শনিবার, ০৪ মে ২০২৪, ১১:৩৮ পূর্বাহ্ন

ড্রাগন সোয়েটারের শ্রমিকরা ঘুরছে, মালিক এড়াচ্ছে

কলাবাগান বার্তা ডেস্ক
  • আপডেটের সময় : শুক্রবার, ২০ নভেম্বর, ২০২০
  • ৪৫৯ বার দর্শন

পুরনো কর্মীদের বিদায় করার পরিকল্পনা নিয়ে গত মার্চে প্রায় ৫০০ শ্রমিককে ছাঁটাইয়ের প্রক্রিয়া শুরু করে দেশের প্রথম দিককার পোশাক কারখানা ড্রাগন সোয়েটার লিমিটেড।

পরিকল্পনা অনুযায়ী জুন নাগাদ ছাঁটাই শেষ হলেও শ্রমিকদের বুঝিয়ে দেওয়া হয়নি তাদের পাওনা। মালিকপক্ষের ‘কূটকৌশলের সঙ্গে’ কুলিয়ে উঠতে না পেরে গত পাঁচ মাস ধরে পাওনা আদায়ে বিভিন্ন দপ্তরে ঘুরছেন তারা। পাওনা আদায়ে শ্রমিকরা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিও পালন করেছেন, কিন্তু কোনো লাভ হয়নি।

ড্রাগন সোয়েটারের মালিক বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি মোস্তফা গোলাম কুদ্দুস দাবি করেছেন, তিনি কাউকে চাকরিচ্যুত করেননি। শ্রমিকরাই একটি সংগঠনের নেতাদের ইন্ধনে বিশ্বে বাংলাদেশের পোশাক খাত নিয়ে খারাপ বার্তা দিতে এ পরিস্থিতি তৈরি করেছে।

তবে শ্রম ও কলকারখানা প্রতিষ্ঠান অধিদপ্তর তদন্ত করে চাকরিচ্যুতি ও বকেয়া পাওনা নিয়ে শ্রমিকদের বঞ্চনার প্রমাণ পেয়েছে। বিষয়টি সুরাহা করতে দফায় দফায় বৈঠক চালিয়ে যাচ্ছে সরকার, শ্রমিক সংগঠন, মালিকপক্ষ ও পোশাক রপ্তানিকারকদের সমিতি বিজিএমইএ।

গত ১২ অক্টোবর শ্রম অধিদপ্তরে ত্রিপক্ষীয় বৈঠকে দুই মাসে চার কিস্তিতে শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধের একটি চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর করেছিলেন গোলাম কুদ্দুস। কিন্তু গত ৭ নভেম্বর প্রথম কিস্তির টাকার পরিমাণ নিয়ে নতুন জটিলতা সামনে নিয়ে আসে মালিকপক্ষ। ফলে ওইদিন শ্রমিকরা কোনো টাকা পাননি।

সবশেষ গত ১৫ নভেম্বর বিজয়নগর শ্রমভবনে আবারও মালিক-শ্রমিক ও সরকার পক্ষের বৈঠক হয়। সেখানেও টাকা আদায়ের প্রতিশ্রুতি না পেয়ে ড্রাগন সোয়েটারের মালিক গোলাম কুদ্দুসকে তিন ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে রাখেন  শ্রমিকরা।

কেন এমন ছাঁটাই?

১৯৮৪ সালে হংকং ও চীনের উদ্যোক্তাদের সঙ্গে নিয়ে বাংলাদেশে সোয়েটার বুননের কাজ শুরু করে ড্রাগন গ্রুপ।

বর্তমানে ঢাকা ও কুমিল্লায় কোম্পানিটির নয়টি কারখানা ইউনিটের তথ্য পাওয়া যায় বিজিএমইএর ওয়েবসাইটে। ১২০০ হাজারের বেশি প্রশিক্ষিত কর্মী বাহিনী রয়েছে তাদের। নিজস্ব ডিজাইন ও পরিকল্পনায় সোয়েটার উৎপাদনের জন্য দেশে ও ইউরোপের বাজারে প্রতিষ্ঠানটির খ্যাতি রয়েছে।

৩০ বছর মালিবাগের কারখানায় চাকরি করেছেন এমন কর্মীকেও পাওনা বাকি রেখে ছাঁটাই করা হয়েছে বলে শ্রমিকদের অভিযোগ।

আন্দোলনকারী শ্রমিকদের নেতৃত্ব থাকা আব্দুল কুদ্দুছ মিয়া বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এই  কারখানায় নিয়মিত কয়েক মাসের বেতন বকেয়া বাকি থাকলেও মালিক-শ্রমিক সম্পর্কের কোনো অবনতি ঘটেনি। গত বছরের শেষদিকে মালিবাগে ড্রাগন সোয়েটারের ওই কারখানা কুমিল্লায় স্থানান্তরের পরিকল্পনার কথা জানানোর পর পরিস্থিতির অবনতি হতে থাকে। কারণ সব কর্মীর  পক্ষে কুমিল্লায় গিয়ে চাকরি করা সম্ভব হচ্ছিল না। সেক্ষেত্রে চাকরি ছেড়ে দেওয়ার বিষয়টি সামনে চলে আসে। যখন দেখা যায়, কারখানা আর স্থানান্তর করা হয়নি, তখন শ্রমিকরা বুঝতে পারে, ওটা ছিল পুরনো কর্মীদের বিদায় করার একটা কৌশলমাত্র।

“যখন কুমিল্লায় স্থানান্তরের প্রশ্ন আসে তখন অনেক পুরনো শ্রমিক তাদের দীর্ঘদিনের পাওনা সুযোগ-সুবিধা নিয়ে চাকরি ছাড়ার ইচ্ছার কথা জানান। কিন্তু মালিকপক্ষ চাকরির সুযোগ সুবিধার টাকা না দিয়ে বরং কুমিল্লায় গিয়ে কাজ করার প্রস্তাব দেয়। গত বছরের অক্টোবর-নভেম্বরের দিকে এমন আলোচনা যখন চলছে তখনও ৩/৪ মাসের বেতন বকেয়া পড়েছিল। ফলে শ্রমিকরা শুরু করে বকেয়া আদায়ের আন্দোলন। ওই আন্দোলন শুরুর পর থেকেই ধাপে ধাপে নানা অজুহাতে ২০/৩০ জন করে ছাঁটাই করা শুরু হয়। কোনো নোটিস কিংবা আলোচনা ছাড়াই ম্যানেজমেন্ট তাদের টার্গেটে থাকা লোকজনের আইডি কার্ড জমা নিতে থাকে। এক্ষেত্রে কাউকেই প্রভিডেন্ট ফান্ড, অর্জিত ছুটি কিংবা সার্ভিস বেনিফিটের টাকা দেওয়া হয়নি।”

তিনি আরও জানান, ‍ছাঁটাইয়ের দ্বিতীয় ধাপ শুরু হয় মহামারীর কারণে কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ হওয়ার পর। মে মাসে সর্বত্র কারখানা চালু হলেও ড্রাগন সোয়েটার বন্ধই ছিল। সরকারের প্রণোদনার টাকা থেকে শ্রমিকদেরকে জুন মাস পর্যন্ত ৬৫ শতাংশ করে বেতন দিতে থাকেন মালিক।

“এরই মধ্যে মে মাসে নতুন কিছু কর্মী নিয়োগ দিয়ে তাদেরকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ড্রাগন সোয়েটার অ্যান্ড স্পিনিং লিমিটেডের আইডি কার্ড দিয়ে কাজ করানো শুরু হয়। তখন আমাদের কারখানায় ঢুকতে দেওয়া হয়নি। এই পরিস্থিতে মালিকপক্ষের সঙ্গে আলোচনায় বসে জানতে পারি- আমাদের চাকরি নেই। তবে এই পরিস্থিতির মধ্যেও আমাদের দীর্ঘদিনের বকেয়ার টাকাগুলো ধাপে ধাপে পেয়ে আসছিলাম।”

মূলত এরপর থেকেই শ্রমিকরা দীর্ঘদিনের চাকরি সূত্রে অর্জিত বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা বুঝে পাওয়ার আন্দোলন শুরু করে। কে কত টাকা পাবেন বা আদৌ পাবেন কিনা তা নিয়েই মালিক-শ্রমিক দ্বন্দ্বের সূত্রপাত।

ড্রাগন সোয়েটারের মালিক মোস্তফা গোলাম কুদ্দুস দাবি করেন, তিনি কোনো শ্রমিককে বিদায় করতে চাননি। শ্রমিকরাই বরং দীর্ঘদিন কর্মক্ষেত্র অনুপস্থিত থাকায় নতুন নিয়োগ দেওয়া ছাড়া উপায় ছিল না।

গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সভাপতি জলি তালুকদার বলেন, “মালিকরা টাকা বাঁচানোর একটি সুযোগও হাতছাড়া করতে চাননা। মহামারীর সুযোগকে কাজে লাগিয়ে পুরনো শ্রমিকদের ছাঁটাই করে তারা টাকা বাঁচাতে চাইছেন। এক্ষেত্রে তারা শ্রম আইনের তোয়াক্কা করছেন না। তারা কি তাহলে আইনের ঊর্ধ্বে?”

আন্দোলনে উস্কানি দেওয়ার অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “তিন-চার মাসের বকেয়া বেতন ও অধিকার আদায়ের জন্য আন্দোলন হলে সেখানে উস্কানি দেওয়ার প্রয়োজন কী? শ্রমিকরা তো তাদের অধিকার ফিরে পেতেই আন্দোলন নামতে বাধ্য হচ্ছে। আর মালিকরা শ্রমিকের পাওনা বুঝিয়ে দিতে শ্রমমন্ত্রীর কাছে ওয়াদা করার পরও কেন তা মানছেন না?”

শ্রমিক সংখ্যা ও পাওনা নিয়ে গোঁজামিল

মালিকপক্ষ কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের কাছে চাকরি হারানো ৮৯ জন বেতনভুক্ত শ্রমিক, ফুড়ণ ভিত্তিতে (উৎপাদনের ভিত্তিতে মজুরি) নিয়োগ পাওয়া ২৬৯ জন এবং ৭৫ জন তদারকি কর্মকর্তা- মোট ৪৩৩ জনের তালিকা দিয়েছে।

তবে আন্দোলনকারী শ্রমিকরা বলছেন, এর বাইরেও গত অক্টোবর থেকে ফেব্রুয়ারি মাসে চাকরিচ্যুত কিছু শ্রমিক-কর্মকর্তা রয়েছেন। ১০ জন ম্যানেজার ও মার্চেন্ডাইজার পর্যায়ের কর্মীও রয়েছেন, যারা সে সময় সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়েছিলেন। তখন কিছু বলার সুযোগ না পেলেও এখন তারা আন্দোলনে যুক্ত হয়েছেন। তাদের হাতে মালিকের কাছ থেকে বকেয়া দাবি করার মতো প্রয়োজনীয় কাগজপত্র রয়েছে। সব মিলিয়ে চাকরি হারানো কর্মীর সংখ্যা ৫০৪ জন। 

ড্রাগন সোয়েটারে ১৬ বছরের স্টোর এক্সিকিউটিভ ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মীর পশেন আলী সাম্প্রতিক ছাঁটাইয়ের কবলে পড়েছেন।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, ‍“আমার হিসাবে আমি সাত লাখ ৮০ হাজার টাকা পাই; মালিকের হিসাবে তিন লাখ ৬০ হাজার টাকা। হিসাবে এত বড় হেরফের হলে সেটা তো আর হিসাব থাকেনা। ঢাকায় আমার পরিবার, ছেলে-মেয়ে থাকে। এখন বড় ভাই, আত্মীয়-স্বজনের কাছ থেকে ধার-দেনা করে সংসার চালাতে হচ্ছে। টাকাটা হাতে পেলে একটা কিছু করতে পারতাম।”

চাকরি খোয়ানো মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন নামের এক শ্রমিক বলেন, ‍‍‍‍‍‍“যদি আমাদের না রাখে তাহলে তো জোর করে চাকরি করতে পারব না। কিন্তু শ্রম আইন অনুযায়ী আমাদের দীর্ঘদিনের যে সঞ্চয় জমেছে তা দিচ্ছে না কেন? মালিক আমাদেরকে শ্রমিক হিসাবে স্বীকার করতে চাইছে না। আইনে শ্রমিক হিসাবে যা পাওনা তা দিতে চাচ্ছে না। আমরা কি তবে মালিকপক্ষের লোক? তাহলে আমাদের চাকরি যায় কী করে?”

আন্দোলনকারীদের নেতা আব্দুল কুদ্দুছ বলেন, “মালিকপক্ষ প্রভিডেন্ড ফান্ডের নামে আমাদের বেতন থেকে পাঁচ শতাংশ হারে টাকা কেটেছে, সার্ভিস বুকে এর রেকর্ড আছে। ওই ফান্ডে মালিকেরও টাকা জমা দেওয়ার কথা। কিন্তু তিনি ব্যাংকে ফান্ডের নামে কোনো অ্যাকাউন্ট খোলেননি। এখন বলছেন- ওটা প্রভিডেন্ড ফান্ড নয়; বরং সিকিউরিটি মানি। তার ওই দাবি সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং ভিত্তিহীন। একইভাবে ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে অনেক নিয়মিত শ্রমিককে চুক্তিভিত্তিক হিসেবে প্রমাণ করতে চাইছে। সরকারি তদন্তে ব্যাপারগুলো স্পষ্ট হয়েছে। আমাদের কাছেও যথেষ্ট কাগজপত্র রয়েছে।

“সব মিলিয়ে পাওনা হবে কয়েক কোটি টাকা। শ্রমিকরা যা পাবে সমঝোতার স্বার্থে তার ৫০ শতাংশই ছাড় দেওয়া হয়েছে।”

চুক্তি ভঙ্গ

সমস্যার প্রতিকার চেয়ে গত ১২ নভেম্বর শ্রম প্রতিমন্ত্রী বেগম মুন্নুজান সুফিয়ানের কাছে আবেদন করেন আন্দোলনকারী শ্রমিকরা। সেখানে তারা উল্লেখ করেন, সাত মাস আন্দোলনের পর শ্রম ও কলকারখানা প্রতিষ্ঠান অধিদপ্তরের মধ্যস্থতায় পাওনা আদায়ে ত্রিপক্ষীয় চুক্তি হয়। শ্রমিকদের আইনানুগ প্রভিডেন্ট ফান্ড, সার্ভিস বেনিফিট, অর্জিত ছুটিসহ নানাবিধ পাওনার ৫০ শতাংশ ছাড় দিয়ে সেই চুক্তি হয়েছিল। কিন্তু ৭ নভেম্বর প্রতিশ্রুত দিনে পাওনার প্রথম কিস্তি দেয়নি মালিকপক্ষ।

চুক্তিতে ২২ নভেম্বর দ্বিতীয়, ৭ ডিসেম্বর তৃতীয় এবং ২২ ডিসেম্বর চতুর্থ কিস্তিতে শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন ড্রাগন গ্রুপের চেয়ারম্যান গোলাম কুদ্দুস।

শ্রম অধিদপ্তরের মধ্যস্থতায় ওই চুক্তিতে গোলাম কুদ্দুস ছাড়াও শ্রম অধিদপ্তরের পরিচালক মোহাম্মদ আমিনুল হক, জাতীয় শ্রমিক লীগের সভাপতি ফজলুল হক মন্টু, বিজিএমইএর সহকারি সচিব শামিম হাসান, শ্রমিক প্রতিনিধি আব্দুল কুদ্দুছ মিয়া, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের উপ মহাপরিদর্শক মেহেদী হাসান, বিজিএমইএর নির্বাহী কর্মকর্তা মাসুদ পারভেজ ও ড্রাগন সোয়েটারের চাকরিচ্যুত কর্মী আল আমিন স্বাক্ষর করেছিলেন।

পোশাক কারখানা মালিকদের নেতা ও শ্রম মন্ত্রণালয় গঠিত ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট কমিটির সদস্য মোহাম্মদ হাতেম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ড্রাগন গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা কুদ্দুস ভাইয়ের হাত ধরে বাংলাদেশে পোশাক শিল্প বিকশিত হয়েছে। তিনি শ্রমিকদের পাওনার বিষয়ে অত্যন্ত আন্তরিক। কিন্তু এখানে কর্মকর্তা পর্যায়ের কিছু লোক রয়েছেন যারা শ্রমিকদের জন্য নির্ধারিত সুবিধাগুলো ভোগ করতে চাইছেন। কিন্তু তারা আসলে শ্রম আইন অনুযায়ী এসব সুবিধা পাওয়ার উপযুক্ত নন। এসব মধ্যম পর্যায়ের কর্মকর্তাদের কারণেই শ্রমিকদের পাওনা বুঝিয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।”

আন্দোলনে কিছু দেশীয় শ্রমিক সংগঠনের ইন্ধন রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “শ্রমিকদের আন্দোলনের ছবি তারা জার্মানিতে পাঠিয়েছে। সেই ছবি আমাদের কাছে এসেছে। এই ছবি প্রচার করে তারা বিদেশ থেকে চাঁদাবাজি করবে। বাংলাদেশের পোশাক খাতকে ড্যামেজ করার জন্য তারা এসব পাঁয়তারা করছে।”

দায় এড়ানোর যত ফন্দি

গত ৪ ও ৫ অক্টোবর কারখানটি পরিদর্শন করেন শ্রম ও কলকারখানা প্রতিষ্ঠান অধিদপ্তর গঠিত উপ কমিটির চারজন সদস্য। তাদের কাছে মাসিক বেতনভুক্ত ৮৯ জন, ফুড়ণ ভিত্তিতে ২৬৯ জন এবং ৭৫ জন তদারক কর্মকর্তার একটি তালিকা দেয় মালিকপক্ষ। এই ৪৩৩ জন শ্রমিকের মার্চের বেতন নগদে এবং এপ্রিল, মে ও জুন মাসের বেতন মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে পরিশোধ করা হয়েছিল। ২০১৮ সাল পর্যন্ত এসব শ্রমিকদের অর্জিত ছুটির অর্থ নগদায়ন করা হয়েছে বলে মালিকপক্ষ দাবি করলেও এর পক্ষে কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেনি। সার্ভিস বুকেও অর্জিত ছুটি নগদায়নের কোনো তথ্য নেই।

২০০৭ সাল থেকে প্রভিডেন্ট ফান্ড তহবিল গঠন করা হয়েছে মালিকপক্ষ দাবি করলেও এর পক্ষে কোনো কাগজপত্র দেখাতে পারেনি। তবে ৮৯ জন শ্রমিক ও ৭৫ জন তদারক কর্মকর্তার বেতন থেকে ভবিষ্যৎ তহবিলে শ্রমিকের বেতনের পাঁচ শতাংশ কেটে নেওয়ার প্রমাণ রয়েছে। তহবিলে মালিকপক্ষের অর্থ দেওয়ার কোনো প্রমাণ নেই।

মালিকপক্ষের দাবি, গত ১৭ জুন মাসিক বেতনভুক্ত শ্রমিকদেরকে কাজে অনুপস্থিতির কারণ জানতে চেয়ে এবং কাজে যোগদান করতে নোটিস দেওয়া হয়েছিল।

তবে রেজিস্ট্রি ডাকযোগে এসব নোটিস পাঠানো হয় ২৯ সেপ্টেম্বর থেকে ২ অক্টোবরের মধ্যে। কাজে যোগদান করার জন্য ১৫ জুন তারিখেই একটি চিঠি হাতে হাতে পৌঁছে দেওয়া হয়েছিল বলে নোটিসে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে এই দাবির পক্ষে কোনো কাগজপত্র দেখাতে পারেনি মালিকপক্ষ। তারা ১৫ জুন হাতে হাতে যে নোটিস শ্রমিকদের দিয়েছিল বলে দাবি করছে সেখানে তারিখ লেখা আছে ১৭ জুন। পরিদর্শনকারীরা এই অসঙ্গতিকে বোধগম্য নয় বলে উল্লেখ করেছেন। এছাড়া মালিকপক্ষ চাকরিচ্যুতদের নিয়ে সমস্যা সমাধানে একাধিক সভা করলেও এসব সভায় উপস্থিত কারও কাছ থেকে কারণ দর্শানো নোটিসের প্রাপ্তি স্বীকার সংক্রান্ত স্বাক্ষর নেয়নি। অর্থাৎ এ ধরনের নোটিসের সত্যতার পক্ষে কোনো প্রমাণ মালিকপক্ষ দেখাতে পারেনি।

মালিকপক্ষ বলছে, ফুড়ণ ভিত্তিতে নিয়োগ পাওয়া শ্রমিকদের মার্চ মাসের বেতন হাতে হাতে এবং এপ্রিল, মে ও জুন মাসের বেতন মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে গেছে। ২০১৮ সাল পর্যন্ত ফুড়ণদের অর্জিত ছুটি নগদায়ন করা হয়েছে। কিন্তু এই বক্তব্যের পক্ষেও কোনো প্রমাণ তারা দেখাতে পারিনি।

তদারক কর্মকর্তাদেরকে প্রতি বছর পর শর্তসাপেক্ষে অস্থায়ী ভিত্তিতে পুনর্নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে বলে এ সংক্রান্ত চিঠি দেখিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এসব পত্রে শর্তাবলী প্রতিপালনে ব্যর্থতার কথা উল্লেখ আছে আবার বেতন বৃদ্ধি সংক্রান্ত চিঠিতে কাজে সন্তুষ্টির কথা উল্লেখ রয়েছে। এর পাশাপাশি পুনর্নিয়োগের চিঠি গ্রহণকারীর স্বাক্ষরের সাথে চাকরির আবেদনকারীর স্বাক্ষর, সার্ভিস বুকে শ্রমিকের স্বাক্ষর, বেতন গ্রহণ সংক্রান্ত শিটে বেতন গ্রহণকারীর স্বাক্ষরের কোনো মিল পাওয়া যায়নি।

কী বলছে কর্তৃপক্ষ?

সমস্যা সমাধানে বিজিএমইএ গঠিত কমিটির প্রধান সংগঠনের পরিচালক রেজওয়ান সেলিম বলেন, “কুদ্দুস ভাই আমাদের মধ্যে একজন জ্যেষ্ঠ মানুষ। উনি বিজিএমইএর প্রাক্তন সভাপতি ছিলেন। উনার কারখানার সমস্যাটি সরাসরি শ্রম মন্ত্রণালয় ও শ্রম অধিদপ্তর মীমাংসা করার চেষ্টা করছে। আমরা প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দিচ্ছি।”

কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের উপ মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) একেএম সালাহউদ্দিন বলেন, “ড্রাগন সোয়েটার কর্তৃপক্ষকে একটি চুক্তির আওতায় আনা হলেও তারা শেষ পর্যন্ত তা পালন করতে ব্যর্থ হয়েছে। আমরা তাদের কাছ থেকে শ্রমিকদের বকেয়া পাওনা আদায় করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। এখানে কোনো শাস্তিমূলক সিদ্ধান্ত দেওয়ার ক্ষমতা অধিদপ্তরের নেই। সব চেষ্টা ব্যর্থ হলে উভয়পক্ষকে শ্রম আদালতে যাওয়ার জন্য এনওসি দেব। সমঝোতায় আসতে উভয়পক্ষকে ছাড় দিতে হবে। শ্রমিকরা সেই ছাড় দিলেও মালিকপক্ষ এখনও কিছু কিছু জায়গায় অনড়।”- বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

এই পোস্টটি আপনার সামাজিক মিডিয়াতে শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও খবর

Address

Registered Office: 44/1 North Dhanmondi (5th Floor) Kalabagan, Dhaka- 1205, Bangladesh Email: kalabaganbarta@gmail.com / admin@kalabaganbarta.com Telephone: +88-02-58154100 Editorial Office: Karim Tower 44/7-A&B, West Panthapath, Kalabagan, Dhaka-1205

Correspondences

USA: Mainul Haq (Atlanta) Kolkata: Sunirmal Chakraborty Mobile: +91-8017854521 Ashim Kumar Ghosh Address: 3D K.P Roy Lane, Tollygunge Phari Kolkata- 700 033, WB, India Mobile: +91-9874891187                                                                                                           S. M. Ashikur Rahman (Technical Adviser)
Author: Masud Karim © All rights reserved 2020. Kalabaganbarta

Design & Developed By: RTD IT ZONE