সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১০:৩৮ পূর্বাহ্ন

কাকলীর অজানা কথা

অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেটের সময় : বৃহস্পতিবার, ২১ মার্চ, ২০২৪
  • ২৯ বার দর্শন
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে কাকলী

রাজধানীর বনানী-এয়ারপোর্ট রোডে কাকলী বাসস্ট্যান্ডে কাকলী নামের যে রেস্টুরেন্ট রয়েছে সেটা সবাই জানেন। কিন্তু এই ❝ কাকলী ❞ নামের পেছনে যে সাহসিকতার ইতিহাস রয়েছে তা হয়তো অনেকেই জানেন না। মূলত রেস্টুরেন্টটির মালিক শেখ ফেরদৌসী কাজল কাকলীর সাহসের কারণেই স্থানটি পরিচিত হয়ে ওঠে। সবাই তাঁকে কাকলী আপা নামে চেনে।

সময়টা ১৯৮৯ সাল। তখন বঙ্গবন্ধুর জীবনী নিয়ে শেখ রাসেল শিশু কিশোর আয়োজিত এক প্রতিযোগীতা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে প্রথম স্থান অধিকার করেন কাজল (কাকলী)। তখনকার পরিচিত একটি সাপ্তাহিক পত্রিকা হচ্ছে ❝ সুগন্ধা ❞। সুগন্ধা পত্রিকায় কাকলীর একটি লেখা ❝ তোমায় ভুলিনি হে জ্যোতির্ময় পিতা❞  শিরোনামে ছাপা হয়েছিলো। এরপর থেকে কাকলী সুগন্ধায় নিয়মিতই লিখতেন এবং পড়তেন ।

১৯৯০ সালের নভেম্বরের সুগন্ধার একটি সংখ্যাতে বঙ্গবন্ধুর খুনি কর্নেল ফারুকের একটি লেখা ছাপা হয়-শিরোনাম ছিলো ❝আমিই শেখ মুজিবকে হত্যা করেছি, সাহস থাকলে শেখ হাসিনা জিজ্ঞাসা করুক❞ এই লেখাটি দেখে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন কাকলী। সাইকেল চালিয়ে সোজা চলে যান কর্নেল ফারুকের বাড়িতে। কলিং বেল চাপতেই লম্বা, ফর্সা একজন লোক এসে দরজা খুলে দিলো। বুঝতে বাকী রইল না যে তিনিই কর্ণেল ফারুক। ক্ষিপ্ত কাকলী তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন- ❝ তুই আমার বঙ্গবন্ধুকে কেন মারলি ? ❞ 

কর্ণেল ফারুক কোনো জবাব দিলোনা, চুপ ছিলো। তারপর আবার তাকে জিজ্ঞেস করলেন, ❝ তুই আমার শেখ রাসেলকে কেন মারলি ? তোকে আমি ফাঁসির কাস্টে ঝোলাবো, তুই তাকিয়ে তাকিয়ে দেখবি। ❞ কর্ণেল ফারুক জবাব দিলো, আপনি এখনো অনেক ছোট, বড় হলে বুঝবেন আমি কেন শেখ মুজিবকে মেরেছি!’ চিৎকার চেচামেচি শুনে এরই মধ্যে কর্ণেল ফারুকের মা ও আসলো এবং জিজ্ঞেস করলো, ‘ও কে ? ‘তখন বঙ্গবন্ধুর খুনী কর্ণেল ফারুক বললেন, ‘ও বনানী স-মিল ও কাকলী মার্কেটের মালিক নুরু শেখের মেয়ে।’ এরপর কাকলী কর্ণেল ফারুকের মাকে বললেন, ❝ এই ছেলেকে আপনি পেটে ধরেছেন ? ❞ তিনিও কিছু না বলে মুচকি হাসি দিলেন। খুনী কর্ণেল ফারুক তখন বললেন, ‘আপনি সাপ্তাহিক ‘সুগন্ধা’ ম্যাগাজিনে লিখেন, আমি আপনার প্রতিটা লেখা পড়ি। আপনি খুব ভালো লিখেন।’

এরপর সেখান থেকে বের হয়ে কাকলী দেখেন তাঁর সাইকেল উধাও। এরপর আবার চেচামেচি শুরু করলে কর্ণেল ফারুকের লোকজন সাইকেল বের করে দেয়। কাকলী সেখান থেকে সোজা বাসায় চলে যান! বাসায় এসেই কাকলীর তাঁর বাবার সাথে দেখা। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, ❝ মা মনি তুমি কোথায় গিয়েছিলে ? ❞ 

সব শুনে কাকলীর বাবা বললেন, ❝ যা ই করেছো মা ভালো করেছো, কিন্তু আমার তো সর্বনাশ হয়ে গেলো। ❞ কাকলী তখনও তাঁর বাবার এ কথার অর্থ বুঝতে পারেননি, কিন্তু তা বুঝতে বেশি দেরিও হয়নি। কারণ, তাঁর এক সপ্তাহের মধ্যেই কাকলীদের বনানী স-মিলে আগুন লাগিয়ে দেয়া হলো, ৬৫ টি দোকানসহ কাকলী মার্কেট ভেঙে গুড়িয়ে দেয়া হলো, এছাড়াও নানা ধরনের নির্মম নির্যাতনের স্বীকার হয়েছিলো কাকলীর পরিবার।

সময়টা ২০০৯ সাল। বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলা নানা উত্থান পতনের পর সর্বশেষ কর্নেল ফারুকসহ আরো কয়েকজনের মৃত্যুদণ্ডের রায় দেয়া হয়। রায় দেয়ার আগে কাকলী ভাবছিলেন, তিনি যদি কোর্টরুমে কোনভাবে থাকতে পারতেন। তাহলে সেদিনের সেই মুচকি হাসির জবাবটা তিনি চোখের চাহনিতে ই কর্ণেল ফারুককে দিতে পারতেন!

অন্তত রায় পড়ার সময় তাঁকে থাকতেই হবে যে কোন উপায়ে। অবশেষে তিনি থাকতে পেরেছিলেন কোর্টের তিন তলায়, যেখানে রায় পড়ে শুনানো হয়েছিল! কোর্টে তিনি কর্ণেল ফারুককে দেখলেন আসামীর কাঠগড়ায়। কর্ণেল ফারুক কাকলীকে দেখে সেদিনও নাকি একটি মুচকি হাসি দিয়েছিলেন। 

১৯৯০ সালের দিকে কাকলী মার্কেটের পাশাপাশি কাকলী রেস্টুরেন্টটিও খুব জনপ্রিয় ছিল। কর্নেল ফারুকের নির্দেশে ঐ মার্কেট ভাঙা ঘটনাটি ব্যাপক আলোচিত হয়েছিল! আর এর মধ্যেই ওই এলাকার নাম হয়ে উঠেছিল কাকলী আপার ‘কাকলী’!

সূত্র: ইন্টারনেট

এই পোস্টটি আপনার সামাজিক মিডিয়াতে শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও খবর

Address

Registered Office: 44/1 North Dhanmondi (5th Floor) Kalabagan, Dhaka- 1205, Bangladesh Email: kalabaganbarta@gmail.com / admin@kalabaganbarta.com Telephone: +88-02-58154100 Editorial Office: Karim Tower 44/7-A&B, West Panthapath, Kalabagan, Dhaka-1205

Correspondences

USA: Mainul Haq (Atlanta) Kolkata: Sunirmal Chakraborty Mobile: +91-8017854521 Ashim Kumar Ghosh Address: 3D K.P Roy Lane, Tollygunge Phari Kolkata- 700 033, WB, India Mobile: +91-9874891187                                                                                                           S. M. Ashikur Rahman (Technical Adviser)
Author: Masud Karim © All rights reserved 2020. Kalabaganbarta

Design & Developed By: RTD IT ZONE