শনিবার, ০৪ মে ২০২৪, ০২:২১ পূর্বাহ্ন

ঝিলের হাঁস গিলে খাচ্ছে কে?

কলাবাগান বার্তা ডেস্ক
  • আপডেটের সময় : শুক্রবার, ২৭ নভেম্বর, ২০২০
  • ৩৯৬ বার দর্শন

এডিস মশার লার্ভা নিধনে বিভিন্ন লেক, ঝিল ও পুকুরে পাঁচ শতাধিক হাঁস অবমুক্ত করেছিল ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। মাত্র পাঁচ মাসের মাথায় প্রায় ৮০ ভাগ হাঁস গায়েব হয়ে গেছে। অভিযোগ রয়েছে, তদারকির অভাবে চুরি হয়েছে বেশিরভাগ হাঁস। কিছু হাঁস বিভিন্ন রোগে মারা গেছে। এখন যে কয়েকটা বেঁচে আছে, সেগুলো ঠিকমতো খাবার পায় না।

ডিএসসিসি সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চুরি নয়, হাঁসগুলো ডাক-কলেরা রোগে মারা যাচ্ছে। প্রতিটি লেক, পুকুর ও ঝিলের দূষিত পানি থেকে এই রোগ ছড়িয়েছে। তাহলে হাঁস ছাড়ার আগে কেন পানি পরীক্ষা করা হয়নি, ডিএসসি সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে এ প্রশ্নের উত্তর মেলেনি।

মশার লার্ভা ধ্বংসে জলাশয়ে হাঁস ছাড়ার বিপক্ষে মত দিয়েছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক কবিরুল বাশার। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, হাঁস মশার লার্ভা ধ্বংস করতে পারে না। এটা সঠিক পদ্ধতি নয়। কারণ, লার্ভা খুবই ছোট, হাঁস তা খেতে পারে না। এছাড়া এভাবে হাঁস ছাড়লে মরে যাওয়া বা কেউ ধরে খেয়ে ফেলার আশঙ্কা থাকে। হাঁসের চেয়ে গাপ্পি মাছ মশার লার্ভা ধ্বংসে বেশি কার্যকর।

অনেকের অভিযোগ, মশা নিধনের নামে বছরে কোটি টাকা খরচ করছে ডিএসসিসি। অথচ মশা নিধনে তাদের সঠিক কর্মপরিকল্পনা নেই। অবিলম্বে ডিএসসিসিকে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তারা।

২০১৯ সালে দেশে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত (১ লাখ ৯৩৩) এবং মৃতের সংখ্যা (১৪৮) অতীতের সব রেকর্ড ভেঙেছে। আক্রান্ত ও মৃতদের অধিকাংশই ঢাকার বাসিন্দা ছিলেন। তাই গত ১৪ জুন মশার লার্ভা ধ্বংসে রমনা পার্ক লেকে হাঁস এবং খিলগাঁওয়ের বটতলা ঝিলে তেলাপিয়া মাছ ছেড়েছিলেন ডিএসসিসি মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস। এছাড়া একই সময় ডিএসসিসির পৃথক ১০টি অঞ্চলের একটি করে লেক বা পুকুরে পাঁচ শতাধিক হাঁস অবমুক্ত করেন সংশ্লিষ্ট এলাকার আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা ও কাউন্সিলররা।

রমনা পার্ক লেক

রমনা পার্ক ডিএসসিসির অঞ্চল-১ এর আওতাধীন। তবে এই পার্কের মালিক গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়। ডিএসসিসির অঞ্চল-১ এর আঞ্চলিক কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, রমনা পার্ক লেকে তারা প্রথম দফায় ৫২টি হাঁস অবমুক্ত করেছিলেন। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই খাবার সংকট ও ডাক-কলেরায় অধিকাংশ হাঁস মারা যায়। পরে আরও ১০টি হাঁস এই লেকে ছাড়া হয়। তবে সোমবার (২৩ নভেম্বর) এই লেকে গিয়ে মাত্র ১৪টি হাঁস দেখা গেছে।

রমনা লেকে হাঁস দেখভালের দায়িত্ব পালন করছেন এই পার্কের আনসার কমান্ডার মো. সিরাজ। তার অভিযোগ, হাঁসের খাবার ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করেনি ডিএসসিসি। ফলে কিছুদিন পরপরই বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে হাঁসগুলো মারা যাচ্ছে। বিষয়টি সিটি করপোরেশনের সংশ্লিষ্টদের জানানো হয়েছে। কিন্তু তারা কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছেন না।

তিনি বলেন, রমনা পার্ক লেকে যেসব হাঁস ছাড়া হয়েছে তার অধিকাংশই বিদেশি জাতের। এগুলো এই পরিবেশের জন্য উপযুক্ত নয়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএসসিসির অঞ্চল-১ এর আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা মিজানুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, লেকের পানি হাঁসের জন্য উপযোগী ছিল না। তাই ডাক-কলেরা রোগে অধিকাংশ হাঁস মারা গেছে। বাকি হাঁসগুলোকে ভ্যাকসিন দেয়া হয়েছে। এখন খাবারও নিয়মিত দেয়া হয় বলে দাবি করেন তিনি।

সিক্কাটুলী পুকুর

পুরান ঢাকার বংশালে শত বছরের ঐতিহ্যের সাক্ষী সিক্কাটুলী পুকুর। এই পুকুরেও ৪৫টি হাঁস অবমুক্ত করেছিল ডিএসসিসি। অথচ এখন মাত্র সাতটি হাঁস জীবিত রয়েছে।

গত সোমবার সরেজমিনে দেখা যায়, পুকুরের পানিতে কয়েক স্তরের শ্যাওলা জমে আছে। পানি মশার লার্ভায় ভরা। হাঁসগুলো পুকুর সংলগ্ন শহীদ বুদ্ধিজীবী খালেক সর্দার পার্কের ভেতর। এর মধ্যে তিনটি হাঁসকে দুর্বল দেখা যায়। কাউকে খাবার বা পানি দিতে দেখা যায়নি।

সিক্কাটুলীর বাসিন্দা আনোয়ার হোসেন বলেন, পুকুরের ময়লা পানিতেই হাঁসগুলো ছাড়া হয়েছিল। ফলে অল্পদিনেই কিছু হাঁস রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। কিছু হাঁস চুরি হয়ে যায় বলে শুনেছি।

তিনি বলেন, এখন যে কয়েকটি হাঁস রয়েছে, সেগুলোকে ঠিকমত খাবার দেয় না সিটি করপোরেশন। পুকুর পাড়ের বাসিন্দারাই যে যা পারেন খাবার দিচ্ছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএসসিসি-৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আউয়াল হোসেন বলেন, হাঁসগুলো দেখভালের জন্য একজন লোক রয়েছেন। তিনি ঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করছেন কি-না, খোঁজ নিয়ে দেখব।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডিএসসিসির সচিব দফতরের এক কর্মকর্তা বলেন, কোনো পরিকল্পনা ছাড়াই লেকে হাঁস অবমুক্ত করেছে ডিএসসিসি। ফলে অধিকাংশ হাঁস চুরি হয়েছে। মারা গেছে কিছু হাঁস। এ কারণে নতুন করে হাঁস ছাড়া বন্ধ রয়েছে। – জাগোনিউজ।

এই পোস্টটি আপনার সামাজিক মিডিয়াতে শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও খবর

Address

Registered Office: 44/1 North Dhanmondi (5th Floor) Kalabagan, Dhaka- 1205, Bangladesh Email: kalabaganbarta@gmail.com / admin@kalabaganbarta.com Telephone: +88-02-58154100 Editorial Office: Karim Tower 44/7-A&B, West Panthapath, Kalabagan, Dhaka-1205

Correspondences

USA: Mainul Haq (Atlanta) Kolkata: Sunirmal Chakraborty Mobile: +91-8017854521 Ashim Kumar Ghosh Address: 3D K.P Roy Lane, Tollygunge Phari Kolkata- 700 033, WB, India Mobile: +91-9874891187                                                                                                           S. M. Ashikur Rahman (Technical Adviser)
Author: Masud Karim © All rights reserved 2020. Kalabaganbarta

Design & Developed By: RTD IT ZONE