শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ০৬:৪০ অপরাহ্ন

ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস: জন্মদিনে পর্বত পরিমান ভালোবাসা

মাসুদ করিম
  • আপডেটের সময় : বৃহস্পতিবার, ১৮ নভেম্বর, ২০২১
  • ৫৭৩ বার দর্শন
ছবি - মাসুদ করিম।

ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস রাজনীতিতে পথ চলতে শুরু করেন সেই ধানমন্ডি থেকে, যে অন্তহীন পথ চলার সূচনা হয়েছিল তাঁর বাবা মায়ের শোনিত প্লাবিত পথ বেয়ে। তিনি স্থিরনিশ্চিত যে গ্রন্থী বেঁধে দিয়েছে তাঁর পথ তা বহুদূর বিস্তৃত।জীবনের অস্ফুট শৈশবে একই দিনে তিনি তাঁর মা বাবাকে হারান ১৯৭৫ এর ১৫ আগস্টের সেই

কাল রাত্রিতে। তাঁর বয়স তখন মাত্র-ই চার। জন্ম তার স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশের আত্মপ্রকাশের বছরেই ১৯৭১-এর ১৯ শে নভেম্বর। মাত্র চার বছর বয়সে যে অনাথ হলেন তার পর থেকে তার শৈশব যাপিত ও লালিত হতে থাকে মততাময়ী দাদির স্নেহ-ছায়ায়।কিন্তু দূর্ভাগ্য তার, ১/১১ সময় তার দাদিও তাকে ছেড়ে না ফেরার দেশে চলে যান। এই ঘোর দুর্যোগে তার আত্মীয় স্বজনেরা কেউ কারাগারে, কেউ আত্মগোপনে । এহেন প্রতিকুল সময়ে যাবতীয় দায়িত্ব হিশেবে তিনি দাদির শেষ মৃত্যু একাকী নীরবে সম্পন্ন করেন, কান্না বুকে চেপে রেখে। তিনি যেন জীবনানন্দের ভাষায় ‘বেদনার সন্তান’।

যাকে আজীবন এমন দহন ও জ্বালার মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে, পরের ব্যথা তিনিই তো বুঝবেন, মানুষের ম্লান মুখকে তিনি-ই তো আনন্দে ভরিয়ে দেবেন। জনগনের দুঃখ বেদনা পাওয়া না পাওয়ার আনন্দ ও বিষাদ তো তিনিই সকলের চেয়ে আগে অনুভব করবেন। সুশিক্ষিত, মার্জিত, নিষ্ঠাবান, পরদুঃখকাতর ও সর্বোপরি সজ্জন এই মানুষটিকে তাঁর নির্বাচনী এলাকার জনগন যে স্নেহ, ভালবাসা, আস্থা ও সম্মানের সঙ্গে নির্বাচিত করেন, নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে তার যোগ্য প্রতিদান তিনি দিয়ে আসছিলেন। তিনি জনগনের সুখ দুঃখের ভাগীদার হতে আরো বেশী অঙ্গীকারবদ্ধ আজ।

প্রথমবার তিনি প্রকাশ্যে রাজনীতিতে আসেন ২০০৮ সালে। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়ে ঢাকা ১২ আসন থেকে ২০০৮ এর ২৯ ডিসেম্বর নির্বাচিত হন। সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর তিনি রাজনীতিতে আধুনিকতা আনেন।এরপর ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দ্বিতীয়বারের মত সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন একই নির্বাচনী এলাকা থেকে।এরপর ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়ে ঢাকা ১০ আসন থেকে তৃতীয়বারের মত সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তৃতীয়বারের মত সাংসদ নির্বাচিত হওয়ার পর তিনি তেমনটি সময় না পেলেও বিগত ১২ বছরে তিনি ঢাকা ১০ আসনকে এমন এক উচ্চতায় নিয়ে গেছেন যা কিনা ঢাকা শহরের অন্যান্য নির্বাচনী এলাকার জন্য একটা আধুনিক রোল মডেল হয়ে আছে যার ধারাবাহিকতা এখনও বজায় আছে। জনশ্রুতি রয়েছে যে যারা দীর্ঘদিন রাজনীতি করে অথবা কয়েকদশক রাজনীতি করেও রাজনীতিতে তাদের কোন মূল্যায়ন হয়নি তারা তাদের যোগ্যতার ভিত্তিতে রাজনীতির ময়দানে সঠিক মর্যাদা পেয়েছেন আর তা পেশীশক্তি প্রদর্শন করে নয়, যার যার যোগ্যতার মাপকাঠিতে। রাজনীতিতে অসমপ্রতিযোগিতা, গলাবাজি ধীরে ধীরে ঢাকা – ১০ নির্বাচনী এলাকা থেকে বিদায় নেয়। তাই ষ্পষ্টতই বলা যায়, ২০০৮ এর পূর্বের তিন দশক ঢাকা ১০ এর রাজনীতিতে যে গ্রহণযোগ্যতা, বিশ্বাস, সম্মান, সৌহার্দ, ভাতৃত্ব, নেতৃত্বের অভাব ছিল তা ব্যারিস্টার তাপসের এক যুগের সময়কালেই পূরণ হয়ে যায়। সত্যিকথা বললে বলতে হয়, বিগত এক যুগ (২০০৮-২০১৯) ঢাকা – ১০ এর অধিবাসীরা গর্ববোধ করতেন যে, আমি ব্যারিস্টার তাপসের এলাকার লোক। তাঁর এলাকার ভোটার হওয়া মাত্রই ব্যারিস্টার তাপসের দরজা খোলা। তারমানে এই নয় যে, অন্য এলাকার কেউ কোন সহযোগিতা পাবেন না।
যদিও বার বার এসে যায় তবুও এবার একটি ভিন্ন প্রসঙ্গে আসি। ২০১৩ সালের ডিসেম্বরের কথা। হাজারীবাগ থেকে আমার কাছে একজন এলেন। তার স্বামী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। অর্থের অভাবে চিকিৎসা হচ্ছে না। মহিলার অসুস্থ স্বামী একসময় জাপানে ছিলেন এবং আমাকে ভালভাবে চেনেন। জাপানে আমার বিভিন্ন সামাজিক কর্মকান্ডে আমাকে সহযোগিতা করতো। যেমন করতো ধানমন্ডি থানা আওয়ামী লীগের ত্রাণবিষয়ক সম্পাদক কামাল আব্দুল মনিম।

আনোয়ার খান হাসপাতালে চিকিৎসাধীন জাপানের মোস্তোফা। অসুস্হ হয়ে হাসপাতালের বিছানায় ছটফট করছে। ওর ভাই শওকত রায়হান নাকি কোন সহযোগিতা করছে না বা করার ক্ষমতা নেই। মোস্তোফার স্ত্রীই আমাকে প্রথম জানালেন যে, কোনভাবে যদি একটু ব্যারিস্টার তাপসের সাথে সাক্ষাৎ করা যায় তবে তার আর কোন সমস্যা থাকবে না। উনি নাকি কাউকে খালি হাতে ফেরান না।

তখন আমার একটি কথা মনে হলো। ২০১০ সালে জাতীয় জাদুঘরে আমার সম্পাদিত কলা্বাগান বার্তার যুগপূর্তি অনুষ্ঠানে প্রয়াত সাংবাদিক হাসান শাহরিয়ার বলেন, “ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস একজন দিলওয়ালা মানুষ”। সে সময়ের তথ্যমন্ত্রী আবুল কালাম আজাদের পাশে বসা ব্যারিস্টার তাপস তখন লজ্জিত হয়ে হাসছিলেন। সামনে বসা অধ্যাপক মুনতাসীর মামুনও হাসছেন। উক্তি সমর্থনের হাসি।আমি এরপর ব্যারিস্টার তাপসকে ছোট একটি চিরকুটে সাড়েতিন লাইনে অনুরোধ করি সহযোগিতা করার জন্য। হাসপাতালের অনেক টাকা বিল হয়েছে। এরপর তিনি মোস্তোফার স্ত্রীকে ৫০ হাজার টাকা দিয়ে সহযোগিতা করেন। কি সাংঘাতিক কথা! ব্যারিস্টার তাপসের রাজনৈতিক দর্শনের প্রতি আমার আলাদা একটা ভালোবাসা তৈরী হয়। সেই ভালোবাসার টানেই এখনও তাঁর পাশেই আছি ইতিহাসের অবলোকনকারী হিসেবে।

বাংলাদেশের সংসদ সদস্যদের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সাধারণ নাগরিকদের তাদের সাংসদের সাক্ষাৎ পাওয়া দুস্কর। নানান ব্যস্ততার জন্যই হয়তো এমনটি হয়। কিন্তু ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস এর ব্যতিক্রম। এমনকি দলের কোন নেতা নতুন পদে অধিষ্ঠিত হলে তারা আর ফোন ধরতে চায় না। এমন দৃষ্টান্ত কলাবাগানেই আছে।

আমার ক্ষুদ্র অভিজ্ঞতার আলোকে আমি তাঁর মত বিচক্ষণ এবং ক্লিন ইমেজের সাংসদের সাক্ষাৎ আমার জীবনে পাইনি। ঢাকা ১০ এর সাংসদ থাকাকালে সপ্তাহের নির্দিষ্ট কয়েকটি দিন তিনি অসংখ্য সাক্ষাৎপ্রার্থীর কথা অতি আগ্রহের সাথে শুনেছেন এবং তাৎক্ষনিক সমাধান দেয়ার চেষ্টা করেছেন। কাউকেই তিনি নিরাশ করেন নি। এখনও তিনি সময় পেলেই নিজের দৈনন্দিন কাজ সম্পন্ন করে এবং ‍ছুটির দিনে তার রাজনৈতিক কার্যালয়ে সময় ব্যয় করেন, নানান জনের সমস্যার কথা শোনেন। এমন সাংসদ বাংলাদেশে আর ক’জন আছেন তা আমার জানা নেই। তাই মানুষ বারবার ছুটে যান তাঁর কাছে। তারা মনে করেন আমাদের শেষ আশ্রয় ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস। আর এখানেই তাঁর এবং আমাদের সবার সার্থকতা।

এই মানুষটির সাথে আমার প্রথম ঘনিষ্টভাবে পরিচয় হয় আমাদের কলাবাগানের বাসায়। বিজয় দিবসের দিনে। ২০০৮ সালের ১৬ ডিসেম্বর দুপুরে আমার প্রয়াত ভাগ্নী এ্যাডভোকেট ফজিলাতুননেসা বাপ্পী আমাকে ফোন করে জানায়, মামা, তাপস ভাইসহ আমরা আপনার বাসায় আসছি। সবাই রেডি থাকেন। পরে জানতে পারি নির্বাচনী প্রচারাভিযানের অংশ হিসেবেই উনি কলাবাগানে আসছেন। তিনি তখনই তাঁর ফোন নম্বরটি আমাকে দেন। যে কোন প্রয়োজনে যোগাযোগ করতে পারেন। আমি অবাক হই। মানুষটি আর যাই হোক মানুষের কাজে লাগবে। আমার ধারণা বিফলে যায়নি।
আমার সুযোগ ও সৌভাগ্য হয়েছে এই মানুষটিকে খুব কাছে থেকে দেখার। তাঁর খুব কাছাকাছি থেকেই তাঁর রাজনৈতিক, সামাজিক কর্মকান্ড অবলোকন করেছি এক দশক। তিনি নিজস্ব একটি রাজনৈতিক দর্শন সৃষ্টি করেছেন যার সুবাদে তিনি যেখানেই যান সেখানেই মানুষের ঢল নেমে আসে। পেয়েছেন অগনিত মানুষের পর্বত পরিমান ভালোবাসা। এইতো গত ৩ নভেম্বর রাজধানী ঢাকার কলাবাগানের মিরপুর রোড সংলগ্ন কলাবাগান মাঠ ও শহীদ শেখ রাসেল শিশুপার্কের উদ্বোধন করা হয়েছে। মাঠের উদ্বোধন করেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস। এক সময়ের ঢাকা ১০ আসনের জনপ্রিয় সাংসদ যিনি বর্তমানে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র, সেই ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপসকে এক নজর দেখার জন্য শতশত লোকের সমাগম হয় মিরপুর রোডে। আওয়ামী লীগের দলীয় নেতাকর্মী ছাড়াও সাধারণ মানুষের ভীড় ছিল লক্ষণীয়। জনশ্রোত ঠেকাতে পুলিশকে হিমশিম খেতে হয়।

এমন জনপ্রিয় তিনি তাঁর কাজ এবং যোগ্যতার মাধ্যমেই হয়েছেন। শুরুতেই আমি উল্লেখ করেছিলাম, যে সময়টি শিশুকাল থেকেই এতিম সেই মানুষটিই অন্যের কষ্টের কথা, বেদনার কথা অনুধাবন করতে পারতেন।আমি আমার সকল প্রকার সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে সর্বদা তাঁকে পাশে পেয়েছি। বাংলাদেশে জাপান দূতাবাসের সহযোগিতায় আমরা ইকেবানা স্কুল পরিচালনা করছি। ইকেবানা স্কুলের শুরুটা ১৯৭৪ সালে জাপান দূতাবাসে এবং এই স্কুলের প্রথম ব্যাচের ছাত্রী ছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কনিষ্ঠ কন্যা শেখ রেহানা। দূতাবাসের কর্মকান্ড বৃদ্ধি পাওয়ায় এখন আমরাই তা পরিচালনা করছি। ইকেবানার কলাবাগান স্কুলের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে শত ব্যস্ততার মধ্যেও ফরাসী দূতাবাসের সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস এসেছিলেন প্রধান অতিথি হয়ে। সভাপতিত্ব করেছিলেন প্রয়াত জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান। এই ইতিহাস বলে শেষ করা যাবে না।

ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে বিজয়ী হয়ে মেয়রের দায়িত্ব নিয়ে অতীতের জঞ্জাল পরিস্কার করে একের পর এক পরিকল্পনামাফিক ঢাকা দক্ষিণের উন্নয়নের কাজের যে গতি তৈরী করেছেন তা আমরা নগরবাসী অতীতে দেখিনি বা দেখার সৌভাগ্য হয়নি। যার সুফল নগরবাসী ধীরে ধীরে ভোগ করতে শুরু করেছেন। নগরবাসী আধুনিক ঢাকার সুবাতাস ধীরে ধীরে পাবেন এমনটিই আশা করছে সবাই। আমি মনে প্রাণে বিশ্বাস করি ভাল কাজ করার অনুকুল পরিবেশ এখনও পুরোপুরি তৈরী না হলেও তিনি তাঁর নিজস্ব সততা, অভিজ্ঞতা, মেধাকে কাজে লাগিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যাবেন। দীর্ঘ দিনের জঞ্জাল সরিয়ে আগামির পথে এগিয়ে যাবেন আমাদের ভালোবাসাকে সারথী করে।

আজ ১৯ নভেম্বর এই মানুষটির জন্মদিন। তিনি কখনও তার জন্মদিন ঘটাকরে পালন করেন না। ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস এর জন্মদিনে আমার পর্বত পরিমান ভালোবাসা।

এই পোস্টটি আপনার সামাজিক মিডিয়াতে শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও খবর

Address

Registered Office: 44/1 North Dhanmondi (5th Floor) Kalabagan, Dhaka- 1205, Bangladesh Email: kalabaganbarta@gmail.com / admin@kalabaganbarta.com Telephone: +88-02-58154100 Editorial Office: Karim Tower 44/7-A&B, West Panthapath, Kalabagan, Dhaka-1205

Correspondences

USA: Mainul Haq (Atlanta) Kolkata: Sunirmal Chakraborty Mobile: +91-8017854521 Ashim Kumar Ghosh Address: 3D K.P Roy Lane, Tollygunge Phari Kolkata- 700 033, WB, India Mobile: +91-9874891187                                                                                                           S. M. Ashikur Rahman (Technical Adviser)
Author: Masud Karim © All rights reserved 2020. Kalabaganbarta

Design & Developed By: RTD IT ZONE