ঈদুল আজহার ছুটি শেষে আজ শুক্রবার ভোর থেকে সারাদেশে কঠোর লকডাউন শুরু হয়েছে। এই কঠোর লকডাউন বলবৎ থাকবে আগামী ৫ আগস্ট রাত ১২টা পর্যন্ত। করোনা সংক্রমণের ঢেউ ঠেকাতে দুই সপ্তাহের এই কঠোর লকডাউন বাস্তবায়নে সরকার এবার ‘কঠোর’ অবস্থানে থাকবে। পুলিশ ও বিজিবি সদস্যদের পাশাপাশি মাঠে নেমেছে সেনাবাহিনী।
এবারের কঠোর লকডাউনে সরকারি, আধাসরকারি, বেসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ রয়েছে। বন্ধ রয়েছে কলকারখানা ও রপ্তানিমুখী গার্মেন্টস শিল্প। গতবারের মতোই বন্ধ রয়েছে সব ধরণের গণপরিবহন। জরুরি প্রয়োজন ব্যতিত ঘরের বাইরে বের হলেই গুণতে হবে জরিমানা, যেতে হতে পারে জেলে।
এই কঠোর লকডাউন ঘোষণার পর গ্রাম থেকে নগরমুখী মানুষের ঢল নামে। বৃহস্পতিবার দুপুর হতে মুন্সীগঞ্জের শিমুলিয়া, মাদারীপুরের বাংলাবাজার, পাবনার কাজিরহাট, মানিকগঞ্জের আরিচা ও পাটুরিয়া ঘাটে মানুষের ভিড় উপচে পড়ে। সংক্রমণের তোয়াক্কা না করে ফেরিতে গাদাগাদি করে পদ্মা পাড়ি দিয়ে ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা করেন তারা।
কঠোর লকডাউনে যা কিছু বন্ধ থাকবে: ১. ঈদের পর ২৩ জুলাই থেকে সব সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি অফিসসমূহ বন্ধ থাকবে। ২. সড়ক, রেল ও নৌ-পথে গণপরিবহণ (অভ্যন্তরীণ বিমানসহ) ও সব যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকবে। ৩. শপিংমল/মার্কেটসহ সব দোকানপাট বন্ধ থাকবে। ৪. সব পর্যটনকেন্দ্র, রিসোর্ট, কমিউনিটি সেন্টার ও বিনোদনকেন্দ্র বন্ধ থাকবে। ৫. সব শিল্প-কলকারখানা বন্ধ থাকবে। ৬. জনসমাবেশ হয় এ ধরনের সামাজিক অনুষ্ঠান (বিবাহোত্তর অনুষ্ঠান, ওয়ালিমা), জন্মদিন, পিকনিক, পার্টি ইত্যাদি বন্ধ থাকবে।
চলমান থাকবে: ১. কাঁচাবাজার এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত স্বাস্থ্যবিধি মেনে ক্রয়-বিক্রয় করা যাবে। ২. কঠোর লকডাউনে ব্যাংকিং কার্যক্রম নিয়ে গত ১৩ জুলাই এক প্রজ্ঞাপন জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। লকডাউন চলাকালে ব্যাংকগুলোতে লেনদেন হবে সকাল ১০টা থেকে বেলা দেড়টা পর্যন্ত। ৩. আইনশৃঙ্খলা এবং জরুরি পরিসেবা, যেমন-কৃষি পণ্য ও উপকরণ (সার, বীজ, কীটনাশক, কৃষি যন্ত্রপাতি ইত্যাদি), খাদ্যশস্য ও খাদ্যদ্রব্য পরিবহণ/বিক্রয়, ত্রাণ বিতরণ, স্বাস্থ্য সেবা, কোডিড-১৯ টিকা প্রদান, জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) প্রদান কার্যক্রম, রাজস্ব আদায় সম্পর্কিত কার্যাবলি, বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস/জ্বালানি, ফায়ার সার্ভিস, টেলিফোন ও ইন্টারনেট (সরকারি-বেসরকারি), গণমাধ্যম (প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া), বেসরকারি নিরাপত্তা ব্যবস্থা, ভাক সেবা, ব্যাংক, ভিসা সংক্রান্ত কার্যক্রম, সিটি কর্পোরেশন/পৌরসভা (পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, সড়কের বাতি ব্যবস্থাপনা ইত্যাদি কার্যক্রম), সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি, ফার্মেসি ও ফার্মাসিউটিক্যালসসহ অন্যান্য জরুরি/অত্যাবশাকীয় পণ্য ও সেবার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অফিসসমূহের কর্মচারী ও যানবাহন প্রাতিষ্ঠানিক পরিচয়পত্র প্রদর্শন সাপেক্ষে যাতায়াত করতে পারবে। ৪. সরকারি কর্মচারীরা নিজ নিজ কর্মস্থলে অবস্থান করবেন এবং দাপ্তরিক কাজসমূহ ভার্চুয়ালি (ই-নথি, ই-টেন্ডারিং, ই-মেইল, এসএমএস, হোয়াটসঅ্যাপসহ অন্যান্য মাধ্যম) সম্পন্ন করবেন। ৫. জরুরি পণ্য পরিবহনে নিয়োজিত ট্রাক/লরি/কাভার্ডভ্যান/নৌযান/পণ্যবাহী রেল/ফেরি এ নিষেধাজ্ঞার আওতাবহির্ভূত থাকবে। ৬. বন্দরসমূহ (বিমান, সমুদ্র, নৌ ও স্থল) এবং তৎসংশ্লিষ্ট অফিসসমূহ এ নিষেধাজ্ঞার আওতাবহির্ভূত থাকবে। ৭. টিকা কার্ড প্রদর্শন সাপেক্ষে টিকা গ্রহণের জন্য যাতায়াত করা যাবে। ৮. খাবারের দোকান, হোটেল-রেস্তোরাঁ সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খাবার বিক্রয় (অনলাইন টেকঅ্যাওয়ে) করতে পারবে। ৯. আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চালু থাকবে এবং বিদেশগামী যাত্রীরা তাদের আন্তর্জাতিক ভ্রমণের টিকেট/প্রমাণ প্রদর্শন করে গাড়ি ব্যবহার করে যাতায়াত করতে পারবেন। তাদের চলাচলের জন্য বিমান বাংলাদেশ, ইউএস বাংলা ও নভোএয়ারকে অভ্যন্তরীণ রুটে ফ্লাইট পরিচালনার অনুমতি দিয়েছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ-বেবিচক।
Design & Developed By: RTD IT ZONE
Leave a Reply