাওয়া যাবে গন্ডোলার ক্যাবল কার রাইডিং ও প্যারাগ্লাইডিং-এর মজা। ভারতের শীতকালীন ক্রীড়াযজ্ঞের কেন্দ্রস্থল হিসেবে পরিচিত এই পাহাড়ি অঞ্চলটি এশিয়ার অন্যতম সেরা স্কিয়িং স্পট।

তাছাড়া দেখার মতো আরও আছে বাবা রেশির মাজার, খিলানমার্গ, গলফ কোর্স, সেন্ট ম্যারি চার্চ, এলপাথর লেক, বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভ, এবং আফারওয়াত পিক।

ভ্রমণের সেরা সময়

প্রকৃতির অনিন্দ্য রূপ লাবণ্য উপভোগের জন্য সারা বছরই ভ্রমণপিপাসুদের ভীড় থাকে কাশ্মীরে। যারা বরফের জগতে ডুবে যেতে চান, তারা বেছে নিতে পারেন ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি মাস। ভাগ্য ভালো হলে স্নোফলে ভেজার অভিজ্ঞতাও মিলে যেতে পারে।

ফুলেল এবং সবুজ কাশ্মীর দেখার জন্য উপযুক্ত সময় হলো এপ্রিল থেকে মে মাস।

তবে জুলাই থেকে আগষ্ট মাস পর্যন্ত প্যাহেলগামে হিন্দু দেবতা শিবের গুহা মন্দিরে অমরনাথ যাত্রা অনুষ্ঠিত হয় টানা ৬২ দিন ধরে। ফলে সারা শহর জুড়ে থাকে বাড়তি যানজটের ধাক্কা। তাই কাশ্মীরে ঘুরতে যাওয়ার ক্ষেত্রে এই সময়টা এড়িয়ে যাওয়াই উত্তম।

কাশ্মীর ভ্রমণে থাকাখাওয়ার ব্যবস্থা

কাশ্মীরের বেশ কিছু মান সম্মত আবাসিক হোটেল রয়েছে। এগুলোতে ভাড়া পড়তে পারে ১ হাজার থেকে ১ হাজার ৫০০ রুপির মধ্যে। শ্রীনগর ও জম্মুতে থাকার জন্য হোটেলের পাশাপাশি রয়েছে রিসোর্ট ও হাউস বোট। এখানে দুই জনের জন্য রুম ভাড়া পড়তে পারে ১ হাজার ২০০ থেকে ২ হাজার ৫০০ রুপি।

তবে শ্রীনগরের ডাল লেক সংলগ্ন হাউস বোটগুলো সব থেকে জনপ্রিয় টুরিস্ট এলাকা। এখানে থাকার খরচ অন্যান্য হোটেলগুলোর তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ।

অনন্য মশলা ও রন্ধনশিল্পের কারণে কাশ্মীরের খাবারে রয়েছে এক স্বতন্ত্র সংস্কৃতির ছাপ। এখানকার নানান ধরনের তাজা ফল অন্যান্য যে কোনও পাহাড়ি ফলের স্বাদকে হার মানাতে সক্ষম। কাশ্মীরের বিখ্যাত মাটন বিরিয়ানি একবার হলেও ভোজনরসিক পর্যটকগণ চেখে দেখার চেষ্টা করেন। এখানকার বিশেষ খাবারের মধ্যে রয়েছে ওজওয়ান, কাশ্মীরি কাবাব, মাটন রোগান জোশ, ভেড়ার মাংস, পনির চামান, আলুর দম, এবং নাদরু ইয়াখনি।

এলাচ, দারুচিনি, জাফরান এবং বাদাম দিয়ে বানানো এক ধরনের চা আছে, যাকে কাহভা বলা হয়। এছাড়া এখানকার গুড়, গুড় চা নামের বাটার চাও বেশ জনপ্রিয়।

কাশ্মীর ঘুরে বেড়ানোর সময় প্রয়োজনীয় সতর্কতা

ভারত, পাকিস্তান ও চীন প্রশাসিত এলাকা নিয়ে গঠিত এই অঞ্চলটিতে ভ্রমণের সময় কিছু সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি।

পরিচয় প্রমাণের জন্য যাবতীয় নথি সঙ্গে না থাকলে ঘুরে বেড়ানোর সময়ে বিড়ম্বনা হতে পারে। তাই রওনা হওয়ার আগেই পাসপোর্টের পাশাপাশি জাতীয় পরিচয়পত্র, পেশাগত এমনকি ড্রাইভিং লাইসেন্সও সঙ্গে নিয়ে নিতে হবে।

বর্তমানে অনলাইনে পেমেন্ট করার সুবিধা সবখানেই থাকে। এরপরেও প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোর কিছু দোকান কিংবা হোটেল বা মোটেলে উন্নত প্রযুক্তির সুবিধা নাও থাকতে পারে। কাশ্মীরের মত পাহাড়ি এলাকাও এর বাইরে নয়। এমনও হতে পারে যে, আশপাশে কোনও এটিএম বুথ না থাকায় রাতে নগদ টাকা তোলা যাচ্ছে না। তাই আগে থেকেই সঙ্গে কিছু নগদ অর্থ নিয়ে নেওয়া আবশ্যক।

কাশ্মীর খুবই ঠান্ডা এলাকা। তাই অনলাইন বা অফলাইন যেভাবেই হোক না কেন, রুম বুকিং-এর সময় তাতে হিটিং-এর ব্যবস্থা আছে কি না তা নিশ্চিত হয়ে নিতে হবে। যাওয়ার আগে দেশ থেকে প্রয়োজনীয় শীতের কাপড় নিয়ে নেওয়া উত্তম।

কাশ্মীরে ট্রিপে ঝটিকা সফর না দিয়ে হাতে একটু বেশি সময় নিয়ে যাওয়া ভালো। ট্রাঞ্জিট বা অভিবাসন সময় ক্ষেপণ ছাড়াও নতুন হিসেবে বিভিন্ন জায়গায় অতিরিক্ত সময় অতিবাহিত হতে পারে।

ভ্রমণপিপাসুদের অবশ্যই বিস্তারিত তথ্য জেনে কাশ্মীরে যাত্রা শুরু করা উচিত। ভ্রমণের তারিখ ঠিক করার পর দ্রুত টিকেট এবং হোটেল বুকিং দেয়া শ্রেয়।

এই পোস্টটি আপনার সামাজিক মিডিয়াতে শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও খবর

Address

Registered Office: 44/1 North Dhanmondi (5th Floor) Kalabagan, Dhaka- 1205, Bangladesh Email: kalabaganbarta@gmail.com / admin@kalabaganbarta.com Telephone: +88-02-58154100 Editorial Office: Karim Tower 44/7-A&B, West Panthapath, Kalabagan, Dhaka-1205

Correspondences

USA: Mainul Haq (Atlanta) Kolkata: Sunirmal Chakraborty Mobile: +91-8017854521 Ashim Kumar Ghosh Address: 3D K.P Roy Lane, Tollygunge Phari Kolkata- 700 033, WB, India Mobile: +91-9874891187                                                                                                           S. M. Ashikur Rahman (Technical Adviser)
Author: Masud Karim © All rights reserved 2020. Kalabaganbarta

Design & Developed By: RTD IT ZONE