দেশজুড়ে বয়ে চলা তাপপ্রবাহকে সঙ্গী করে মাঝ বৈশাখে চলতি মৌসুমের আরও একটি উষ্ণ দিন পার হল; তপ্ত হাওয়ায় ঘরে বাইরে হাঁসফাঁস অবস্থাও ছিল আগের মতোই।
আজ বুধবার ৫২ জেলার উপর দিয়ে তাপপ্রবাহ বয়ে যাওয়ার মধ্যে দেশের সর্বোচ্চ ৪১ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে বাগেরহাটের মোংলায়। এদিন ঢাকার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৯ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
আবহাওয়ার কয়েকদিনের পূর্বাভাসগুলোতে চলমান এ দাবদাহ থেকে দ্রুতই মুক্তি না মেলার কথা আগেই বলা হয়েছিল। জনগণকে সচেতন করতে সতর্ক থাকার পরামর্শও দেওয়া হয়েছিল বিশেষ বার্তায়। আগামী কয়েকদিনে আবহাওয়ার আগাম খবরে কোনো সুখবর না থাকায় আরও তিন দিনের সতর্কবার্তা আসতে পারে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদ হাফিজুর রহমান।
বুধবার তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, “তাপপ্রবাহ চলে যাওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। তবে তাপমাত্রা একটু ওঠানামা করবে। আগামীকাল আবার আসবে সতর্কবার্তা।”
চলতি মৌসুমে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় শনিবার; সেদিন যশোরে তাপমাত্রা উঠেছিল ৪২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। ওই দিন ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৪০ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
ওই দিনের পর থেকে থার্মোমিটারের পারদ কিছুটা নিচে নামলেও প্রখর রোদ ও গরম হাওয়ায় প্রকৃতির রুদ্র রোষ থেকে জনজীবনে রেহাই মেলেনি। অতি তীব্র তাপপ্রবাহের মুখে পড়তে না হলেও মৃদু থেকে তীব্র তাপপ্রবাহের কবলের উত্তাপ থেকে রেহাই মেলেনি।
বুধবারও দেশের ৫২ জেলার উপর দিয়ে তাপপ্রবাহ বয়ে যাওয়ার তথ্য সন্ধ্যার বুলেটিনে দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
বুলেটিনে বলা হয়, খুলনা বিভাগসহ দিনাজপুর, নীলফামারী, রাজশাহী, পাবনা, ফরিদপুর ও গোপালগঞ্জের উপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে।
এর বাইরে ময়মনসিংহ, মৌলভীবাজার, রাঙ্গামাটি, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী ও বান্দরবান জেলাসহ বরিশাল বিভাগের উপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝরি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। একই পরিস্থিতি বিরাজ করছে রংপুর, রাজশাহী ও ঢাকা বিভাগের বাকি অংশে।
বাতাসে তাপমাত্রা ৩৬ থেকে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কম হলে তাকে মৃদু তাপপ্রবাহ ধরা হয়। ৩৮ থেকে ৪০ ডিগ্রির কম তাপমাত্রাকে বলা হয় মাঝারি এবং ৪০ থেকে ৪২ ডিগ্রির কম তাপমাত্রাকে তীব্র তাপপ্রবাহ বলা হয়। আর তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রির উপরে উঠলে তাকে বলা হয় অতি তীব্র তাপপ্রবাহ।
এপ্রিল উষ্ণতম মাস হওয়ায় বরাবরই এ সময়ে দেশের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি থাকে উল্লেখ করে অধিদপ্তরের পরিচালক আজিজুর রহমান বলেন, এটা অস্বাভাবিক নয়। এবার টানা দুসপ্তাহ ধরে তাপপ্রবাহ থাকায় ও বৃষ্টিহীন পরিস্থিতি বিরাজ করায় গরমের অনুভূতি বেড়েছে।
“জলীয়বাষ্পের পরিমাণটা বেশি, যে কারণে অস্বস্তি বেশি হচ্ছে। স্বাভাবিক যা থাকার কথা, তার চেয়ে ৪ থেকে ৭ ডিগ্রি বেশি তাপমাত্রা উঠছে বিভিন্ন এলাকায়।”
এই আবহাওয়াবিদ বলেন, “এসময়ে যে কালবৈশাখী ঝড়ো হাওয়া চলার কথা, সেটা চলে গেছে অনেক উপরে-বিশেষ করে চায়না, এসব এলাকায়। এটা যদি বাংলাদেশ বা পশ্চিমবঙ্গ, দিল্লি-এসব বরাবর থাকত তাহলে এদিকে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা থাকত। স্কেল উপরে থাকার কারণে এ অঞ্চলটা শুষ্ক হয়ে গেছে।”
গত কয়েকদিনের প্রখর রোদ ও গরম হাওয়ায় দেশজুড়ে তেমন পরিস্থিতিই দেখা গেছে। গরমে কাহিল মানুষ ঘরে ও বাইরে অল্পতেই ক্লান্ত হয়ে পড়ছেন। অনেকে অসুস্থও হয়ে যাচ্ছেন অতি গরমে। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে গরমের মধ্যে ও হিটস্ট্রোকে মৃত্যুর খবরও আসছে।
মঙ্গলবার গুলিস্তানের রাস্তায় হাঁটার সময় প্রচণ্ড গরমে রাস্তায় ঢলে পড়েন এক ব্যক্তি। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর তার মৃত্যু হয়। ওই ব্যক্তি হিটস্ট্রোকে মারা যেতে পারেন ধারণা পুলিশের।
এর আগে শনিবার হিটস্ট্রোকে দুজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়। রোববার মেহেরপুরে গৃহবধূ, সিলেটে রিকশাচালক ও নরসিংদীতে এক ব্যবসায়ীর মৃত্যু হয়। সোমবার ঢাকার সড়কে অচেতন হয়ে এক রিকশাচালকের মৃত্যু হয়। হিটস্ট্রোকে তাদের মৃত্যু হয়েছে বলে চিকিৎসকদের ধারণা।
Design & Developed By: RTD IT ZONE
Leave a Reply