রবিবার, ০৫ মে ২০২৪, ০৪:৩০ অপরাহ্ন

তেঁতুলতলা মাঠ: মধ্যরাতে মা–ছেলেকে ছাড়ল পুলিশ

বাসনাত বাহাদুর
  • আপডেটের সময় : রবিবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২২
  • ২৮৫ বার দর্শন

অবশেষে নানান জল্পনা-কল্পনার পর মুচলেকা নিয়ে সোমবার প্রথম প্রহরে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয় বলে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন কলাবাগান থানার এসআই অর্জুন রায়। রাত সোয়া ১২টার দিকে সৈয়দা রত্নার মেয়ে শেউতি সাগুফতা কলাবাগান বার্তাকে বলেন, “মা এবং ভাইকে থানা থেকে ছেড়ে দিয়েছে, বাসায় নিয়ে যাচ্ছি।”

গতকাল রোববার বেলা ১১টার দিকে কলাবাগানের তেঁতুল তলা মাঠের সামনে থেকে সমাজকর্মী রত্না ও তার তরুণ ছেলে প্রিয়াংশুকে ধরে কলাবাগান থানা নিয়েছিল পুলিশ। ১৩ ঘণ্টা পর তারা থানা থেকে ছাড়া পেলেন।

সাংস্কৃতিক সংগঠন উদীচীর সদস্য রত্না তেঁতুল তলা মাঠ রক্ষার দাবিতে সোচ্চার ছিলেন। ওই মাঠ বরাদ্দ নিয়ে কলাবাগান থানার নতুন ভবন করা হচ্ছে।

শেউতি বলেন, “আন্দোলন না করার এবং আন্দোলন করলে পুলিশ যে কোনো আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে পারবে, এই শর্তে তাদের মুক্তি দিয়েছে।”

সেক্ষেত্রে এই মাঠটি রক্ষার আন্দোলনের কী হবে- জানতে চাইলে তিনি বলেন, “সে ব্যাপারে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।”

রত্নাকে আটকে রাখলেও তার বিরুদ্ধে কোনো মামলা করেনি পুলিশ; যদিও আটকানোর সময় পুলিশের বিরুদ্ধে বাধা দেওয়ার অভিযোগ তুলেছিলেন ডিএমপির নিউ মার্কেট জোনের সরকারী কমিশনার শরীফ মোহাম্মদ ফারুকুজ্জামান।

রত্নাকে আটকের পর মানবাধিকারকর্মীরা তার প্রতিবাদ জানাচ্ছিলেন। খুশি কবিরসহ অনেকে সেখানে ছুটেও যান। উদীচীসহ বিভিন্ন সংগঠনের কর্মীরা কলাবাগান থানার সামনেও অবস্থান নিয়েছিলেন। সাথে ছিলেন কলাবাগানের বিশকিছু সমাজকর্মী যারা দীর্ঘদিন ধরে রত্নার সাথে মাঠ রক্ষার জন্য কাজ করে আসছিলেন।

বটতলা নামের একটি সংগঠনের পরিচালক মিজানুর রহমান, “রাতে থানার সামনে আমরা প্রতিবাদ করেছি। সেখানে বেলার সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানসহ বিভিন্ন সংগঠনের শতাধিক কর্মী ছিলেন।”

উত্তর ধানমন্ডির ভেতরে ছোট্ট তেঁতুল তলা মাঠ

১৯৭২ সাল থেকেই পশ্চিম পান্থপথের দক্ষিণ পাশে (স্কয়ার হাসপাতালের উল্টো দিকে) কলাবাগানের উত্তর ধানমন্ডির ভেতরে ছোট্ট তেঁতুল তলা মাঠটিতে ওই এলাকার শিশুরা খেলে, নানা অনুষ্ঠানের আয়োজনও চলে সেখানে।

মাঠটিতে কলবাগান থানা ভবন করার ঘোষণা দেওয়ার পর রত্নার নেতৃত্বে স্থানীয় একদল ওই মাঠটি রক্ষার আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছিলেন।

পুলিশ এর আগে সেখানে নির্মাণকাজ শুরু করতে গেলে স্থানীয়দের বিশেষ করে নারীদের বিরোধিতার মুখে পড়ে। এরপর ওই মাঠ ঘিরে পুলিশ কাঁটাতারের বেড়া দিলেও রত্না তার বিরোধিতা করে যাচ্ছিলেন।

গতকাল রোববার পুলিশ ওই মাঠে সীমানা প্রাচীর নির্মাণ শুরু করলে রত্না তার ছেলেকে নিয়ে সেখানে গিয়েছিলেন। ফেইসবুকে তা লাইভ করার এক পর্যায়ে পুলিশ তাদের ধরে থানায় নিয়ে যায়।

তখন পুলিশ কর্মকর্তা ফারুকুজ্জামান গণমাধ্যমকে বলেছিলেন, “ওই জায়গাটি সকল নিয়ম মেনে সরকার বরাদ্দ দিয়েছে। সৈয়দা রত্না সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করছে। তাকে আপাতত আটক করা হয়েছে।”

রত্নাকে আটকের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যান অধিকারকর্মী খুশি কবির, সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, বেলার সংগঠক আলমগীর কবির, আইন ও সালিশ কেন্দ্রের আবু আহমেদ ফয়জুল কবিরসহ উদীচীর নেতা-কর্মীরা।

এলাকাবাসীও জড়ো হন সেখানে। তাদের একজন নারী শামীম আরা বলেন, তারা স্বাধীনতার আগে থেকে এই জায়গাটি খোলা মাঠ হিসাবে দেখে আসছেন। বিএনপি ও এরশাদ আমলে এমনকি বর্তমান সরকারের আমলেও বেশ কয়েকবার মাঠ দখলের চেষ্টা করা হয়েছিল, কিন্তু এলাকাবাসী প্রতিরোধ করেছিল। এলাকাবাসীদের কারো কারো বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে হয়রানিমূলক মামলাও দেয়া হয়েছিল।

ঢাকাতে শিশুদের খেলার জায়গার সঙ্কটের মধ্যে মাঠটি ঘিরে পুলিশের দেয়াল নির্মাণের কাজ দেখে শামীম আরা বলেন, “আজ মনে হচ্ছে, আমার সন্তানকে হারাতে যাচ্ছি।”

আবাসিক এলাকায় শিশুদের জন্য ওই মাঠটি রক্ষার জন্য দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন চালিয়ে আসছেন রত্না। পুলিশ এর আগে সেখানে নির্মাণকাজ শুরু করতে গেলে স্থানীয়দের বিশেষ করে নারীদের বিরোধিতার মুখে পড়ে। এরপর ওই মাঠ ঘিরে পুলিশ কাঁটাতারের বেড়া দিলেও রত্না তার বিরোধিতা করে যাচ্ছিলেন।

পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, থানা ভবনের জন্য ঢাকা জেলা প্রশাসক অনুমতি দেওয়ার পর তারা কাজ শুরু করেছেন। বিভিন্ন মন্ত্রণালয় শেষে সর্বশেষ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় হয়ে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে এই স্থানটি থানা কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, রত্না ফেইসবুক লাইভে এসে পুলিশ সম্পর্কে ‘বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়াচ্ছিলেন’। এজন্য তাকে আটক করা হয়েছে। তবে তার বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া বা গ্রেপ্তার দেখানোর বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত এখনও হয়নি।

এলাকাবাসী তাদের ছেলে-মেয়েদের খেলার এ স্থান মাঠ হিসেবেই দেখতে চায়। সেজন্য সৈয়দা রত্নার নেত্বত্বে তারা মানববন্ধনসহ নানা কর্মসূচি পালন করছিল।

মাঠটিতে পুলিশের দেয়াল নির্মাণের কাজ দেখে শামীম আরা বলেন, “আজ মনে হচ্ছে, আমার সন্তানকে হারাতে যাচ্ছি।”

ফেইসবুকে অনেকে রত্নাকে আটকের নিন্দা জানিয়ে তার মুক্তি দাবি করেছেন। 

বিশিষ্ট সাংবাদিক সৈয়দ ইসতিয়াক রেজা তার ফেসবুকে এক মন্তব্যে বলেন, কলাবাগানের তেঁতুলতলা মাঠকে থানা বানানোর প্রতিবাদ করায় মায়ের সাথে ১৭ বছরের ছেলেকে আটক করেছে পুলিশ……এটি শিশু আইনের লংঘন….এর আগে এই খেলতে যাওয়া কয়েক শিশুর কান ধরে ওঠবস করিয়েছিল পুলিশ। শিশুদের প্রতি এত অসংবেদনশীল এরা!

 

এই পোস্টটি আপনার সামাজিক মিডিয়াতে শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও খবর

Address

Registered Office: 44/1 North Dhanmondi (5th Floor) Kalabagan, Dhaka- 1205, Bangladesh Email: kalabaganbarta@gmail.com / admin@kalabaganbarta.com Telephone: +88-02-58154100 Editorial Office: Karim Tower 44/7-A&B, West Panthapath, Kalabagan, Dhaka-1205

Correspondences

USA: Mainul Haq (Atlanta) Kolkata: Sunirmal Chakraborty Mobile: +91-8017854521 Ashim Kumar Ghosh Address: 3D K.P Roy Lane, Tollygunge Phari Kolkata- 700 033, WB, India Mobile: +91-9874891187                                                                                                           S. M. Ashikur Rahman (Technical Adviser)
Author: Masud Karim © All rights reserved 2020. Kalabaganbarta

Design & Developed By: RTD IT ZONE