রাজধানী ঢাকার কলাবাগানের উত্তর ধানমন্ডি এলাকার তেঁতুলতলা মাঠ শিশু-কিশোরদের জন্য খুলে দেওয়ার দাবিতে আজ শুক্রবার (৪ ফেব্রুয়ারি) এক মানববন্ধন করেছেন এলাকাবাসী।
তীব্র শীতের বৃষ্টিকে উপেক্ষা করে শুরুতে এলাকাবাসী শিশুদের নিয়ে পশ্চিম পান্থপথের ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের বারান্দায় সমবেত হন। পরে তারা মানববন্ধন শেষে মাঠের বাইরে অবস্থান করেন। এ সময় তারা মাঠ রক্ষার জন্য নানান স্লোগান দেন। সকল বয়সের মানুষের শ্লোগানে পুরো এলাকা মুখরিত হয়ে উঠে।
মাঠরক্ষায় এলাকাবাসীর সঙ্গে শিশু-কিশোরদের সরব উপস্থিতি ছিল। শিশু-কিশোরদের হাতের ব্যানারে লেখা ছিল- ‘খেলার জন্য মাঠ চাই, ‘খেলার জন্য মাঠ চাই’; ‘এই তেঁতুলতলা মাঠ আমাদের প্রাণের দাবি, সমগ্র কলাবাগানবাসীর দাবি।’
মানববন্ধনে তারা জানান, ভূমিদস্যুরা তাদের অপশক্তি প্রয়োগ করে তেঁতুলতলা মাঠ বেআইনি ভাবে জবরদখল করার চেষ্টা করছে। জানা গেছে, বৃহত্তর কলাবাগান (উত্তর ধানমন্ডি, লেক সার্কাস, বশির উদ্দিন রোড, কলাবাগান প্রথম ও দ্বিতীয় লেন) এলাকায় একমাত্র খেলার মাঠ এটি। বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভের পর থেকেই উত্তর ধানমন্ডিতে অবস্থিত একটি উন্মুক্ত খেলার মাঠ আছে হিসাবে পরিচিত তেঁতুলতলা মাঠ। কিন্তু এখানে বর্তমানে কলাবাগান থানার নিজস্ব একটি বহুতল ভবন নির্মাণের সিদ্ধান্ত হয়েছে। তাই এলাকাবাসী মাঠ রক্ষায় আন্দোলনে নেমেছে এবং মাঠ রক্ষায় সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনায় এই মানববন্ধন করেছে।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, ‘এই মাঠটি আমাদের এলাকার একমাত্র সম্বল। আমাদের কারও কাছে জীবনের ৫০টি বছর এই মাঠে খেলাধুলা করে সময় কেটেছে। এই মাঠের সঙ্গে আমাদের স্মৃতি জড়িত, অনেক ইতিহাস রয়েছে। এই মাঠে খেলাধুলা আর পাশাপাশি ঈদের জামাত এবং আমাদের এলাকার মৃত ব্যক্তিদের জানাজা হয়ে থাকে। পাশাপাশি প্রতিবছর বিভিন্ন উৎসবে সবার অংশগ্রহণে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়ে থাকে। সত্তর দশক থেকে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন মহল মাঠটি দখল করার চেষ্টা করলেও এলাকাবাসী নিজেরাই তা প্রতিহত করে। এই দীর্ঘ ৫০ বছরে যারা মাঠটি রক্ষায় এগিয়ে এসেছিলেন কমবেশি তাদের প্রত্যেককে নানান হয়রানির শিকারও হতে হয়েছে।’
এলাকাবাসী আরও বলেন, ‘গত ৩১ জানুয়ারি আমরা অবাক হই এবং পুলিশের মাধ্যমে জানতে পারি যে এই মাঠে কলাবাগান থানা ভবন নির্মাণ করা হবে। সেদিন আনুমানিক সকাল ১১টায় কলাবাগান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার নেতৃত্বে একদল পুলিশ মাঠে খেলারত শিশুদের মাঠ থেকে বের করে দেয় এবং তড়িঘড়ি করে মাঠে কাঁটাতারের ব্যারিকেড দিয়ে দেয়। পুলিশের মৌখিক ভাষ্য এখানে কলাবাগান থানা স্থাপন করা হবে তাই শিশুদের আর খেলার মাঠে প্রবেশ করার প্রয়োজন নেই এবং শিশুদের খেলাধূলায় বাধা সৃষ্টি করে। পুলিশের এ ধরনের আচরণে আমরা শুধু বিস্মিতই হয়নি বরং হতাশ হয়েছি।’
সৈয়দা রত্মা বলেন, `প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার পাশাপাশি সন্তানদের বেড়ে উঠার জন্য খেলাধুলা, বিনোদন অত্যন্ত অপরিহার্য। তিলোত্তমা এই রাজধানী ঢাকা শহরে দিন দিন শিশুদের বিনোদন এবং খেলাধুলার স্থান সংকুচিত হয়ে আসছে। খোলা আকাশের অভাবে আমরা দিন দিন আমাদের সন্তানদের চার দেয়ালের মধ্যে আবদ্ধ করে ফেলছি`।
মানববন্ধনে অংশ নেয় স্থানীয় বর্ষীয়াণ বাসিন্দা কামরুজ্জামার টুনু, শংকর সাঁওজাল, ডা. পার্থ, স্থানীয় বাসিন্দা সমাজকর্মী সৈয়দা রত্মাসহ স্থানীয়রা।
এলাকাবাসীরা বলেন, `এই “তেঁতুলতলা মাঠ”টি যদিও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সম্পত্তি নয় তবুও আমরা আমাদের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপসের কাছে সহযোগিতা চাইছি। কেননা তিনি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন স্থানে ছোটোদের খেলার মাঠ ও পার্ক উদ্ধার করে নাগরিকদের জন্য মুক্ত আলো বাতাসের পরিবেশ তৈরী করেছেন। আমাদের বিশ্বাস আমাদের প্রাণপ্রিয় মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস আমাদের ডাকে সাড়া দিয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের সাথে আলোচনা করে সহযোগিতার জন্য এগিয়ে আসবেন`“।
জানা যায় এই মাঠটি বিহারি কোনো এক ব্যক্তির। তিনি স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় দেশ ত্যাগ করেছিলেন। যে কারণে মাঠটি অর্পিত সম্পত্তি হিসেবে রাজউকে অন্তর্ভুক্ত।
Design & Developed By: RTD IT ZONE
Leave a Reply