বানিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে বেসরকারি একটি কন্টেইনার ডিপোতে আগুনের পর ভয়াবহ বিস্ফোরণে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৪৯ জন হয়েছে; দগ্ধ ও আহত দুই শতাধিক ব্যক্তিকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে হাসপাতালে।
এদিকে আহতদের মধ্যে শ্রমিক, পুলিশ সদস্য ও ফায়ার সার্ভিসকর্মীরা রয়েছেন। এদের মধ্যে বেশিরভাগকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। অনেককে বেসরকারি হাসপাতালে নেওয়া হয়।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ওই ডিপোতে ৫০ হাজারের বেশি কনটেইনার রয়েছে। কেমিক্যাল কনটেইনার থেকে আগুনের সূত্রপাত বলে ধারণা করা হচ্ছে। আগুন লাগার পর কনটেইনারগুলো একের পর এক বিস্ফোরিত হতে থাকে। বিস্ফোরণে ঘটনাস্থল থেকে তিন-চার কিলোমিটার এলাকা কেঁপে ওঠে। আশপাশের বাড়ি-ঘরের জানালার কাচ ভেঙে পড়ে।
অগ্নিদগ্ধদের জরুরি চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রামের সব চিকিৎসকের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। বেসরকারি হাসপাতালগুলোকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে সীতাকুণ্ডে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় আহতদের চিকিৎসা দেওয়ার জন্য। বেসরকারি হাসপাতালসহ সব হাসপাতাল প্রস্তুত রয়েছে আহতদের চিকিৎসা দেওয়ার জন্য।
চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ শামীম আহসান গণমাধ্যমকে বলেন, ছুটিতে থাকা সব চিকিৎসক-নার্সকে জরুরি ভিত্তিতে হাসপাতালে আনা হয়েছে। এতসংখ্যক রোগীকে চিকিৎসা দেওয়ার মতো পর্যাপ্ত ওষুধ মজুত নেই। এ জন্য জরুরি ভিত্তিতে ওষুধ, স্যালাইন, পেইন কিলার নিয়ে সহযোগিতার হাত বাড়ানোর অনুরোধ করছি সবাইকে। সেই সঙ্গে আশপাশের উপজেলা ও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে চিকিৎসক আনা হয়েছে। তবু চিকিৎসা দিয়ে পেরে উঠছি না আমরা।
চট্টগ্রামের সহকারী কমিশনার এবং জেলা প্রশাসকের স্টাফ অফিসার প্লাবন কুমার বিশ্বাস জানান, রাত ১০টা পর্যন্ত ৪৯ জনের মৃত্যুর তথ্য তারা পেয়েছেন। তাদের মধ্যে ২৩ জনের পরিচয় জানা গেছে। নিহতদের মধ্যে ৯ জন ফায়ার সার্ভিসের কর্মী।
সিভিল সার্জনের কার্যালয় জানিয়েছে, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ, পার্কভিউ হাসপাতাল ও অন্যান্য হাসপাতালে আহত বা দগ্ধ মোট ১৮২ জন ভর্তি আছেন। ওই দুই হাসপাতাল থেকে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে ১২ জনকে। আরও ১০০ জনের বেশি রোগী চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন।
আহত ও দগ্ধদের মধ্যে অন্তত ১১ জন পুলিশও রয়েছেন। তাদের মধ্যে দুই পুলিশ সদস্যকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।
সীতাকুণ্ডের কদমরসুল এলাকায় বিএম কনটেইনার ডিপোতে শনিবার রাতে লাগা আগুন এখনও নিয়ন্ত্রণে আসেনি। এ অবস্থায় রোববার সকাল ১০টার দিকে অভিযানে যোগ দিয়েছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রায় ২০০ জনের একটি দল।
এর আগে সকাল পৌনে ১০টার দিকে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনীর দলের যোগ দেওয়ার কথা জানান চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার আশরাফ উদ্দিন। একই সঙ্গে ৯ সদস্যের একটি কমিটি করার কথাও জানিয়েছেন তিনি।
ঘটনাস্থলে থাকা চট্টগ্রাম সেনানিবাসের ইঞ্জিনিয়ারিং কোর ১-এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মনিরা সুলতানা সাংবাদিকদের বলেন, ‘কন্টেইনার ডিপোটিতে হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড রয়েছে। আগুন এখনও নিয়ন্ত্রণে আনা যায়নি। আমাদের কেমিক্যাল বিশেষজ্ঞরা ফায়ার সার্ভিসের সঙ্গে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে।’
চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার আশরাফ উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, ‘আগুন যাতে আর ছড়িয়ে না পড়ে, সে জন্য সেনাবাহিনীর ১৫০ থেকে ২০০ সদস্য অভিযানে অংশ নেবেন। আগুনের সূত্রপাত কীভাবে হলো জানতে তদন্ত কমিটি করা হবে। কমিটি চার থেকে পাঁচ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হবে।’
Design & Developed By: RTD IT ZONE
Leave a Reply