বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক নিখিল রঞ্জন ধরের ব্যাংক হিসাবে ১০ কোটি টাকার লেনদেনের তথ্য পেয়েছেন গোয়েন্দারা। প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় এ লেনদেন হয়েছে কি না, এ বিষয়ে খোঁজ নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছে মামলার তদন্ত সংস্থা ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। রাষ্ট্রায়ত্ত পাঁচটি সরকারি ব্যাংকের নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের তদন্তে নাম এসেছে এই অধ্যাপকের।
ব্যাংকে লেনদেনের বিষয়ে ডিবির তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার ওয়াহিদুল ইসলাম সোমবার বলেন, ‘প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় গ্রেপ্তার এক আসামির জবানবন্দিতে বুয়েট শিক্ষকের নাম এসেছে। বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখছি। প্রশ্নপত্র ফাঁসের টাকা তাঁর ব্যাংকে লেনদেন হয়েছে কি না, সেটিও তদন্ত করা হচ্ছে। এ–সংক্রান্ত তথ্য চেয়ে আমরা সংশ্লিষ্ট ব্যাংক এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকে চিঠি দেব।’ তবে ডিবির একটি সূত্র জানিয়েছে, অধ্যাপক নিখিল রঞ্জন ধরের ব্যাংক হিসাবে ১০ কোটি টাকা লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে। প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় এ লেনদেন হয়েছে কি না, তদন্তে সে বিষয়ে জোর দেওয়া হচ্ছে।বুয়েটের ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড প্রোডাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রধানের দায়িত্ব পালন করছিলেন অধ্যাপক নিখিল রঞ্জন ধর। তবে প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় তাঁর নাম আসায় সোমবার তাঁকে ওই দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। ঘটনা তদন্তে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি করা হয়েছে।
৬ নভেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংকের অধীন পাঁচটি সরকারি ব্যাংকের ১ হাজার ৫১১টি ‘অফিসার ক্যাশ’ পদের নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। বিকেলে এক ঘণ্টার পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর একাধিক প্রার্থী অভিযোগ করেন, পরীক্ষা শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ১০০টি প্রশ্নের প্রিন্ট করা উত্তরপত্র ফেসবুকে পাওয়া গেছে। ওই পরীক্ষা নেওয়ার দায়িত্বে ছিল আহ্ছানউল্লাহ ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি।
প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ ওঠার পর পরীক্ষাটি বাতিল করে বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকার সিলেকশন কমিটি। এ ঘটনায় আহ্ছানউল্লাহ বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক কর্মচারীসহ ১১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁদের একজনের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে বুয়েটের অধ্যাপক নিখিল রঞ্জন ধরের নাম এসেছে।
নিখিল রঞ্জন ধর বলেন, ‘আমি ১৯৮৬ সাল থেকে বুয়েটের শিক্ষক হিসেবে কর্মরত আছি। প্রতিষ্ঠান থেকে পাওয়া অর্থ আমার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা হয়। সেখানে ১০ কোটি টাকা জমেছে। এটা আমার উপার্জনের টাকা। আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হচ্ছে। আমি কোনো প্রশ্নপত্র ফাঁসে জড়িত নই। বলা হচ্ছে, আমি ছাপাখানা থেকে প্রশ্নপত্র ব্যাগে ঢুকিয়ে নিয়ে আসতাম। ষড়যন্ত্র করে আমাকে ফাঁসানো হচ্ছে।’
আহ্ছানউল্লাহ ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির এক কর্মচারীর জবানবন্দির বরাত দিয়ে ডিবি কর্মকর্তারা জানান, আহ্ছানিয়া মিশন ছাপাখানায় সমন্বিত পাঁচ ব্যাংকের প্রশ্নপত্র ছাপা হয়। প্রশ্নপত্র ছাপার দিন (২ নভেম্বর ২০২১) সকাল থেকে রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্ত বুয়েট শিক্ষক নিখিল রঞ্জন ধর ওই ছাপাখানায় ছিলেন। আসার সময় প্রশ্নের দুটি কপি তিনি সঙ্গে নিয়ে বের হন।
Design & Developed By: RTD IT ZONE
Leave a Reply