দেশবরেণ্য রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী সাদী মহম্মদকে রাজধানীর মোহাম্মদপুর জামে মসজিদ কমপ্লেক্স কবরস্থানে মা-বাবার পাশে সমাহিত করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার বাদ জোহর মোহাম্মদপুর জামে মসজিদে জানাজার পর তাজমহল রোডের ওই কবরস্থানে তাকে শায়িত করা হয়।
বুধবার রাতে মোহাম্মদপুরের বাসা থেকে সাদী মহম্মদদের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। তার ভাই শিবলী মহম্মদ বলেন, বুধবার সন্ধ্যা ৭টার পর কোনো এক সময় মোহাম্মদপুরের বাসায় তার ভাইয়ের মৃত্যু হয়। পুলিশের ধারণা, আত্মহননের পথ বেছে নেন এই শিল্পী।
বৃহস্পতিবার বাসার নিচেই সাদির মৃতদেহে শেষ শ্রদ্ধা জানান স্বজনেরা। এরপর বাদ জোহর তাকে দাফন করা হয় বাসার পাশের কবরস্থানে।
জানাজায় উপস্থিত ছিলেন সংগীতশিল্পী খুরশীদ আলম, অভিনেতা খায়রুল আলম সবুজ, গাউসুল আলম শাওন, গীতিকার কবির বকুলসহ সাংস্কৃতিক অঙ্গনের বহু পরিচিত মানুষ। এসেছিলেন রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা, লাইসা আহমেদ লিসা, অণিমা রায়সহ অনেকে।
শহীদ সলিম উল্লাহর ছেলে রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী সাদী মহম্মদ এবং নৃত্যশিল্পী শিবলী মহম্মদ বাংলাদেশে সংস্কৃতি অঙ্গনে খুবই চেনা মুখ।
সলিম উল্লাহ ছিলেন আওয়ামী লীগ নেতা। বঙ্গবন্ধু পরিবারের সঙ্গে তার ছিল সখ্য। একাত্তরের ২৩ মার্চ মোহাম্মদপুরের বাসার ছাদে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উড়িয়েছিলেন তিনি।
২৬ মার্চ মুক্তিযুদ্ধ শুরুর দিনই অবাঙ্গালিরা ওই বাড়িতে চড়াও হয়ে আগুন দেয়। হত্যা করা হয় সলিম উল্লাহসহ তার পরিবারের কয়েকজনকে। পরে স্বাধীন বাংলাদেশে তার নামেই ঢাকার মোহাম্মদপুরের সলিম উল্লাহ রোডের নামকরণ করা হয়।
বিশ্বভারতী থেকে রবীন্দ্র সংগীতে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর করা সাদী মহম্মদ একাধারে শিল্পী, শিক্ষক ও সুরকার ছিলেন। ২০০৭ সালে ‘আমাকে খুঁজে পাবে ভোরের শিশিরে’ অ্যালবামের মাধ্যমে তিনি সুরকার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন।
২০০৯ সালে তার ‘শ্রাবণ আকাশে’ ও ২০১২ সালে তার ‘সার্থক জনম আমার’ অ্যালবাম প্রকাশিত হয়। অসংখ্য সিনেমা ও নাটকে প্লেব্যাক করেছেন সাদি। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি ছিলেন সাংস্কৃতিক সংগঠন রবিরাগের পরিচালক।
২০১২ সালে সাদী মহাম্মদকে আজীবন সম্মাননা দেয় চ্যানেল আই। ২০১৫ সালে বাংলা একাডেমি তাকে রবীন্দ্র পুরস্কার দেয়।
তবে গত কয়েক বছর ধরে প্রকাশ্যে অনুষ্ঠানে খুব একটা দেখা যাচ্ছিল না সাদীকে। গতবছর জুলাই মাসে মারা যান সাদী -শিবলীর মা বেগম জেবুন্নেসা সলিম উল্লাহ। তারপর থেকে সাদী নিজেকে অনেকটাই গুটিয়ে নিয়েছিলেন বলে পরিবারের সদস্যদের ভাষ্য।
নৃত্যশিল্পী শামীম আরা নীপা গণমাধ্যমকে বলেন, “আমরা তো বুঝতে পারিনি কোন অভিমান বুকে চেপে রেখেছিলেন? এমন একটি কাজ করলেন, আমরা স্তব্ধ। শুধু বলব, সবাই উনার জন্য দোয়া করবেন। অনেক ভালো একজন মানুষ ছিলেন। তার এমন মৃত্যু আমাদের স্তব্ধ করে দিয়েছে।”
দেশের প্রখ্যাত রবীন্দ্র সংগীতশিল্পী সাদী মহম্মদের ঝুলন্ত লাশ পাওয়া গেছে তার বাসার গান করার ঘরে।
তার বয়স হয়েছিল ৬৭ বছর। পুলিশের ধারণা, আত্মহননের পথ বেছে নিয়েছেন এই শিল্পী।
সাদীর ভাই শিবলী মহম্মদ বলেছেন, বুধবার সন্ধ্যা ৭টার পর কোনো এক সময় মোহাম্মদপুরের বাসায় তার ভাইয়ের মৃত্যু হয়। তবে তাৎক্ষণিকভাবে বিস্তারিত বলার মত অবস্থায় ছিলেন না তিনি।
মোহাম্মদপুর থানার পরিদর্শক তদন্ত তোফাজ্জল হোসেন বলেন, “বাসায় যে ঘরে বসে সাদী মহম্মদ গান করতেন, সেখানেই তার ঝুলন্ত লাশ পাওয়া গেছে। মনে হচ্ছে, তিনি আত্মহত্যা করেছেন।”
এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, সন্ধ্যা ৭টার পর কোনো এক সময় ওই ঘটনা।
“বাসার লোকজন ডাকাডাকি করে তার সাড়া না পেয়ে দরজা ভেঙে ভেতরে লাশ ঝুলতে দেখে। পরে খবর পেয়ে রাত ৮টার দিকে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে।”
রাত ১০টার দিকে সাদী মহম্মদের বাসায় গিয়ে দেখা যায়, নৃত্যশিল্পী স্নাতা শাহরিন, অভিনেতা শতাব্দী ওয়াদুদ, নাট্যনির্দেশক পান্থ শাহরিয়ারসহ অনেকে সাদি মহম্মদের মৃত্যুর খবর শুনে ছুটে এসেছেন।
বাসায় থাকা স্বজনরা জানান, পুলিশ ক্লিয়ারেন্সের জন্য মরদেহ আসতে একটু দেরি হবে। এরপর পরিবার থেকে বিস্তারিত জানানো হবে।
সাদী মহম্মদের মৃত্যু আমার দৃষ্টিতে নক্ষত্রের পতন: মাসুদ করিম
বিশিষ্ট তথ্যচিত্র নির্মাতা মাসুদ করিম বলেন, রাষ্ট্র শিল্পীদের সম্মান প্রদর্শন করতে গিয়ে শিল্পী খুঁজে পায়না! কী সাংঘাতিক কথা। আবার অপেক্ষাকৃত অবিখ্যাত শিল্পীদের পুরস্কার দেয়ার জন্য এবং তা জায়েজ করার জন্য একটি চক্র উঠেপড়ে লেগেছে।
সাদী মহম্মদের নাম প্রস্তাব করতে হবে কেন? তাঁকে কি খালি চোখে খুঁজে পেতে এতই অসুবিধা হয়েছিল? অসুবিধা না থাকলেও খুঁজে পেতে বাধা ছিল। কালচারাল মাফিয়াদের বাধা ছিল। নতুবা এমন হবে কেন?
এটা সাধারনত তখনই হয় যখন রাজনীতি সাংস্কৃতিক অঙ্গনকে গিলে খায়। সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট (আমি যাকে আঞ্জুমান এ মফিদুল ইসলাম বলে থাকি) একটি ব্যর্থ জোট বা সংগঠন। শিল্পীদের লাশ নিয়ে টানাহেঁচড়া ছাড়া এরা আর কিছুই করতে পারে না। তারা কোনদিন খোঁজ নেয়নি সাদী মহম্মদ কেমন আছেন!
সকল পুরস্কারের স্বচ্ছতা ও সঠিক মানদণ্ড তৈরি না হওয়া পর্যন্ত পুরস্কার প্রদান বন্ধ রাখা উচিত। জুরিবোর্ডে কারা থাকে এসব বিষয় জনসম্মুখে প্রকাশ করা উচিত। নতুবা আমাদের সামনে অবহেলার জন্য কঠিন অভিশাপ অপেক্ষা করছে।
Design & Developed By: RTD IT ZONE
Leave a Reply