সম্প্রতি হেফাজত ইসলামের ডাকা হরতালে দেশের বিভিন্ন স্থানে নাশকতার সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ পুলিশের ইন্সপেক্টর জেনারেল (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ। বৃহস্পতিবার (১ এপ্রিল) ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সার্কিট হাউজে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে নাশকতার সময় শিশু বক্তাকে ধরে পরবর্তীতে আবার ছেড়ে দেওয়া হলো, হেফাজতের নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হলো না। গ্রেফতার করা হলো না। অথচ কুমিল্লায় গাড়ি পোড়ানোর মামলায় ঢাকায় অবস্থান করা খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে হুকুমের আসামি করে মামলা দেওয়া হয়েছিল। কেন হেফাজত নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা কিংবা গ্রেফতার হচ্ছে না? এমন প্রশ্নের উত্তরে আইজিপি বলেন, তদন্ত করে যার নাম আসবে তাদেরই গ্রেফতার করা হবে।
তিনি বলেন, আপনাদের ধৈর্য্য ধরতে হবে। অভিযুক্তদের চিহ্নিত করা হচ্ছে৷ স্টিল ছবি ও ফুটেজ দেখা হচ্ছে। রুল অব ‘ল’ এবং গুড গভর্নেন্সের জন্য যা যা প্রয়োজন তাই করা হবে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার একটি থানায় যখন হেফাজতের নেতাকর্মীরা হামলা চালিয়েছিল, তখন পুলিশ পরিস্থিতি সামাল দিতে ব্যর্থ হয়ে থানার ভেতর থেকে মাইকিং করে বলে থানার ভবন ছেড়ে অন্য যে কোনো জায়গায় হামলা করুন। পুলিশের এমন দায়িত্বহীন আচরণের বিষয়ে আইজিপির কাছে ব্যাখ্যা চান স্থানীয় এক সাংবাদিক।
উত্তরে আইজিপি বলেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ঘটনায় পুলিশের পৃথক কমিটি হয়েছে। কেউ যদি মাইকিং করে থাকে তাহলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এটা অপেশাদার আচরণ। এ ধরনের কাজ করে কেউ পুলিশে থাকতে পারবে না।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় হামলার বিষয়ে পুলিশের কাছে কি আগে থেকে কোনো তথ্য ছিল না? তথ্য থাকলে হামলা আটকাতে পারলো না কেন পুলিশ? সাংবাদিকের এমন প্রশ্নের জবাবে আইজিপি বলেন, যেহেতু তারা প্রোগ্রাম দিয়েছিল, এটা সবারই জানা ছিল। তবে সেই প্রোগ্রামের পরিণতি যে এমন হবে তা কেউ বুঝতে পারেনি।
এর আগে ২৬ ও ২৭ মার্চ ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় হামলা ও সরকারি স্থাপনায় ভাংচুর করে হেফাজতে ইসলামের কর্মীরা। এসময় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে কয়েকজন নিহত হন।
আইজিপি বলেন, যেসব জায়গায় হামলা চালানো হয়েছে সবগুলোই রাষ্ট্রীয় সম্পদ তথা জনগণের সম্পদ। জনগণের সম্পদে কেউ কেনো এভাবে নষ্ট করবে তা আমার বোধগম্য নয়। সার্কিট হাউজে হামলা হয়েছে, ভূমি অফিসে হামলা হয়েছে। ভূমি অফিসের ১৫০-২০০ বছরের নথি নাশকতাকারীরা পুড়িয়েছে যা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার লোকজনকে আরও ৫০ বছর ভোগাবে।
ধর্মীয় নেতাদের রাজনীতি নিয়ে আইজিপি বলেন, রুহানি হুজুররা আধ্যাত্মিকতা বাদ দিয়ে রাজনীতি করেন। রাজনীতি করার অধিকার সবার আছে তাই বলে ধ্বংস করতে হবে কেন? এর আগে আইজিপি ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেসক্লাব, সার্কিট হাউজসহ নাশকতা চালানোর স্থানগুলো পরিদর্শন করেন।
উল্লেখ্য, ২৮ মার্চ ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় হেফাজতে ইসলামের ডাকা হরতালে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে সংঘর্ষে তিনজন নিহত হন। এছাড়া ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের প্রতিবাদে ও চট্টগ্রামে মাদরাসাছাত্রদের ওপর পুলিশের হামলার প্রতিবাদে আয়োজিত বিক্ষোভে আরও একজন নিহত হন।
এই ঘটনায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া – ৩ আসনের সাংসদের নীরবতা সবাইকে ভাবিয়ে তুলেছে। কেননা একজন জনপ্রতিনিধি হিসেবে তিনি যথাযথ ভূমিকা রাখতে ব্যর্থ হয়েছেন।
Design & Developed By: RTD IT ZONE
Leave a Reply